শরীরের জন্য পটাশিয়াম-সোডিয়াম অত্যন্ত জরুরি খনিজ, যা নার্ভের বিভিন্ন কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ৷ একই সঙ্গে মাংস পেশির মধ্যে একটা সামঞ্জস্য বজায় রাখে এবং শরীরে তরল পদার্থের সমতাও বজায় রাখে৷ কখনও এই ভারসাম্য নষ্ট হলেই বিগড়ে যেতে পারে আপনার শরীর। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, শরীরে পটাশিয়াম-সোডিয়ামের ঘাটতি হলে বোঝার উপায় কি !
এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম তাই বাড়ির বাইরে বের হলেই ঘামে ভিজছে জামা। ঘামের সাথে বের হয়ে যাচ্ছে প্রচুর লবণও সেই সাথে কমছে এনার্জিও। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে , দৈনিক পর্যাপ্ত ঘুম হলেও ক্লান্তি পিছু ছাড়ছে না। সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপও রয়েছে। এছাড়াও ভুলে যাওয়ার বাতিক, আচ্ছন্নভাব, মাথা ঝিমঝিম থেকে খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা কিন্তু পটাশিয়াম-সোডিয়ামের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণও হতে পারে। কনসালট্যান্ট পালমোনোলজিস্ট ডা. অনির্বাণ দেবের কথায়, ‘‘পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম মিলেই তৈরি হয় মানবদেহের ইলেকট্রোলাইটস পরিবার। স্নায়ু, মাংসপেশি ও হৃৎপিণ্ডের পরিচালনা করাই এদের কাজ।
মানব দেহে এসব উপাদানের পরিমাণ কোন কারণে কম-বেশি হলেই সৃষ্টি হয় ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা। এই ক্ষেত্রে সোডিয়াম বা পটাশিয়ামের যে কোনও একটি বা একসঙ্গে দু’টির অসামঞ্জস্যতা হলেই ঘটতে পারে জীবনহানির মতো ঘটনা।
ডা. দেবের মতে, ‘‘ডায়রিয়া বা অত্যধিক বমি হলে রক্তে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মাত্রা কমতে পারে। অত্যধিক ঘামের ফলে শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে গেলে লবণের মাত্রা কমে যেতে পারে। ডায়াবিটিস বা কিডনির অসুখ থেকে বেশি বা কম মাত্রায় মূত্র হলে কিংবা খাদ্যে লবণের মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বা কম হলেও ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কম বা হাইপোনেট্রিমিয়া হলে শরীরে তরলের ভারসাম্য নষ্ট হয়। কিন্ত কি পরিমাণে এবং কতটা তাড়াতাড়ি এই মাত্রা কমছে, সেই অনুযায়ী এর চিকিৎসা করাতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক
• মাইল্ড হাইপোনেট্রিমিয়া হলে হজমশক্তির সমস্যার সাথে সাথে শুরু হয় মাথা ধরা, বমি বমি ভাব, ঝিমিয়ে পড়া বা কোনও কাজ করার উৎসাহ হারিয়ে যাওয়া।
• আবার ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে মডারেট হাইপোনেট্রিমিয়ায়। এর সঙ্গে পেশিতে টান, পেশির অসাড়তা, অতিরিক্ত দুর্বলতা, এমনকি খিঁচুনিও হতে পারে। তন্দ্রাচ্ছন্নতা, চেতনা কমে যাওয়া, উল্টোপাল্টা আচরণের মতো উপসর্গ তীব্র হাইপোনেট্রিমিয়ার লক্ষণ।
• রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়লেও বিপদ। আলস্য ও দুর্বলতার মতো লক্ষণ দেখা যায় সোডিয়াম বেড়ে গেলে বা হাইপারনেট্রিমিয়ায়। অতিরিক্ত মাত্রা বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যে। ব্রেন সেল কাজ করে না। ভুলে যাওয়ার সমস্যা, ভাবাচ্ছন্নতা, এমনকি খিঁচুনিও হয়। অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হলে কোমাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
• পটাশিয়ামের অভাব বা হাইপোক্যালিমিয়ায় হজমে সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। পর্যাপ্ত ঘুম ও খাওয়ার পরেও ক্লান্তি অনুভূত হলে পটাশিয়ামের ঘাটতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
• দীর্ঘদিন ধরে পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকলে শরীরে ইনসুলিন কম উৎপাদিত হয় এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে। এতে মাংসপেশির দুর্বলতা এবং মাংসপেশিতে ঘন ঘন টান লাগার মতো সমস্যাও তৈরি হয়। ডা. দেব জানালেন, ‘‘যদি রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা ২.৫ মিলিমোলের নীচে চলে যায় এবং ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হয়, জীবনহানিও হতে পারে। অন্য দিকে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়লে বা হাইপারক্যালিমিয়ার কারণে হৃদযন্ত্রের সমস্যা থেকে জীবনহানির আশঙ্কাও থাকে।
সাধারণত সোডিয়াম, পটাশিয়ামের ভারসাম্যের অভাব যে কোনও বয়সেই হতে পারে। তবে শিশু, বয়স্ক ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের এর কোপে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।