সিরাজগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় চোখ হারানোর অভিযোগ উঠেছে চক্ষু ডা. মো. শফিউল আজমের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী মোছাঃ সুফিয়া খাতুন (৭০) এর চোখে সানি অপারেশন করান ডা. শফিউল আজম। ভুল অপারেশন করার পর তার ডান চোখ নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে গেলে ঢাকায় কর্মরত ডাক্তার বলেন তার ডান নষ্ট হয়ে চোখ পচে গেছে। দ্রুত চোখটি তুলে ফেলার পরামর্শ দেন তিনি। চোখটি তুলে না ফেললে পরবর্তীতে বাম চোখও দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ডাক্তার শফিউল আজমের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহাপরিচালক, প্রশাসক ও জেলা সিভিল সার্জন বরাবর ভুল চিকিৎসা করার অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা সিভিল সার্জন জানান বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই ডাক্তার শফিউল আজম তার চেম্বার সুলতানা ফ্যাকো সেন্টার থেকে পলাতক রয়েছে। ভুক্তভোগী মোছাঃ সুফিয়া খাতুন সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার একডালা গ্রামের বাসিন্দা ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর শহরের সুলতানা ফ্যাকো সেন্টারে ডাক্তার শফিউল আজম তার ডান চোখের ছানি অপারেশন করে। নিয়ম অনুযায়ী অপারেশনের পরদিনই রোগী চোখে দেখার কথা। ঠিক অপারেশনের এক দিন পর চোখের ব্যান্ডেজ খুলে দিলে সুফিয়া খাতুন আর ডান চোখে দেখতে পান না। এরপর ১৬ ডিসেম্বর নিজেই দেখেন এবং ব্যবস্থাপত্র দেন। পরবর্তীতে ২২ ডিসেম্বর ও ২৫ ডিসেম্বর আবারো ডাক্তার শফিউল আজম রোগীকে তার ক্লিনিকেই কর্মরত ভিন্ন ডাক্তার ডা. মোহাম্মদ ওয়াসিফ আল ইমরানকে দেখান। তিনি রোগীকে দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় বাংলাদেশ আই হসপিটাল এন্ড ইনস্টিটিউটে সুফিয়া খাতুন চিকিৎসা নিতে গেলে ডাক্তার তার চোখ পরীক্ষা করে জানায়, ভুল অপারেশনের কারনে ইনফেকশন হয়ে তার ডান চোখ নষ্ট হয়ে পচে গেছে। দ্রুত ডান চোখটি তুলে না ফেললে তার বাম চোখেরও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরে অপারেশনের মাধ্যমে তার ডান চোখ তুলে ফেলা হয়। অভিযুক্ত ডাক্তার শফিউল আলমের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী সুফিয়া খাতুন এর পক্ষে তার ছেলে এনামুল হক বকুল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন বরাবর ডাক্তারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী সুফিয়া খাতুন বর্তমানে ঢাকায় বাংলাদেশ আই হসপিটাল এন্ড ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি জানান, আমার ডান চোখ তুলে ফেলার পর বাম চোখ দিয়ে কিছুটা দেখছি। ভুল অপারেশনের পর ডাক্তার কালক্ষেপন করে আমার চোখটি নষ্ট করে দিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
ভুক্তভোগী সুফিয়া খাতুনের ছেলে এনামুল হক বকুল জানান, এর পূর্বেও ডাক্তার শফিকুল আজম অনেক রোগীর সঙ্গেই এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে এবং চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। তিনি অপারেশনের পর আমার মার চোখে না দেখার পরও তিনি কালক্ষেপন করে একই ধরনের চিকিৎসা দিয়ে গেছেন। তার ভুল চিকিৎসার জন্য আজ আমার মায়ের চোখ হারাতে হলো। হতে হলো অঙ্গ হানি এবং বরণ করতে হলো অন্ধত্বকে।
এদিকে, সুলতানা ফ্যাকো সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ডা. শফিউল আজম ঘটনার পর থেকেই আর চেম্বারে আসছেন না।
চেম্বারের দায়িত্বরত ম্যানেজার সোহেল রানা জানান, ১৫ দিন ধরে ডাক্তার চেম্বারে বসছেন না। কি কারণে বসছে না এর জবাবে তিনি বলেন, ডা. শফিউল আজম শারীরিকভাবে অসুস্থ।
সিরাজগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নূরুল আমিন বলেন, বিষয়টি দেখে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এইচএ