এইমাত্র
  • বকশীগঞ্জের এক স্কুলেরই ৬৬ ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা
  • নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে নিরাপত্তা জোরদার
  • যমুনায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর, নৌ চলাচল ব্যাহত
  • সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে এভারকেয়ার ছাড়লেন হাদি
  • আগামীকাল সাময়িক বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল
  • হাদি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় গুজবে সয়লাব ফেসবুক : ফ্যাক্টওয়াচ
  • কওমী মাদ্রাসার বোর্ড পরীক্ষার সময়সূচি এগিয়ে আনা হয়েছে
  • কলম্বিয়ায় স্কুলবাস খাদে পড়ে নিহত ১৭
  • হাদির ওপর হামলায় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না: সিইসি
  • হাদিকে গুলি করা অভিযুক্ত মাসুদের ভারতে গিয়ে সেলফি
  • আজ সোমবার, ১ পৌষ, ১৪৩২ | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    লাইফস্টাইল

    শেকৃবিতে জুলাই আন্দোলনের এক বছরেও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বহাল

    এস.এম. নাহীদ হুসাইন, শেকৃবি প্রতিনিধি প্রকাশ: ৫ আগস্ট ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম
    এস.এম. নাহীদ হুসাইন, শেকৃবি প্রতিনিধি প্রকাশ: ৫ আগস্ট ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম

    শেকৃবিতে জুলাই আন্দোলনের এক বছরেও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বহাল

    এস.এম. নাহীদ হুসাইন, শেকৃবি প্রতিনিধি প্রকাশ: ৫ আগস্ট ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম

    জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী জড়িত থাকলেও এক বছর পরও হয়নি শনাক্তকরণ, তালিকা কিংবা কোনো প্রকার তদন্ত কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নেই কোনো উদ্যোগ, ক্ষিপ্ত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা।

    ২৪ জুলাই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস নিয়ে লাঠি, রাম দা, হকিস্টিকসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ক্যাম্পাসে কোটা বিরোধী একাধিক শিক্ষার্থীদের মারধর, হুমকি ও শিক্ষার্থীদের ওপর মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ থাকা শর্তেও কোনো বিচারিক উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সহযোগিতা প্রদান করা হয়নি নির্যাতিতদের। এমনকি বছর পার না হতেই আবাসিক হলে অবস্থান করছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তারা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপগুলোতে এডমিন হয়ে থেকে গুজব ছড়াচ্ছে এসব ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী।

    শিক্ষার্থীদের থেকে জানা যায়, গত বছরের ১৫ জুলাই রাতে ছাত্রলীগের হামলায় শারীরিক গুরুতর যখম হন শেকৃবির কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আকিমুল হাসান সাকিব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী। হামলার ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর কানের পর্দা ফেটে যায়, দীর্ঘদিনের জন্য হারান শ্রবণ শক্তি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, 'তারা আমাকে তাদের প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য বারবার ফোন দেয় কিন্তু আমি যাব না বলেই ফোন বন্ধ রাখি। পরবর্তীতে ১৫ তারিখের রাত ৩ টার দিকে তারা আমার রুমে ঢুকে আমাকে মারধর করে এবং "তুই কোটা না মেধা? কোটা না মেধা?" এটা বলে গালাগালি ও মারধর করে। আমার রুমমেট আদিল রাতেই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। এর পর আমি প্রায় ৩ মাস কানের সমস্যায় ভুগি, ক্যাম্পাসে এসে লিখিত অভিযোগ দেই। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সহযোগিতা পাইনি।'

    একই রাতে নবাব সিরাজুদ্দৌলা হলের শিক্ষার্থী সাকিল আহমেদের ওপরও মশারির রড ও স্টাম্প দিয়ে হামলা করা হয় এবং ওই রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলগুলোতে সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিভিন্ন রুমে অস্ত্রসহ তল্লাশি চালায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

    ১৯ জুলাই ক্যাম্পাস থেকে জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হলেও ক্যাম্পাসে অবস্থান করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে তারা অবস্থান নেয় কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে। এসময় হল ও কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অংশ নেয় এবং তা ঢালাওভাবে ফেসবুকে প্রচার করে তারা।

    ২৩ জুলাই আন্দোলনরত ২০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আওয়ামী প্রশাসন।

    শেকৃবির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেকৃবি শাখার আহ্বায়ক আসাদুল্লাহ বলেন, 'আমরা উপাচার্য স্যারকে বিষয়টি অনেকবার জানিয়েছি। স্যার আমাদের বলেছে ছাত্রলীগের দায়িত্ব কোনো স্যার নিতে চাচ্ছে না, এজন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। তদন্ত কমিটি গঠন না হওয়াতে মামলাও হচ্ছে না। ক্যাম্পাসের সকল ছাত্র সংগঠনগুলোকে একত্রে নিয়ে আমরা বসে একটা সিদ্ধান্ত নিব দ্রুতই।'

    বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবীর বলেন, 'প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে শেকৃবিতে ছাত্রলীগের বিচার হয়নি। অন্যান্য ক্যাম্পাসে প্রশাসন নিজে বাদী হয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। কিন্তু আমাদের ক্যাম্পাসে ঘটনা টা বিরল। একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী লাঠি নিয়ে শিক্ষার্থীকে মারতে গিয়েছে। কিন্তু বিচারের নামে প্রহসন আমরা লক্ষ্য করছি। বিচারে নাম থাকার পরেও নাম বাদ যায় আমাদের ক্যাম্পাসে। আমরা প্রশাসনকে বারবার বলেছি তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে। কিন্তু তারা টালবাহানা করছে, আজও কোনো উদ্যোগ নেয়নি।'

    ছাত্রশিবিরের শেকৃবি শাখার সভাপতি আবুল হাসান বলেন, 'জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও ন্যায্য বিচার এখনো অধরাই থেকে গেছে। হামলা ও মামলাকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি। যদিও কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঘিরে তদন্ত কমিটি হয়েছে, তবে বিচার কার্যক্রম ছিল অত্যন্ত দুর্বল ও অসম্পূর্ণ। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা এখনো ক্যাম্পাসের আশপাশে অবস্থান করছে এবং প্রশাসনের নীরবতা তাদেরকে আরও সাহসী করে তুলছে। আমরা দাবি করছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন অবিলম্বে একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটির মাধ্যমে হামলা, মামলা, হুমকি ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এটাই হবে আগামী প্রজন্মকে নিরাপদ ও সুষ্ঠু শিক্ষাজীবন উপহার দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ।'

    বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রফেসর ড. আশাবুল হক বলেন, 'আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ না আসায় এ বিষয়ে সম্পর্কে আমি অবগত নই।'

    বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আরফান আলী বলেন, 'এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ প্রশাসনের কাছে আসে নাই। অভিযোগ আসলে আমরা অবশ্যই বিষয়টা নিয়ে কাজ করব।'

    বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ বলেন, 'সবকিছু নিয়ে আমরা অবগত আছি এবং এ বিষয়ে একটা কমিটি রয়েছে। প্রতিবেদন আসলে দ্রুতই আমরা বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব।'

    উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজ থেকে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয় হলে অবস্থানকারী কিছু ছাত্রলীগ কর্মীকে শিক্ষার্থীরা মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দৃশ্যমান হয়নি।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…