এইমাত্র
  • দু’দিনেও জ্ঞান ফেরেনি শিশুটির, হাসপাতালে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা
  • শনিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন বিসিএস চিকিৎসকরা
  • বউমার সঙ্গে পরকীয়ার জেরে খালুর দুই চোখ তুলে ফেলে সাদ্দাম
  • নেত্রকোনায় একদিনে দুই থানার ওসি প্রত্যাহার
  • আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে উদযাপন কমিটির ১১ দাবি
  • মির্জাপুরে আগুনে পুড়ে ছাই দিনমজুরের বাড়িসহ গবাদিপশু
  • সিরাজদিখানে ৮ শতাধিক পরিবারের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ
  • হিলিতে জমে উঠেছে ইফতার বাজার
  • আশুলিয়ায় ঝুটের গোডাউনে আগুন
  • দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউনের গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল
  • আজ শুক্রবার, ২৩ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ৭ মার্চ, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত যুবদল নেতার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ

    জাহিদ হাসান নাইম, কুমিল্লা প্রতিনিধি প্রকাশ: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
    জাহিদ হাসান নাইম, কুমিল্লা প্রতিনিধি প্রকাশ: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম

    যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত যুবদল নেতার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ

    জাহিদ হাসান নাইম, কুমিল্লা প্রতিনিধি প্রকাশ: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম

    কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটকের পর যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার এবং এলাকাবাসী।

    শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা বারোটায় নিহত যুবদল নেতা তৌহিদের লাশ নিয়ে মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের দাবিতে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের হাজারো বিক্ষুব্ধ জনতা কুমিল্লা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করেন।

    এদিকে কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যু প্রসঙ্গে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে বারোটার দিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনাটি তদন্তে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এঘটনায় কুমিল্লা সদর সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

    এদিকে শনিবার বেলা বারোটার দিকে যুবদল নেতা তৌহিদের লাশবাহী গাড়ি নিয়ে হাজারো জনতার সমাবেশ ঘটে কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ লোকজন তৌহিদের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। তারা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিশাল মানববন্ধন করেন এবং একই স্থানে ঘটনার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

    সংবাদ সম্মেলনে নিহত যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে কিছু লোকজন তাদের বাড়িতে প্রবেশ করেন। এ সময় তৌহিদের পিতার কুলখানির রান্নার আয়োজন চলছিল। কুলখানি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ওই রাতে যৌথ বাহিনীর লোকজন তৌহিদ ও তার স্ত্রী সহ অন্যদের মোবাইল ফোন জব্দ করেন। পরে তৌহিদের ঘর তল্লাশি করতে চাইলে তার স্ত্রী কারণ জানতে চান। তখন সেনা সদস্যরা জানান ঘরে অস্ত্র আছে। এরপর ঘর তল্লাশি করে কোন অস্ত্র না পেলেও তৌহিদকে যৌথ বাহিনী আটক করে। তখন তার স্ত্রী অস্ত্র না পাওয়ার পরও কেন আটক করেছে কারণ জানতে চাইলে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনাকারীদের একজন জানান, কাউসার নামে একজনকে ধরতে হবে এজন্য তাকে নিয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার সকালে ছেড়ে দেওয়া হবে। সকালে সদর সেনা ক্যাম্পে গেলে ছেড়ে দেওয়া হবে। রাতভর উৎকণ্ঠায় থাকার পর সকাল সাড়ে আটটার দিকে যৌথ বাহিনীর ওই টিম তৌহিদকে নিয়ে তার বাড়িতে আসে। এসময় তৌহিদকে মুমূর্ষুও দেখা যাচ্ছিল বলে তার স্ত্রী দাবি করেন।

    তিনি আরো বলেন, সকালে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তার সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন এবং কাউসার ও তার স্ত্রীকে ধরিয়ে দিলে তৌহিদকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান। কিছুক্ষণ বাড়িতে অবস্থানের পর সেনা সদস্যরা তৌহিদকে নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে আবার চলে যায়। বেলা সাড়ে বারোটার দিকে কোতোয়ালি থানার একজন পুলিশ অফিসারের ফোন পেয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে তৌহিদকে তারা মৃত অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

    সংবাদ সম্মেলনে তৌহিদের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার তার স্বামীর মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনা সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

    সংবাদ সম্মেলনে তৌহিদের ভাগ্নি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহাবুবা উদ্দিন বলেন, এই ঘটনার বিষয়ে সেনাবাহিনীর সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের সেনা আইনে বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

    প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক ও ইটাল্লা গ্রামের মো. তৌহিদুল ইসলামকে তার বসতঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় যৌথবাহিনী। তারপর শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মোরশেদ মোবাইল ফোনে তৌহিদের ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপুকে জানান, শহরতলীর গোমতী নদীর পাড়ের গোমতী বিলাশ নামক স্থানে আহত অবস্থায় তৌহিদ পড়ে রয়েছেন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। তখন যুবদল নেতা তৌহিদের পরিবারের লোকজন হাসপাতালে গিয়ে তৌহিদের লাশ দেখতে পান।

    যুবদল নেতা তৌহিদের মৃত্যু নিয়ে শুক্রবার দিনভর ধূম্রজাল তৈরি হয়। তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী স্পষ্ট করে গণমাধ্যমে কোন বক্তব্য দেন নি। এমনকি ঘটনার পর এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য জানানো হয়নি। রাতে নিহত যুবদল নেতা তৌহিদের পরিবার থেকে অভিযোগ ওঠে যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর ওই যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। অমানবিক নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলেও গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন। তিনি জানান তাঁর ভাইয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

    কোতয়ালী থানার এসআই মোরশেদ জানান, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোমতী নদীর পাড়ের ঝাকুনিপাড়ার গোমতী বিলাশে গিয়ে যখন সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে তৌহিদকে গাড়িতে উঠাই, তখনও তাঁর প্রাণ ছিল। কিন্তু কুমেক হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

    যুবদল নেতার মৃত্যুর বিষয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই ব্যক্তিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার সময় তিনি অসুস্থবোধ করায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

    কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায় হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

    পিএম

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…