চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি মৌসুমের আমের দাম গত ৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছিল। আমের ফলনে বিপর্যয় হলেও চাষিরা ‘নায্য’ দাম পেয়ে খুশিই ছিলেন।। কিন্তু কোটা বিরোধী আন্দোলনের ফলে মৌসুমের শেষের দিকে চাষিরা আম বিক্রয়ে বড় ধরনের ধাক্কা খেলেন। অন্ততপক্ষে শত কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের।
ভোক্তার কাছে চাহিদা থাকার পরও পরিবহন বন্ধ থাকায় আম বিক্রি করতে পারেননি তারা। ফলে বাগানেই আম পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দামও প্রতি মণে ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত কম পেয়েছেন তারা।
আম চাষিরা জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আবহাওয়ার কারণে এবার আমের ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। আবার নতুন সৃজন হওয়া বাগানগুলোয় আমের ফলন ভালো হলেও পুরাতন বাগানগুলোর বড় আম গাছে আমই ধরেনি। অথচ এ জেলার প্রায় ৬০ ভাগ আম বাগানই পুরনো। এ অবস্থায় ফলন কম হলেও চাষিরা বেশি দামে আম বিক্রি করতে পারছিলেন। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনে আম চাষিদের সে সম্ভাবনাটুকুও হারিয়ে যায়। তাই শুরুর দিকে চাষিরা বেশি দামে আম বিক্রি করতে পারলেও শেষের দিকে এসে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে।
দেশের বৃহত্তম আম বাজার কানসাট। এই বাজারে চলতি মৌসুমে দৈনিক ২০-২৫ কোটি টাকা করে আমের বেচা-কেনা হয়েছে। কিন্তু কোটা আন্দোলনের ফলে আম পরিবহনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেচাকেনা কমে যায়। এই বাজারের আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন- ‘ সাধারণত চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাসহ দূরবর্তী জেলায় আম পৌঁছানো হয় ট্রাক, পিকআপসহ অন্যান্য বাহনে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় যানবাহনের ক্ষতির আশঙ্কায় মালিকরা ট্রাক-পিকআপের ভাড়া দেননি। ফলে প্রতিমণ আমের দাম ৫০০-৭০০ টাকারও বেশি কমে যায়। একই সঙ্গে কানসাট আম বাজারেও বেচাকেনা কমে যায়।’
বন্ধ ছিল কুরিয়ার সার্ভিস: কোটা বিরোধী আন্দোলনে কয়েক দিনের জন্য কিছু কুরিয়ার সার্ভিসের সেবা বন্ধ হয়ে যায়। গাছ থেকে নামানো আম অনেক সময় মতো ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে না পারার কারণে পচে নষ্ট হয়ে যায়।
আমের মৌসুমে কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের এজেন্সি নেন মোহাম্মদ সেফার আলী। তিনি জানান, ‘ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার কারণে প্রায় সব কুরিয়ারের সার্ভার বন্ধ ছিল। যার কারণে কেউ বুকিং দিতে পারছিল না। ফলে ৪ দিনের জন্য কুরিয়ারের সার্ভিসের সেবা বন্ধ হয়ে যায়।’
অনলাইনের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত: চলতি মৌসুমে ফলন বিপর্যয় ও দাম বেশি হওয়ায় এবার আমের ব্যবসায় খুব একটা লাভবান হতে পারেনি অনলাইন ব্যসায়ীরা। আকস্মিকভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোক্তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে সপ্তাহ ধরে আমের ব্যবসা করতে পারেননি।
আম বাণিজ্যে শত কোটি টাকার ক্ষতি: আন্দোলন-সংঘাত আর কারফিউ জারির পর আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের অন্তত ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি অ্যাসোসিয়েশন। আম পচে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে আমের দামে দরপতন হওয়ায় তারা এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানান। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সরকারি সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন মনে করে এই সংগঠনটি।
কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় তিনশ ট্রাকে সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক আম যায় দেশের বিভিন্ন বাজারে। এই আমের মূল্য গড়ে ২৫ কোটি টাকা। আন্দোলনের দশদিনে ২৫০ কোটি টাকার আম বেচাকেনার কথা ছিল। কিন্তু আম পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দাম কমে যাওয়ায় অঙ্ক গিয়ে দাঁড়ায় ১৫০ কোটির ঘরে। ফলে ওই ১০ দিনে চাষি ও ব্যবসায়ীদের ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি বিপণনের কর্মকর্তা মোকাব্বের আলম নাঈম বলেন, ছাত্র আন্দোলনের ফলে আম বেচাকেনা কম হয়েছে। সব কিছু শেষ হয়ে গেলে চাষিরা আবারও ব্যবসা করতে পারবেন এবং তারা তাদের নায্য দাম পাবেন।
এইচএ