কথায় আছে, চিন্তাবিহীন কার্য নাকি ডেকে আনে বিপদ। কিন্তু এই চিন্তা যদি হয় বাড়াবাড়ি ধরনের, অর্থাৎ প্রয়োজন ছাড়াই চিন্তা, তাহলে? এই ‘অতিরিক্ত চিন্তা’য় অনেকে মানসিক সমস্যায়ও পড়েন। ‘বেশি চিন্তা’ মন আর শরীরের মধ্যে তৈরি করে ভারসাম্যহীনতা। দুশ্চিন্তায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে থাকলে জীবনের চলার গতিও মন্থর হয়ে পড়ে। তাই যত দ্রুত সম্ভব স্ট্রেস কাটিয়ে ওঠা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অহেতুক দুশ্চিন্তা অনেকটা চক্রের মতো। যত দূর করতে চাইবেন, তত আপনাকে জেঁকে ধরবে। কথায় আছে, ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’ মস্তিষ্ক যত অলস বসে থাকে, তত মাথায় জমা হয় অহেতুক চিন্তা। টেনশন বা দুশ্চিন্তাই রোগকে আমন্ত্রণ জানানোর দরজা হিসেবে কাজ করে। চিকিৎসকরা বলছেন, এর হাত ধরেই শরীরে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘমেয়াদী অসুখগুলো। তাই অসুখের হাত থেকে বাঁচতে হলে টেনশন থেকে মুক্ত থাকতেই হবে।
চলুন দুশ্চিন্তা দূর করার কিছু সহজ উপায় জেনে নিই
দীর্ঘ শ্বাস-প্রশ্বাস
প্রতিদিন ধ্যান বা মেডিটেশনের অভ্যাস আপনাকে অনেকটাই টেনশনমুক্ত রাখার চেষ্টা করবে। এরজন্য চোখ বন্ধ করে কিছু সময় একান্ত মনে কোনো কিছু না ভেবে বসে থাকা আর দীর্ঘ শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার অভ্যাস করুন। এক থেকে আট পর্যন্ত গুনুন এবং সেই সঙ্গে নিঃশ্বাস নিন। কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস ধরে রাখুন, অতঃপর ছেড়ে দিন। এই অনুশীলনের মাধ্যমে আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং ধকল কমবে।
বিশ্রাম ও ঘুম
দ্রুত টেনশন বা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে বিশ্রাম বা ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। দীর্ঘ সময় গভীর ঘুমের পর মানসিক চাপ অনেকটা কমে যায়। একইসঙ্গে নিজেকে লাগে আরও সতেজ ও প্রাণবন্ত।
স্ট্রেচ করুন ও সঠিকভাবে বসুন
কর্মক্ষেত্রে কাজের ফাঁকে ফাঁকে হাত-পা স্ট্রেচ করুন এবং সঠিকভাবে বসার অভ্যাস রপ্ত করুন। এতে করে আপনার শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার পেশী রিল্যাক্সড হবে। ডানে-বামে ধীরে ধীরে মাথা ঘোরান এবং পায়ের বুড়ো আঙুল স্পর্শ করার চেষ্টা করুন।
চা পান করুন
ধকল কমানোর জন্য এক কাপ চায়ের কোনো তুলনা হয় না। সবুজ চায়ে ‘থিয়ানিন’ নামক অ্যামিনো এসিড আছে যা আপনার ক্লান্তি কমিয়ে দেয় অনেকখানি। এতে করে আপনি শান্তিতে ঘুমাতে এবং কাজ করতে পারবেন। আপনি চাইলে গরম চা পান না করে ‘আইস টি’ উপভোগ করতে পারেন।
সুগন্ধী মোমবাতি জ্বালান
অ্যারোমাথেরাপি ধকল কমাতে অনেকাংশে সাহায্য করে থাকে। কাজের ফাঁকে কিংবা বিশ্রামের সময় সুগন্ধী মোমবাতি জ্বালাতে পারেন। স্ট্রেসের কারণে যদি আপনার অতিরিক্ত খাবার প্রবণতা থাকে তবে বাম পাশের নাক চেপে ধরে মোমবাতির ঘ্রাণ নিন। এতে করে, দুশ্চিন্তা এবং অতিরিক্ত ক্ষুধা দুই-ই দূর হবে।
ঘুমানোর আগে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস দূরে রাখুন
পর্যাপ্ত না ঘুমনোর কারণে আপনি বিপর্যস্ত হতে পারেন। অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। তার আগে অবশ্যই মোবাইল ফোন এবং টেলিভিশন বন্ধ রাখুন। শান্তিতে থাকার জন্যে ঘুম খুব জরুরি।
ঘুমের নিজস্ব পদ্ধতি তৈরি করুন
ঘুমের আগে একটি রুটিন তৈরি করে নিতে পারেন। যেমন- কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়িতে ফেরার পর পরই গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিন। একটি বই পড়তে পড়তে কিংবা হালকা গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন।
মাথার কাছে সুগন্ধী হ্যান্ড-লোশন রাখতে পারেন যা আপনাকে ঘুমের জন্যে পুরোপুরি তৈরি করে দেবে। ঘুমের সময় চোখে আই-মাস্ক পরিধান করতে পারেন। এটি আলো থেকে চোখকে নিরাপদ রাখবে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘুমাতে সাহায্য করবে।
ডায়েটেশিয়ানরা বলছেন, কিছু খাবার রয়েছে যা দ্রুত টেনশনের চাপ কমাতে পারে। স্বাস্থ্যকর মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও পটাশিয়াম জাতীয় খাবার ডায়েটে রাখুন। এছাড়া টক দই, ডার্ক চকলেট, হলুদ, রসুন, বাদাম, ওট, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, গ্রিন টি ও বেরি জাতীয় খাবারগুলো ম্যাজিকের মতো দুশ্চিন্তা কমাতে পারে।
এবি