এইমাত্র
  • বকশীগঞ্জের এক স্কুলেরই ৬৬ ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা
  • নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে নিরাপত্তা জোরদার
  • যমুনায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর, নৌ চলাচল ব্যাহত
  • সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে এভারকেয়ার ছাড়লেন হাদি
  • আগামীকাল সাময়িক বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল
  • হাদি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় গুজবে সয়লাব ফেসবুক : ফ্যাক্টওয়াচ
  • কওমী মাদ্রাসার বোর্ড পরীক্ষার সময়সূচি এগিয়ে আনা হয়েছে
  • কলম্বিয়ায় স্কুলবাস খাদে পড়ে নিহত ১৭
  • হাদির ওপর হামলায় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না: সিইসি
  • হাদিকে গুলি করা অভিযুক্ত মাসুদের ভারতে গিয়ে সেলফি
  • আজ সোমবার, ১ পৌষ, ১৪৩২ | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ভেঙে পড়লো ২০০ বছরের ‘হালা বট’ গাছটি

    কাওছার মাহমুদ, লালমনিরহাট প্রতিনিধি প্রকাশ: ২ জুন ২০২৪, ০৫:৪৮ পিএম
    কাওছার মাহমুদ, লালমনিরহাট প্রতিনিধি প্রকাশ: ২ জুন ২০২৪, ০৫:৪৮ পিএম

    ভেঙে পড়লো ২০০ বছরের ‘হালা বট’ গাছটি

    কাওছার মাহমুদ, লালমনিরহাট প্রতিনিধি প্রকাশ: ২ জুন ২০২৪, ০৫:৪৮ পিএম

    লালমনিরহাটে দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘হালা বটের তল’ এলাকার সেই বিখ্যাত ‘হালা বট’ গাছটি ঝড়ে ভেঙে পড়েছে।

    শনিবার (১ জুন) দিবাগত রাতে বিকট শব্দে হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে গাছটি। এই বটগাছের নামেই এখানকার নাম করন করা হয় হালাবটের তল।

    স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাতে প্রবল বেগে ঝড় আসে। ওই ঝড়ে গাছটি হুট করে ভেঙে পড়ে। সেসময় ঝড়ের কবল থেকে বাঁচতে গাছের নীচে অবস্থিত মিনারে আশ্রয় নেয়া ৩ জন ব্যক্তি গাছের নীচে চাপা পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে তাদের দুইজন লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতরা হলেন মোঃ আতিক, মোঃ উজ্জল ও মোঃ মেহেদী। তারা ওই এলাকার বাসিন্দা।

    হালাবটের তলের খাদেম আকবর আলী বলেন, ‘ আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে আমি এই গাছের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। আমার অনেক কান্না পাচ্ছে॥’

    স্থানীয় বাসিন্দা মো. আনিছুল ইসলাম বলেন, রাতে কিছুক্ষণ ঝড় হাওয়ার পরে মড়-মড় বিকট শব্দে হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে এই বটগাছটি। এখানে অনেক দর্শনার্থী আসতেন। গাছটিকে ঘিরে আমাদের অনেক স্মৃতি রয়েছে। এই গাছের ছায়ায় অনেকে বিশ্রাম নিতো। এই গাছের কথা আর কেউ মনে রাখবেনা। ’

    জনশ্রুতি আছে, বটগাছটির বয়স নূন্যতম ২০০ বছর। গাছের নিচের ঈদের মাঠটি আরও পুরানো। ইংরেজ আমলে (১৯৩৫-৪০ খ্রিষ্টাব্দে) স্থানীয় এক খতিব ফকির জৌনপুরের জনৈক পীর সাহেবকে এনেছিলেন এই বটগাছের নিচে ওয়াজ করার জন্য। পীর সাহেব এ গাছের নিচে বসে ওয়াজও করেছিলেন। ওয়াজ মাহফিলে আগত লোকজনদের ওজু করার জন্য মাঠের পাশে একটি কুয়া খনন করাও হয়েছিল। কিন্তু কুয়ায় পানির অপর্যাপ্ততার কারণে ওজু করার সমস্যা সৃষ্টি হয়। এতে পীর সাহেব এক বদনা পানি নিয়ে সেটি কুয়ায় ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দেন। পরে আর ওজুর পানির অভাব হয়নি।

    আবার ওয়াজ শেষে খিচুড়ি বিতরণের সময় তাও কম হওয়ার আশংকা দেখা দিলে পীর সাহেব খিচুড়ি হাড়ির মুখে ঢাকনা দেন। পরে তার নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকনা একটু সরিয়ে খিচুড়ি বিতরণ শুরু করা হয়। ঐ হাড়ির খিচুড়ি আগত লোকজনের মাঝে বিতরণ শেষে পার্শ্ববর্তী কয়েক গ্রামের লোকজন যারা ওয়াজ শুনতে আসেনি তাদের জন্যও পাঠিয়ে দেয়া সম্ভব হয়। পীর সাহেব ওয়াজ করে চলে যান, কিন্তু ওয়াজ করার মাঠটি এলাকার লোকজনের কাছে পবিত্র স্থান বলে বিবেচিত হতে থাকে, সাথে সাথে পীর সাহেবকে ছায়াদানকারী বট গাছটির প্রতিও বিশেষ সম্মান দেখানো শুরু হয়। দু’একজন এখানে এসে মানত করে সুফল পাওয়ার পর পাকিস্তান আমলেই মানতের প্রচলন শুরু হয়। আর তা ব্যাপকতা লাভ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর। এখনও প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক লোকজনকে মানতের উদ্দেশ্যে এখানে আসতে দেখা যায়।

    প্রতি শুক্রবার যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীরা ভীড় জমায় এই হালা বটের গাছটি দেখার জন্য। অনেকে মনের বাসনা পূরণ করতেও মানত করতে আসেন এখানে। গাছটি ভেঙে পড়ায় স্থানীয় অনেক মানুষ কেঁদেছেন, দুঃখপ্রকাশ করেছেন লালমনিরহাট জেলার জনপ্রতিনিধিরা।

    ভেঙে পড়া বটগাছের পাশে দাঁড়ানো একাধিক প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা জন্মের পর থেকে এই গাছটিকে এরকমই দেখে আসছে। লালমনিরহাটের পুরাতন ঐতিহ্যের গাছগুলোর মধ্যে এই বটগাছ অন্যতম। হঠাৎ ঝড়ে ভেঙে পড়ায় লালমনিরহাটবাসী একটি ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষ হারালো।

    সদ্য নির্বাচিত লালমনিরহাট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ কামরুজ্জামান সুজন বলেন, গাছটি ভেঙে পড়ার খবরটি পেয়ে আমি সাথে সাথে ঘটনাস্থলে যাই। গাছটি যেভাবে ভেঙে পড়েছে, মনে হয় না আমরা ওই গাছটিকে রক্ষা করেতে পারবো। কিন্তু তবুও আমি এলাকাবাসীদের বলেছি, নিজেও চেষ্টা করছি যদি গাছটিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।’

    আরইউ

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…