এইমাত্র
  • পদত্যাগপত্রে যা লিখেছেন টিউলিপ সিদ্দিক
  • সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছেন ড. ইউনূস
  • পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক
  • ভারতীয়দের ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ সৌদির
  • জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক বৃহস্পতিবার
  • জেল থেকে কী বলেছেন লুৎফুজ্জামান বাবর, জানালেন আইনজীবী
  • রেমিট্যান্স পাঠানোর তালিকায় শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
  • এলপিজির নতুন মূল্য নির্ধারণ, কার্যকর সন্ধ্যা থেকে
  • প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময় অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে: ইসি সচিব
  • লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে ছড়ানো হচ্ছে ‘পিঙ্ক পাউডার’
  • আজ বুধবার, ২ মাঘ, ১৪৩১ | ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এপিবিএন’র রাজত্ব

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৪ পিএম
    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৪ পিএম

    উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এপিবিএন’র রাজত্ব

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৪ পিএম

    ‘জোর যার মুল্লুক তার, আমাদের সাথে সেটি হয়েছে। তারা প্রশাসন। তারা চাইলে যা কিছু করতে পারে। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আমাদের উপার্জনের একমাত্র সহায়-সম্বল তারা কেড়ে নিয়েছে। দেশে এমন অমানবিক নির্যাতন জুলুম অন্য কোথাও হয়েছে কি না আমরা জানা নেই। রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়ে এমনিতেই নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। তার মধ্যে আমাদের বাপ-দাদার মালিকানাধীন দীর্ঘদিনের ভোগদখলীয় জমিগুলো ক্যাম্পের প্রশাসন এসে স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছে বেআইনিভাবে।

    আরআরআরসি'কে বললে এপিবিএনের কথা বলে, এপিবিএনকে বললে আরআরআরসি'র কথা বলে। কেউ আমাদের অসহায়ত্বের কথা ভাবছে না।’ কথাগুলো এভাবে বলছিলেন কক্সবাজারের উখিয়ার থ্যাংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন ঘোনারপাড়া এলাকার আব্দুল আলম।

    তার অভিযোগ, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত প্রশাসন আরআরআরসি'র প্রতিনিধিদের নাটকীয় ভুমিকায় উখিয়ার থ্যাংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে ঘোনারপাড়া এলাকায় ২ একর ব্যক্তি মালিকাধীন খতিয়ানি জমি জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে ৮-এপিবিএন পুলিশ। জমি উদ্ধার করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি আরআরআরসি'র প্রতিনিধিরা। উল্টো জমিগুলো জবরদখল করতে যাবতীয় সহযোগীতা করেছে ৮- এপিবিএন পুলিশ সদস্যদের। ভুক্তভোগী জমি মালিকদের দাবি, এর পিছনের মূলনায়ক হিসাবে কাজ করছেন আরআরআরসি'র প্রতিনিধি সামছু-দ্দৌজা।

    ভুক্তভোগী হাসেমের পরিবার জানিয়েছেন, ৮-এপিবিএন পুলিশের জবরদখলকৃত জমি বা ক্ষতিপূরণ ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রায় ৩ বছর অতিবাহিত হলেও কোন সুরহা দেননি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দ্দৌজা। তিনি ৩শ টাকা মূল্যের স্টাম্পের মাধ্যমে চুক্তি করে জমি ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে কাগজ করলেও বুঝিয়ে দেননি। উল্টো জমিতে মাটি ভরাট করে এপিবিএন পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার সহযোগীতা করেছেন।

    জানা যায়, কোন আইনি নোটিশ বা অধিগ্রহণের নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘোনারপাড়ায় চাষাবাদের প্রায় ২ একর খতিয়ানী জমিতে এপিবিএন পুলিশকে কোয়ার্টার স্থাপন করতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দ্দৌজা অনুমতি প্রদান করেন। সেই অনুমতি ক্রমে ২০২১ সালে আরআরআরসি'র সহযোগিতায় ঘোনারপাড়ায় ১৯নং পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করতে জমিতে সাইনবোর্ড টাঙানো হলে শুরু হয় মালিকের সাথে এপিবিএন পুলিশের দ্বন্দ্ব। এসব দ্বন্দ্ব নিরসনে আরআরআরসি'র পক্ষ থেকে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দ্দৌজা বিষয়টি সামাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও আজঅব্দি কালক্ষেপন করতে থাকেন। এর মধ্যে এপিবিএন পুলিশ জোরপূর্বক মালিকানাধীন জমিতে মাটি ভরাট করে গড়ে তুলেন স্থাপনা। অন্যের জমিতে বেআইনিভাবে এপিবিএন পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনা নির্মাণে আরআরআরসি'র পক্ষ থেকে আইনিভাবে বাধা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা বাধা না দিয়ে যোগসাজশে জবরদখল করে নেন ব্যক্তিমালিকানা ২ একর খতিয়ানী জমি। জমি জবরদখল ও স্থাপনা নির্মাণ করতে এপিবিএন পুলিশকে যত রখম সহযোগীতা করা দরকার সব করে গেছেন আরআরআরসির প্রতিনিধি সামছু-দ্দৌজা। এমন অভিযোগ জমি মালিকদের।

