চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শত শত হেক্টর জমিতে শুধু শিম আর শিম। যেন শিমের রাজ্য পুরানগড়! শিমের ভালো বাজার মূল্য পেয়ে খুশি চাষিরা। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় শিম চাষ করে এখন দুই সহস্রাধিক চাষির মুখে হাসি ফুটেছে।
শীত মৌসুমের অন্যতম প্রধান সবজি শিম। চলতি মৌসুমে পুরানগড়ের বিস্তীর্ণ জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। যেদিকে দৃষ্টি যায়, সেদিকেই সবুজ- বেগুনী রংয়ের শিমের সৌন্দর্য। চলতি মৌসুমের পুরোটা জুড়ে থাকবে শিমের এই আবাদ। ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত প্রায় একইরকম ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, সাতকানিয়ায় চলতি মৌসুমে ৪৩৩ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে শুধু পুরানগড় ইউনিয়নেই ৩৫০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ করেছেন দুই সহস্রাধিক চাষি। বর্তমানে বাজারে শিমের ভালো দাম রয়েছে। কিছুদিন আগেও বাড়ির আঙ্গিনায় সীমিত পরিসরে শিম চাষ করা হতো। এখন চাহিদা বেড়েছে, ফলনও বেড়েছে। ফলে কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনাবাদী পতিত জমিকে আবাদী জমিতে রূপান্তরিত করে শিমের আবাদ করা হচ্ছে।
স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে একসময় আমন ও বোরো মৌসুমে দুই দফায় ধানের চাষ হতো। ধান চাষে ঝুঁকি বেশি থাকায় এবং লাভ কমে যাওয়ায় এলাকার কৃষকেরা শীত মৌসুমে শুধু শিমের চাষই করে চলেছেন। তাছাড়া শিমখেতের একই মাচাঙে গ্রীষ্ম মৌসুমে তাঁরা করলা, কাঁকরোল, শসা, ঝিঙে ও চিচিঙ্গাজাতীয় সবজি চাষ করেন।
শিম চাষিরা জানান, যে চাষি আগে এক একর জমিতে শিমের আবাদ করতেন, এখন তিনি তিন-চার একর জমিতে শিমের আবাদ করছেন। তারা জানান, কৃষি অফিস থেকে পরামর্শের পাশাপাশি সার ও বীজ পাচ্ছেন তারা। আর এবার শিমের ভালো দাম পেয়েছেন।
বৈতরণী গ্রামের কৃষক মো. আমিনুল বলেন, একসময় এলাকার চাষিরা শুধু ধানের চাষ করতেন। ধান চাষে লাভ কম ও ঝুঁকি বেশি থাকায় এলাকার অধিকাংশ চাষিই এখন শিম চাষে নেমে পড়েছেন। শিম চাষ করে এখন পর্যন্ত কোনো চাষিকে ক্ষতির মুখে পড়তে দেখেননি তিনি। তাই এলাকায় প্রতিবছর শিমের চাষ বাড়ছে।
সরেজমিন পুরানগড় ইউনিয়নের বৈতরণী, ফকিরখীল, কালিনগর, মাঝিরপাড়া, পুরানগড়, বটতলীপাড়া ও নয়াহাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিলজুড়ে শিমের খেত। তা ছাড়া বাড়ির পাশের আঙিনা, সড়কের দুই পাশসহ খালের পাড়েও শিমের খেত রয়েছে। কোনো কোনো খেতে শিমগাছের পরিচর্যা করছেন চাষি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা শিম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চলতি মৌসুমে শুধুমাত্র উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নেই ৩৫০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। আগামী বছর তা আরও বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে। তখন উৎপাদন আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের কৃষি বান্ধব নীতি ও পরিকল্পনার কারণে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিদের শিমসহ নানা ধরনের সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। তারা লাভবানও হচ্ছেন। কৃষিতে থেকে অর্জিত আয় দিয়েই তাদের পরিবার চলছে। পড়ালেখা করছে সন্তানরা। সব ব্যয় মিটিয়ে প্রতিবছর তাদের হাতে পুঁজিও থাকছে। এ কারণেই চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। কারণ কৃষকের উন্নয়ন হলেই কৃষির উন্নয়ন হয়।