এইমাত্র
  • নভেম্বরে ৫৩৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৮৩ ও আহত ১৩১৭ জন
  • ছয় মাসের মাথায় চাকরি হারালেন আনচেলত্তি
  • নিকুঞ্জের সামনে ট্রাক উল্টে এয়ারপোর্ট রোডে তীব্র যানজট
  • রাজধানী থেকে এনসিপি নেত্রীর মরদেহ উদ্ধার
  • খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে ব্রিফিং করবেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক
  • ভারতীয় ভিসা সেন্টার চালু
  • মানবতাবিরোধী অপরাধে ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল
  • যেসব এলাকায় আজ টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না
  • মালয়েশিয়ার অভিযানে ৭২ বাংলাদেশিসহ আটক ৪০২ জন
  • প্রবাসীদের বড় ধরনের সুসংবাদ দিলো সৌদি আরব
  • আজ বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ, ১৪৩২ | ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যেন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারখানা

    মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম
    মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম

    মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যেন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারখানা

    মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম

    মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল যেন দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারখানা। পতিত সরকারের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত অসাধু কর্মকর্তা এবং দায়িত্বপ্রাপ্তরাই রয়েছেন এর মূলে। যে কারণে অনিয়মই যেন দিনদিন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে এই হাসপাতালটিতে। ফলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার সাধারণ মানুষ।

    জানাযায়, ২০২০ সালে হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্বোধনের পর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আস্থাভাজন এবং অদক্ষ ডাক্তারদের হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে শুরু থেকেই ৫০০ শয্যার সরকারি এই হাসপাতালটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়, যা গত ৫ বছরে চরমে পৌঁছে গেছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে গাইনি, মেডিসিন, নাক কান গলা, কিডনি ডায়লাইসিস, ডেন্টাল, অর্থপেডিক ও সার্জারি বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ গুলো অনিয়মে নিমজ্জিত। সাম্প্রতিক সময়ে ভুল রক্ত দেওয়ার কারণে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। একজন ইন্টার্ণ চিকিৎসকের ভুল রক্তের অর্ডার করা এবং তা রোগীর শরীরে প্রবেশ করানোর জন্যে রোগীর মৃত্যু হয়। তবে অবহেলাজনিত কারণে বিগতদিনেও রোগী মৃত্যুর ঘটনা আছে বলে দাবি স্থানীয়দের। তাদের ভাষ্যমতে বিগত সরকারের সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কারণেই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সাহস দেখায়নি কেউ।

    আরও জানা যায়, প্রতিদিন হাসপাতালটির বহির্বিভাগে ১০০০ হাজার থেকে ২০০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর কেউ চলে যান আবার কেউ ভর্তি হন হাসপাতালে। যারা ভর্তি হন তাদের পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। রোগীর সজনদের অভিযোগ- আয়া, বুয়া, ওয়ার্ড বয় দ্বারা প্রতিনিয়ত হেনস্তার শিকার হতে হয়। টাকা ছাড়া সেবা পেতে চাইলে আপনাকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। কেউ কারো কথা শুনতে রাজি নন। একটু সেবা নিতে হলেই আপনাকে টাকা গুনতে হবে।

    পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর স্বজন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানায়, প্রায় রোগীর স্বজনদের ওপর এক প্রকার জোর খাটিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায় করে ওয়াড বয়রা। হুইলচেয়ারে নিয়ে যেতে, ময়লা পরিষ্কার করতেও টাকা দিতে হয় তাদের। ডায়বেটিক ফুটের মত সিরিয়াস রোগীদের ড্রেসিং পর্যন্ত করে থাকে এই আউটসোর্সিং ওয়াড বয়রা!

    সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া আউটসোর্সিং ডিউটি করা স্টাফরা। আওয়ামী লীগের আমলে বিভিন্ন এলাকার চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের টাকা দিয়ে এই আউটসোর্সিং চাকরি নিয়েছে তারা। ফলে বিগত দিনে অনিয়ম করেও পার পাওয়ায় তারা বেপোরোয়া হয়ে ওঠেছেন। হাসপাতালের কাজে মনোযোগি হওয়ার থেকে তাদের ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় রোগীদের টেস্ট গুলো বেসরকারী হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে করিয়ে টাকা কামানোর কাজে। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো প্রতিকার তো দূরের কথা, তারা দেখেও না দেখার ভান করছেন।

    এদিকে এই হাসপাতালে কর্মরত অনেকেই লুটপাটের সক্রিয় সদস্য বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং এ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় । গত কয়েক মাস আগে দুর্নীতি দমন কমিশন হাসপাতালে অভিযান চালায়, সে সময় বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণও পায় তারা । তবে এ বিষয়ে আজ পর্যন্ত পরিচালক তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

    অন্যদিকে হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগ দীর্ঘ দিন যাবত বন্ধ থাকায় রোগী ভর্তি হলেই সকল প্রকার টেস্ট বাইরে থেকে করতে হয়। বিভিন্ন ইউনিটের ডাক্তার, নার্স ও ওয়ার্ড বয়রা রোগী ও রোগীর স্বজনদের বাধ্য করেন বাইরে থেকে টেস্ট করে আনতে। একটা ইসিজি টেস্ট হাসপাতালে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। একই টেস্ট বাইরে ৩০০ টাকা দিয়ে করতে হয়। এই টেস্ট গুলো তাদের নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করতে হবে। তা নাহলে রোগী ও স্বজনদের সাথে খারাপ আচরণ করেন তারা । এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালককে ভক্তভোগিরা অনেকবার মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।

    আরো অভিযোগ রয়েছে, কিডনি ডায়লাইসিস ইউনটে ১৪ শয্যার ইউনিটের দায়িত্বে রয়েছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক একিউএম আশরাফুল হক এর আপন ছোট ভাই ডা: আসলামুল হক। রোগী ভাগানো নিয়ে সাংবাদিকরা তথ্য চাইতে গেলে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেন এই একিউএম আশরাফুল হক। বিভিন্ন গণমাধ্যমে যা ডালাও করে সংবাদ প্রকাশিত হলেও ৷ এই ঘটনার কয়েক দিন পর তাকে সহকারী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। যা নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

    সরেজমিনে কয়েক দিন হাসপাতাল ঘুরে বিভিন্ন বিভাগের মেডিকেল অফিসারদেরকে বেশি ভাগ সময় তাদের দায়িত্ব পালনের চিত্র চোখে পড়েনি। বলতে গেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দিয়েই চলছে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যদিকে দেশি বিদেশি নামিদামি অনেক যন্ত্রপাতি যা এখনো বিভিন্ন রুমে অযত্নে পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর । সব মিলিয়ে এই হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অত্যন্ত ভয়াবহ। সাধারণ মানুষ এখানে সেবা নেয়ার আশায় এসে এক প্রকার অত্যাচারের স্বীকার হয়। এই হাসপাতালের সেবার মান বাড়াতে অন্তর্বর্তী কালীন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সুনজর প্রয়োজন বলে মনে করেন মানিকগঞ্জ বাসী।

    এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো. শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সব অভিযোগ এর সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    উল্লেখ্য, বর্তমানে হাসপাতালটির পরিচালক ডা: মো সফিকুল ইসলামও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত। সফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের পদদারী নেতা ছিলেন।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…