    জমি মালিকরা জানিয়েছেন, এমতাবস্থায় জমির ক্ষতিপূরণ বা আইনি সহায়তা না পেয়ে আদালতের আশ্রয় নেন তারা। মামলা চলাকালীন সময়ে দ্রুত সামাধান পেতে উচ্চ আদালতে রীট করেন ভুক্তভোগীরা। রীট পিটিশন ১২৬৯৮/২১ নং মূলে স্থানীয় আবুল হাসেমের খতিয়ানী জমির বিরোধ নিষ্পত্তি করতে আরআরআরসিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে সামছু-দ্দৌজা নাটকীয়ভাবে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মান্যগণ্য মানুষের উপস্থিতে ৩শ টাকা মুল্যের স্টাম্প করে জমি বুঝিয়ে দিয়ে জমিবিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে মর্মে কাগজে স্বয়-স্বাক্ষর নিয়ে হাইকোর্টকে জবাব দেন। জমি ফিরিয়ে দিয়ে কাগজের কাজ সমাপ্ত করার পর স্থানীয় আবুল হাসেম জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে পুনরায় এপিবিএন পুলিশের বাধা আর হুমকি ধামকিতে জমি ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে হয়। পরে তারা পুনরায় আর-আর-আরসি'র প্রতিনিধি সামছু-দ্দৌজা'র শরাপন্ন হয়। সামছু-দ্দৌজা জমি ফিরিয়ে দিয়েছি বলে লিখিত কাগজের কথা উল্লেখ করে বলেন তোমাদের জমি তোমাদের দিয়া দিলাম আবার এইখানে কি? এই কর্মকর্তার এমন উত্তরে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন জমি মালিকরা। অসহায় জমি মালিক আবুল হাসেম পুনরায় হাইকোর্টে রীট করলে এ জমি সংক্রান্ত নিষ্পত্তি করতে ৪ সাপ্তাহ সময় বেধে দেন হাইকোর্ট। এই ৪ সাপ্তাহ'র সময়ে ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ৮১২১/২২ নং রীট পিটিশনের প্রতিবেদন বা নিষ্পত্তিনামা দেননি সংশ্লিষ্টরা।

    স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন জানান, এপিবিএন পুলিশ জোরপূর্বক ব্যক্তিমালিকানাধীন খতিয়ানী জমি জবর দখল করেছে ঘটনা সত্য। তারা কেউ ক্ষতিপূরণ বা কারো সহযোগীতা পাইনি। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত; তার মধ্যে জমি কেড়ে নেওয়া চরম অন্যায়। রক্ষক যখন বক্ষক হয় তাইলে জনসাধারণ অসহায়। এইখানে তাই হচ্ছে।

    সংশ্লিষ্ট ৮-এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি (ভারপ্রাপ্ত) ফজলে রাব্বীর'র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সিইসির অনুমতিক্রমে ১৯নং পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। তবে শুনছি এই জমি বনের। স্থানীয়রা ব্যক্তিমালিকানা জমি বলে মামলা করেছে। আদালত প্রমাণ করবে ব্যক্তিমালিকানা নাকি বনের জমি। ব্যক্তিমালিকানা হলে আদালত অবশ্যয় ক্ষতিপূরণ বা ন্যায্যতা ফিরিয়ে দিবে।

    বনের জমি নাকি ব্যক্তিমালিকানা জমি জানতে সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তা বিকাশ দাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখানে সব বনের জায়গা। তবে যেখানে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনা নির্মাণ করেছে সেখানে কিছু খতিয়ানী জমি থাকতে পারে।

    এই জমি পরিমাপ করতে আদালত থেকে গঠিত কমিটির সদস্য এডভোকেট কমিশনার মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহ'র প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১.১৯ একর জমি খতিয়াভুক্ত। ওই জমিতেই পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ট্রেস-ম্যাপ চৌহদ্দী দিয়ে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে।

    এ বিষয় নিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি সামছু-দ্দৌজার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কাগজ পত্র পর্যালোচনা না করে কোন মন্তব্য করতে পারবেন না বলে জানিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…