গত ৫ আগস্টের পর ভোল পাল্টে ফেলেও শেষ রক্ষা হলোনা যশোরের বিতর্কিত সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসানের। অবশেষে তাকে ফরিদপুর সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব শোভন রাংসা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বদলির আদেশ দেয়া হয়। একই সাথে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদকে ঢাকা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে উপপরিচালক হিসেবে বদলী করা হয়েছে। তিনি যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ও রাজস্ব আয়ের রেকর্ড তৈরি করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা. মাহমুদুল হাসান গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছিলেন। গত ১০ জুন তিনি যশোরের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেন।
তার নিকটাআত্নীয় কুড়িগ্রাম ৪ আসনের সাবেক সংসদ বিপ্লব হাসান পলাশ, যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ কাজী নাবিল আহমেদ ও কেশবপুর আসনের সাবেক সংসদ আজিজুর ইসলামের ডিও লেটার নিয়ে তিনি যশোরের সিভিল সার্জন হন। অভিযোগ ছিলো ডা. মাহমুদুল হাসান যশোরে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স হালনাগাদ করতে মালিকদের মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। এমনকি নতুন লাইসেন্সের জন্য টাকা অংক নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। বিগত দিনে সিলগালা করা অনেক অযোগ্য ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চালু করে দিয়েছেন। আউটসোসিং নিয়োগ দেওয়ার নামে নিয়োগ বাণিজ্যে করেছেন তিনি।
সূত্র জানায়, সারাদেশে যখন শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন চলছিলো। তখন এই আন্দোলনের বিরোধীতা করে যশোরে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি বক্তব্য দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এক মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ায় নানা ধরণের সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ভিডিওতে সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসানকে বলতে শোনা যায়- আন্দোলনকারীদের তিনি ফ্যাাসিবাদি, জঙ্গি বলে আখ্যা দেন। তিনি দেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে যে হত্যাযঞ্জ ভাঙচুর চালানো হয়েছে এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা কোটা আন্দোলনের প্রতিটা দাবি মেনে নিয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনের নামে এক দফা দাবি উঠিয়েছে। সেটা কখনো আমরা মেনে নিতে পারি না। এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়, এবং এই শক্তিকে আমরা ঘৃণা করি। এই শক্তিকে আমরা প্রতিহত করবো।
সব স্তরের চিকিৎসকের এক দফার দাবির বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার হওয়ার অনুরোধ জানান সিভিল সার্জন।সূত্রটি আরও জানায়, ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর ভোল পাল্টে শিবির সাজেন। আধিপত্য বিস্তার করতে কর্মস্থলে কয়েকজন বহিরাগতকে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেন। সিভিল সার্জন অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা- কর্মচারিরা তার অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ট হয়ে ওঠেন। ফ্যাসিবাদ সরকারের দালাল হিসেবে পরিচিতি অর্জন করা ডা. মাহমুদুল হাসান শিবির সেজেও নিজেকে শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। যশোর থেকে তাকে ফরিদপুরে সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
এতে চরমভাবে খুশি হয়েছেন যশোর সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।এদিকে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.হারুন অর রশিদের বদলির খবরে হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট অনেকেই ব্যথিত। ২০২৩ সালের ৮ মার্চ তিনি হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। আর্থিক স্বচ্ছতা আনতে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ক্যাশ কাউন্টারের রশিদের মাধ্যমে করার নির্দেশনা জারি করেন। জোরালো তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা করার কারণে আর্থিক দূর্নীতি কমতে শুরু করে। একই সাথে বাড়তে থাকে সরকারের রাজস্ব আদায়। এক মাসে সাড়ে ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৩০ টাকা রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড তৈরি করেন ডা. হারুন অর রশিদ।
হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ, এক্সরে বিভাগ, সিটিস্ক্যান বিভাগ, আল্ট্রাসনোগ্রাম বিভাগ, ইসিজি বিভাগ, বহিঃবিভাগ, জরুরি বিভাগ, কেবিন ভাড়া, পেইং ওয়ার্ড ভাড়া, করোনারি কেয়ার ইউনিটের ইসিজি বিভাগ, ইকো বিভাগ, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ও টিকিট কাউন্টার থেকে থেকে এই রাজস্ব আদায় হয়।হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, তাকে বদলির বিষয়টি মঙ্গলবার বিকেলে অবগত হয়েছেন। আগামী রোববার ( ২৯ ডিসেম্বর) তিনি হাসপাতাল থেকে বিদায় নেবেন।
এমআর