এইমাত্র
  • এবার পরিচালক পদও হারাচ্ছেন পাপন
  • সাফ ফাইনাল: শিরোপা ধরে রাখার মিশনেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ
  • বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান হবে বাংলাদেশ
  • তরুণীদের ব্ল্যাকমেইল করে হাতানো টাকা গার্লফ্রেন্ডের পিছে খরচ করতো অনিক
  • বিশেষ অভিযান জোরদারের নির্দেশ আইজিপির
  • ‘জন্মের সময় হাসিনার মুখে মধু নয়, করলার রস দেওয়া হয়েছিল’
  • ডেঙ্গুতে আরো ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১৯৭
  • চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগে দুঃসংবাদ পেল বাংলাদেশ
  • কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার
  • শাহজালালে ৬০টি স্বর্ণের বার জব্দ
  • আজ সোমবার, ১৩ কার্তিক, ১৪৩১ | ২৮ অক্টোবর, ২০২৪
    শিক্ষাঙ্গন

    আমের আটিঁর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণে গোলজা‌রের সফলতা

    মো. রিয়াজ হোসাইন, বাকৃ‌বি প্রতি‌নি‌ধি প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৭ পিএম
    মো. রিয়াজ হোসাইন, বাকৃ‌বি প্রতি‌নি‌ধি প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৭ পিএম

    আমের আটিঁর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণে গোলজা‌রের সফলতা

    মো. রিয়াজ হোসাইন, বাকৃ‌বি প্রতি‌নি‌ধি প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৭ পিএম

    পরিত্যক্ত আমের বীজ বা আমের আটিঁর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণে প্রাথমিক সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। আমের আটিঁর গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বাকৃবির মাইক্রোবায়োজলি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন ও তাঁর গবেষক দল এ সাফল্য পেয়েছেন। আমের আটিঁর বীজের নির্যাস থেকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান মানবদেহ ও পশু-পাখিতে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই গবেষক।

    সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষক দলের প্রধান ড. গোলজার এসব তথ্য জানান।

    গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে গৃহীত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে গবেষণাটি শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। গবেষক দলে আরও ছিলেন মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহা, ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শারমিন আক্তার, কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. বিপ্লব কুমার সাহা, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী রাহীলা জান্নাত সাদিয়া, চন্দন সিকদার, আনন্দ মজুমদার, মোসলেমা জাহান মৌ এবং নাজমুল হাসান সিয়াম।

    বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রাফী উল্লাহ ফুয়াদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক তানিউল করিম জীমের সঞ্চালনায় সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মাইক্রোবায়োজলি এন্ড হাইজিন বিভাগের প্রধান ড. কে. এইচ. এম নাজমুল হুসাইন নাজির, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহা, ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শারমিন আক্তার, প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ ।

    আমের আটিঁ থেকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান তৈরির বিষয়ে ড. গোলজার বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে আম উৎপন্ন হয় এবং এর বীজ সাধারণত পরিত্যক্ত হয়, তাই আমরা দেশি জাতের আমের বীজের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আমের পরিত্যক্ত বীজ থেকে একটি নির্যাস তৈরি করি, যা কিছু ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ইঁদুরে সেই নির্যাস পরীক্ষার সময় দেখা গেছে যে, এই নির্যাসের বিষাক্ততা নেই বললেই চলে এবং উচ্চ মাত্রায় এই নির্যাস প্রয়োগে ইঁদুরগুলির লিভার ও কিডনিতে সামান্য পরিবর্তন দেখা গেলেও, উল্লেখযোগ্য কোনো খারাপ লক্ষণ দেখা যায়নি।

    তিনি আরও বলেন, স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, আমের বীজের নির্যাস ব্যাকটেরিয়ার কোষের গঠন ধ্বংস করতে সক্ষম। এটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা তৈরী বায়োফিল্মও ধ্বংস করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত ইঁদুরের উপর এই নির্যাস প্রয়োগে ওই সংক্রমিত ইঁদুরগুলো দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে।

    আমের আটিঁর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান প্রয়োগের ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে গবেষক জানান, বর্তমানে আমরা পোল্ট্রিতে এই নির্যাস প্রয়োগের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছি। যদি সফল হই, এটি বাংলাদেশের পোল্ট্রি সেক্টর ও স্বাস্থ্যখাতে দৃশ্যমান অবদান রাখবে এবং অর্থনৈতিক সাশ্রয় সাধিত হবে, যা জাতীয় উন্নয়নে সহায়ক হবে।

    অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স নিয়ে প্রধান গবেষক ড. গোলজার জানান, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সারাবিশ্বে একটি বৈশ্বিক হুমকি। মানুষের পাশাপাশি প্রাণীর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকই প্রধান ভরসা। তবে, অনেক ব্যাকটেরিয়া বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত সিন্থেটিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্টের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( ডব্লিওউএইচও) এএমআরকে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভেষজ ঔষধগুলি সিন্থেটিক ওষুধের বিকল্প হিসেবে নিরাপদ, সুবিধাজনক এবং সাশ্রয়ী। ডব্লিওউএইচও ভেষজ পরিত্যক্ত পদার্থ নিয়ে গবেষণার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

    তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আম উৎপাদনে বিশ্বে অন্যতম। আমে বিভিন্ন ধরনের ম্যাক্রো ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থাকে। আমের খোসা ও বীজের কার্নেল ঔষধি গুণাগুণসম্পন্ন হলেও সাধারণত এই অংশগুলি পরিত্যক্ত হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়। ইতোপূর্বে আমের খোসা ও পাতার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যকারিতা নিয়ে কিছু গবেষণা হয়েছে, তবে আমের বীজের (আটিঁ) কার্যকারিতা নিয়ে বাংলাদেশে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা পাওয়া যায়নি। যদিও কয়েকটি দেশে এ বিষয় নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা হয়েছে।

    ড. সুকুমার সাহা বলেন, যেসব ব্যাকটেরিয়া গ্রাম নেগেটিভ সেসব ব্যাকটেরিয়ার উপর এর কার্যকরীতা তেমন নেই। ত‌বে এই ক্রুড নির্যাসটির এর মধ্যে এমন কোনো কিছু আছে যা কিনা গ্রাম প‌জি‌টিভ ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করেছে। এখন আমাদের অধ্যাপক গোলজারের টিমের যেটি মেইন কাজ, তারা এই সক্রিয় উপাদানটি বের করার চেষ্টা করবে। যে সক্রিয় উপাদানটি ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করেছে, সেটি যদি বের করা যায়, তবে আমি বলতে পারি যে বর্তমানে এটির যে বিষাক্ততা আছে সেটির ৯৯.৯৯ ভাগ চলে যাবে।

    গবেষণার বিষয়ে মাইক্রোবায়োজলি এন্ড হাইজিন বিভাগের প্রধান ড. কে. এইচ. এম নাজমুল হুসাইন নাজির বলেন, ড. গোলাজার হোসেনের গবেষণাটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণা। শুধু দেশের জন্যই নয়, এটি সারা বিশ্বের জন্যও অত্যন্ত জরুরি একটি ইস্যু বলে আমি মনে করি। গবেষণাটির মাধ্যমে আমরা যদি ইতিবাচক কোনো ফলাফল পাই, যা এখন পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি অনেকটাই আশাব্যঞ্জক। যদিও গবেষণাটি ছোট আকারের বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এর প্রভাব অনেক বড়।

    এইচএ

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…