এইমাত্র
  • সারা দেশে মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে আইনি নোটিশ
  • মোংলায় আগুনে পুড়ল দিনমজুরের স্বপ্ন
  • শহিদুল আলমকে উপদেষ্টা করার আহ্বান শফিক রেহমানের
  • সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি মেহেদীর জামিন স্থগিত
  • ভুটানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন আমীর খসরু
  • জামিন পেয়েছেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
  • দায়িত্ব নিল নতুন আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার
  • ড. ইউনূসের ৬ মামলা বাতিল, বাদী আদালতের সময় নষ্ট করেছেন: হাইকোর্ট
  • সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের গাড়িতে হামলা, মামলা করতে গিয়ে গ্রেফতার
  • বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ চালু করলো পাকিস্তান
  • আজ বৃহস্পতিবার, ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪
    শিল্প ও সাহিত্য

    'ছড়ার জাদুকর' খ্যাত সুকুমার রায়ের আজ জন্মদিন

    শিল্প ও সাহিত্য ডেস্ক প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম
    শিল্প ও সাহিত্য ডেস্ক প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম

    'ছড়ার জাদুকর' খ্যাত সুকুমার রায়ের আজ জন্মদিন

    শিল্প ও সাহিত্য ডেস্ক প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম

    বাঙালির শৈশব মানেই কিন্তু সুকুমার রায়। তাঁর ছোঁয়ায় ছোটরা পেয়েছে অচেনা এক জগতের সন্ধান। যেখানে রয়েছে নির্মল আনন্দ, অফুরান মজার স্বাদ। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে ‘ননসেন্স ছড়া’র প্রবর্তক। তিনি একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সম্পাদক। তার পুত্র খ্যাতিমান ভারতীয় চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়।

    তিনি বাংলা সাহিত্যের বিস্ময়। তিনি যতটা সাহিত্যমনস্ক, ততটাই সমাজ ও বিজ্ঞানমনস্ক। তিনি বিজ্ঞানের কৃতী ছাত্র ছিলেন। সাহিত্য জগতে বাবার পথ অনুসরণ করেছিলেন সুকুমার। তাঁর প্রতিটি বই আজও পাঠকমহলে সমাদৃত। তবে একটি বইও তিনি নিজে দেখে যেতে পারেননি। প্রথম বই 'আবোল তাবোল' প্রকাশের আগেই চলে যান না ফেরার দেশে। আজ ৩০ অক্টোবর তাঁর জন্মদিন।

    সুকুমার রায় ১৮৮৭ সালের এই দিনে কলকাতার এক দক্ষিণ রাঢ়ী কায়স্থ বংশীয় ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর পুত্র। তার মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে। তার আদিনিবাস বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা) কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে। মসূয়াতে বসবাসের আগে তার পূর্বপুরুষের আদিনিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত চাকদহে। সুবিনয় রায় ও সুবিমল রায় তার দুই ভাই। এ ছাড়াও তার তিন বোন ছিল, তারা হলেন সুখলতা, পুণ্যলতা ও শান্তিলতা।

    সুকুমার রায় জন্মেছিলেন বাঙালি নবজাগরণের স্বর্ণযুগে। তার পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যানুরাগী, যা তার মধ্যকার সাহিত্যিক প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। পিতা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন শিশুতোষ গল্প ও জনপ্রিয়-বিজ্ঞান লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদ। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন।

    এ ছাড়াও রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল। উপেন্দ্রকিশোর ছাপার ব্লক তৈরির কৌশল নিয়ে গবেষণা করেন, এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং মানসম্পন্ন ব্লক তৈরির একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মেসার্স ইউ. রয় অ্যান্ড সন্স নামে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুকুমার যুক্ত ছিলেন।

    তিনি গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর কলকাতার সিটি স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাস করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বিএসসি (অনার্স) করার পর সুকুমার মুদ্রণবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে বিলেতে যান। সেখানে তিনি আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

    তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে পৌঁছেছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা‘নদী’ প্রকাশিত হয়‘মুকুল’ পত্রিকার ১৩০২ জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায়। তবে যেটুকু জানা যায়, ছাত্রাবস্থায় বিশেষ সাহিত্যচর্চা করেননি।

    ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে সুকুমার কলকাতাতে ফিরে আসেন। সুকুমার ইংল্যান্ডে পড়াকালীন, উপেন্দ্রকিশোর জমি ক্রয় করে, উন্নত-মানের রঙিন হাফটোন ব্লক তৈরি ও মুদ্রণক্ষম একটি ছাপাখানা স্থাপন করেছিলেন। ১৯১৩ সালে উপেন্দ্রকিশোরের সম্পাদনায় ছোটদের একটি মাসিক পত্রিকা ‘সন্দেশ’ বেরোয়। তখন থেকেই মূলত সুকুমারের সাহিত্যের আঙিনায় প্রবেশ। ২৬ বছর বয়সে। মাত্র দুই বছর যেতে না যেতেই উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু। উপেন্দ্রকিশোর জীবিত থাকতে সুকুমার লেখার সংখ্যা কম থাকলেও উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব সুকুমার নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় বাংলা শিশুসাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়। পিতার মৃত্যুর পর আট বছর ধরে তিনি সন্দেশ ও পারিবারিক ছাপাখানা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তার ছোট ভাই এই কাজে তার সহায়ক ছিলেন এবং পরিবারের অনেক সদস্য ‘সন্দেশ’-এর জন্য নানাবিধ রচনা করে তাদের পাশে দাঁড়ান।

    তবে খুব দীর্ঘ হয়নি সেই যাত্রা। তাঁর সাহিত্য চর্চা শেষ হয় মাত্র দশ বছরের পরিসরেই। রোগশয্যায় শেষ আড়াই বছর বিশেষভাবে সৃজনশীল ছিলেন। সুকুমার রায়ের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তার প্রতিভার শ্রেষ্ঠ বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। ‘সন্দেশ’র সম্পাদক থাকাকালীন তার লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে। তার বহুমুখী প্রতিভার অনন্য প্রকাশ তার অসাধারণ ননসেন্স ছড়াগুলোতে। তার প্রথম ও একমাত্র ননসেন্স ছড়ার বই ‘আবোল তাবোল’ শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজস্ব জায়গার দাবিদার।

    প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তিনি ননসেন্স ক্লাব নামে একটি সংঘ গড়ে তুলেছিলেন। এর মুখপাত্র ছিল সাড়ে বত্রিশ ভাজা নামের একটি পত্রিকা। সেখানেই তার আবোল-তাবোল ছড়ার চর্চা শুরু। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর মানডে ক্লাব (ইংরেজি ভাষা: Monday Club) নামে একই ধরনের আরেকটি ক্লাব খুলেছিলেন তিনি। মানডে ক্লাবের সাপ্তাহিক সমাবেশে সদস্যরা ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’ পর্যন্ত সব বিষয়েই আলোচনা করতেন। সুকুমার রায় মজার ছড়ার আকারে এই সাপ্তাহিক সভার কয়েকটি আমন্ত্রণপত্র করেছিলেন সেগুলোর বিষয়বস্তু ছিল মুখ্যত উপস্থিতির অনুরোধ এবং বিশেষ সভার ঘোষণা ইত্যাদি।

    ইংলান্ডে থাকাকালীন তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের বিষয়ে কয়েকটি বক্তৃতাও দিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তখনো নোবেল পুরস্কার পাননি। ইতোমধ্যে সুকুমার লেখচিত্রী/প্রচ্ছদশিল্পীরূপেও সুনাম অর্জন করেছিলেন। তার প্রযুক্তিবিদের পরিচয় মেলে, নতুন পদ্ধতিতে হাফটোন ব্লক তৈরি আর ইংল্যান্ডের কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত তার প্রযুক্তি বিষয়ক রচনাগুলো থেকে।

    সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কার্য ছাড়াও সুকুমার ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারপন্থি গোষ্ঠীর এক তরুণ নেতা। ব্রাহ্ম সমাজ, রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত একেশ্বরবাদী, অদ্বৈতে বিশ্বাসী হিন্দুধর্মের এক শাখা যারা ৭ম শতকের অদ্বৈতবাদী হিন্দু পুরান ঈশ-উপনিষদ মতাদর্শে বিশ্বাসী। সুকুমার রায় ‘অতীতের কথা’ নামক একটি কাব্য রচনা করেছিলেন, যা ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাসকে সরল ভাষায় ব্যক্ত করে - ছোটদের মধ্যে ব্রাহ্ম সমাজের মতাদর্শের উপস্থাপনা করার লক্ষ্যে এ কাব্যটি একটি পুস্তিকার আকারে প্রকাশ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি ওই সময়ের সবথেকে প্রসিদ্ধ ব্রাহ্ম ছিলেন, তার ব্রাহ্মসমাজের সভাপতিত্বের প্রস্তাবের পৃষ্ঠপোষকতা সুকুমার করেছিলেন।

    ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কালাজ্বরে (লেইশ্মানিয়াসিস) আক্রান্ত হয়ে মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। তার মৃত্যু হয় একমাত্র পুত্র সত্যজিত এবং স্ত্রীকে রেখে। সত্যজিত রায় ভবিষ্যতে একজন ভারতের অন্যতম চলচ্চিত্র পরিচালকরূপে খ্যাতি অর্জন করেন ও নিজের মৃত্যুর ৫ বছর আগে ১৯৮৭ সালে সুকুমার রায়ের উপরে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রযোজনা করেন।

    এবি

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…