কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অজয় কুমারের নিয়মিত অনুপস্থিতি এলাকায় সেবা প্রার্থীদের জন্য বিরাট সমস্যা হিসেবে পরিণত হয়েছে। সরকারি নির্দেশনার আলোকে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের কর্তব্য হলো প্রতিদিন অফিসে উপস্থিত থেকে নাগরিকদের বিভিন্ন সেবা প্রদান করা। কিন্তু বাস্তবে তিনি সপ্তাহে মাত্র তিন দিন অফিসে এসে দায়িত্ব পালন করেন, বাকি দুই দিন অফিস ফাঁকা থাকে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই কারণে সেবা নিতে আসা গ্রামীণ মানুষদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, অনেকে নিরাশ হয়ে ফিরে যান। জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, ভাতা ফরমসহ নানা জরুরি কাজে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া সচিবের অনুপস্থিতিতে সেবা দিতে থাকা কর্মকর্তারাও নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদে এসে প্রশাসনিক সেবা গ্রহণের জন্য যায়, কিন্তু অফিস খোলা না থাকায় তাদের সময় ও অর্থের অপচয় হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সামাজিক ও আর্থিক সমস্যাও বাড়ছে।
গত ১০ আগস্ট সোমবার সরেজমিনে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা গেছে, সচিবের দপ্তরে তালা ঝুলছে। স্থানীয়দের দাবি, সচিব প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বুধবার অফিসে থাকেন না, অথচ ওই দিনগুলোতেও অনেক মানুষ দূরদূরান্ত থেকে এসে জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ ও ভাতার ফরমের জন্য এসে ফিরে যাচ্ছেন।
ঈদগড় বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের পাহাড়ি এলাকা থেকে আসা নুরুল আমিন বলেন, ‘দুইবার এসেছি, দুইবারই অফিস বন্ধ পেয়েছি। আমাদের অনেক কষ্ট করে আসতে হয়, তবুও কাজ হয় না।’
শামসুল আলম নামের এক বয়স্ক সেবা প্রার্থী বলেন, ‘বয়স হয়েছে, হেঁটে আসতে কষ্ট হয়। একদিন এলাম, কাজ হয়নি; আরেকদিন এলাম, তখনও দরজায় তালা। আমাদের কষ্ট কেউ বোঝে না।’
হাসিনা বেগম নামের এক গৃহিণী বলেন, ‘আমি ছেলের জন্মনিবন্ধন করতে এসেছিলাম। সচিব ছিলেন না, উদ্যোক্তাও কিছু করতে পারেননি। আবার আসতে হবে, এতে সময় ও খরচ- দুটোই নষ্ট।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অজয় কুমার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নিয়মিত অনুপস্থিত থাকেন। শুধু তাই নয়, জন্মনিবন্ধন ও অন্যান্য নথিপত্রের অনুমোদনের কাজ উদ্যোক্তা থাকা সত্ত্বেও তিনি চকরিয়া থেকে করিয়ে আনেন। এতে সময় ও খরচ- দুটোই বেশি হচ্ছে।
সমাজসেবক বনী আমিন বলেন, ‘সচিব অনেক সময় চকরিয়া থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ এনে দেন। এতে সেবা নিতে আসা মানুষকে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়।’
ঈদগড় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এডভোকেট শহিদুল্লাহ কায়সার অভিযোগ করেন, তাঁর বড় ভাই জন্মনিবন্ধনের বয়স সংশোধন করতে গেলে সচিব প্রথমে অসম্ভব বলেন। পরে অন্য মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা দিলে সংশোধন করে দেওয়ার কথা জানান।
মো. মুবিন নামের আরেক বাসিন্দা জানান, সচিব সপ্তাহে দুই দিনও পুরো সময় থাকেন না। অফিসের নির্ধারিত সময় ১২টা থেকে ৪টা হলেও তিনি অনেক সময় দেরিতে আসেন। জন্মনিবন্ধনের ইংরেজি কপির জন্য আগে ১০০ টাকা লাগত, এখন তিনি ১৫০ টাকা নেন।
ছাত্র নেতা তোহা বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে উদ্যোক্তা থাকা সত্ত্বেও সচিব জন্মনিবন্ধনের কাজ চকরিয়া থেকে করান এবং অতিরিক্ত টাকাও নেন।’
এলাকাবাসীর দাবি, ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে কোনো তথ্য হালনাগাদ নেই, সেবার মানও সন্তোষজনক নয়।
এ বিষয়ে সচিব অজয় কুমার বলেন, ‘টাকার বিষয়ে আমার জানা নেই। সপ্তাহে দুই দিন অনুপস্থিত থাকার কারণ, অন্যান্য কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়।’
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘সচিবের অনুপস্থিতি সম্পর্কে আমি জানি না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসআর