রাতে ঘর অন্ধকার করে শোয়ার অভ্যাস অনেকেরই। আলো নিভিয়ে না ঘুমলে অনেকেরই ঘুম আসতে চায় না। কেউ আবার একেবারে অন্ধকার করে না শুয়ে ঘরে একটি নীল বা সবুজ রঙের মৃদু বাতি জ্বালিয়ে রাখেন। ঘুমানোর সময় আলো জ্বালিয়ে রাখলে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে? এই আলো শুধু ঘরের আলোর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং টিভি বা ল্যাপটপের আলোও আমাদের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আলো জ্বালিয়ে ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না ক্ষতির-তা অনেকেই জানেন না।
একটি গবেষণা বলছে, সারা রাত এই রকমের আলোয় ঘুমালে শরীরে তার প্রভাব পড়তে পারে। শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা শরীরে এই ধরনের আলোর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁদের মতে, রাতে বিভিন্ন রঙের আলোর নীচে ঘুমালে শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। বিপাক ক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। এমনকি হৃদ্রোগ, ডায়াবিটিসের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে হৃদ্স্পন্দনের মাত্রাও।
রাতে আলো জ্বেলে ঘুমালে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। গবেষকরা প্রায় ২০ জন ব্যক্তির উপর এই গবেষণাটি চালান। তার মধ্যে প্রায় ১০ জনের রাতে মৃদু আলো জ্বালিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস রয়েছে এবং তাঁদের মধ্যে অনেকেই ডায়াবিটিস, হৃদ্রোগের মতো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার শিকার।
২০২২ সালের একটি সমীক্ষা করা হয়, সেখানে আলো জ্বালিয়ে ঘুমিয়েছেন কিছু সংখ্যক মানুষ আবার কিছু সংখ্যক মানুষ অন্ধকার করে ঘুমিয়েছেন। যারা আলো জ্বালিয়ে ঘুমিয়েছেন, তাদের বিপাক এবং হার্টের উপর প্রভাব পড়েছে বেশি।
ঘুমের বেঘাত: রাতে আলো জ্বালিয়ে ঘুমানোর ফলে ঘুমের মধ্যেও স্নায়ু অধিক সক্রিয় হয়ে থাকে। ফলে শান্ত মস্তিষ্কে ঘুম হয় না। ভিতরে ভিতরে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাই চিকিৎসকরা বলছেন, সুস্থ থাকতে রাতে অন্ধকার ঘরে ঘুমানোই ভালো। যদি একান্তই অন্ধকার ঘরে ঘুমাতে না ইচ্ছে করে, তবে একটি হলুদ রঙের আলো জ্বালিয়ে রাখতে পারেন।
স্থূলতার শিকার: নারীদের ওপর একটি গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে যারা টিভি বা লাইট জ্বালিয়ে ঘুমায়, তাদের স্থূলতার ঝুঁকি বেশি থাকে।
ডিপ্রেশন হতে পারে: রাতে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমালে ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। শুধু তাই নয়, ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নির্গত নীল আলো আপনার মেজাজের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। আলো ঘুমের অভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা মেজাজের পরিবর্তন এবং বিরক্তির কারণ হতে পারে।
হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাবে: আলো বডি ক্লক কাজ করতে বাধা দেয়, যা বায়োমেকানিকাল পরিবর্তন ঘটায়। যার কারণে দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। আপনি যদি আলো ছাড়া ঘুমাতে না পারেন, তবে সাধারণ আলোর পরিবর্তে একটি লাল বাল্ব জ্বালিয়ে রাখতে পারেন। আসলে লাল বাল্বগুলো মেলাটোনিন উত্পাদনে অন্যান্য রঙিন বাল্বের মতো ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে না।
তাই সুস্থ্য থাকতে হলে রাতে আলো জ্বালিয়ে না ঘুমানোই ভালো।
এইচএ