সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী রইস উদ্দিন হত্যার দুই দিনেই রহস্য উদঘাটন করেছে শাহজাদপুর থানা পুলিশ। মাত্র ১৬ হাজার টাকার জন্য গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে তারই কাছের মানুষেরা। গ্রেফতারকৃত মামুন ও জয়নাল হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে বিস্তারিত জবানবন্দি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ শে নভেম্বর) বেলা ১১টায় শাহজাদপুর থানায় আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুজ্জামান, এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আসলাম আলী।
আটককৃতরা হলো, নলুয়া বটতলা গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে মোঃ মামুন (২৮) ও জুগ্নীদহ গ্রামের মৃত রানু শেখ এর ছেলে জয়নাল শেখ (৫০)। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু, রইস উদ্দিন এর ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন, লুঙ্গি ও স্ট্রাউজার উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার (১৮ই নভেম্বর) নিখোঁজের ১৫ দিন পর মুদিখানা ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিনের লাশ পৌরশহরের নলুয়া বটতলা গ্রামের জনৈক শফিকুল ইসলামের ডোবা হতে গলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ওইদিনই নিহতের ছেলে দুলাল হোসেন শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো জানান, মৃত রইস উদ্দিন এর লাশ উদ্ধারের পরে তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানার এসআই মো: শারফুল ইসলাম ও এসআই কাঞ্চন কুমার প্রাং দ্বয়ের নেতৃত্বে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি চৌকশ টিম গতকাল বুধবার বেলা ৩টায় নলুয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মৃত রইস হত্যার সহিত জড়িত আসামী মোঃ মামুন (২৮), ও মোঃ জয়নাল শেখ (৫০) কে গ্রেফতার করে। তাদের দেখানো মতে টয়লেট হতে ভিকটিম রইস এর ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে আসামী মামুনের বাড়ি হতে রইসের ট্রাউজার এবং রইসের বাড়ির পাশের ডোবা হতে রক্তমাখা লুংগি ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, আটককৃত আসামী মামুন ও জয়নাল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, মামুন পেশায় রাজমিস্ত্রী ও জয়নাল ভবঘুরে টাইপের মানুষ। আসামী মামুন ও জয়নাল মাঝে মাঝে ভিকটিম মৃত রইস এর দোকানে বসে আড্ডা দিত। আসামী মামুন, জয়নাল ও ভিকটিম রইস পূর্ব পরিচিত। আসামী মামুন ও জয়নালের কাছে টাকা না থাকায় তারা ব্যবসায়ী রইসের টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
সেই পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী মামুন শাহজাদপুর থেকে একটি চাকু ক্রয় করে এবং ৩ নভেম্বর রাত ১০টা থেকে তারা রইস কে অনুসরন করতে শুরু করে। রাত আনুমানিক ১০ টায় রইস বাড়ি যাওয়ার পরে রাত আনুমানিক ১১.৫০ মিনিটে আসামী মামুন এবং জয়নাল রইসের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে রইস কে ডাক দেয়। রইস বাইরে বের হলে আসামী জয়নাল রইস কে চেপে ধরলে রইস মাটিতে পড়ে যায়। মুহুর্তেই আসামী মামুন রইস কে চাকু দিয়ে জবাই করে হত্যা করে এবং রইসের ঘরের তোষকের নিচে থাকা ১৬ হাজার টাকা আসামী মামুন নেয়।
এরপরে রইসের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল এবং রক্ত গামলাতে করে টয়লেটে ফেলে দেয়। মামুনের রক্তমাখা লুংগি এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু বাড়ির পাশে ডোবাতে ফেলে দেয়। এরপর মামুন রইসের লাশ একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে আসামী জয়নালের সহায়তায় জনৈক শফিকুলের ডোবায় ফেলে দেয়। এরপর মামুন নিজে ১০ হাজার টাকা নেয় এবং জয়নালকে ৬ হাজার টাকা দেয়। এরপর তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফেরত গিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে।
এফএস