এইমাত্র
  • ‘নিরাপত্তা’র কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপি প্রার্থী
  • রেকর্ড দামে কলকাতায় ক্যামেরন গ্রিন
  • মহান মুক্তিযুদ্ধের নায়ক থেকে রূপালি পর্দায়
  • ‘ফিফা দ্য বেস্ট’ ঘোষণা আজ, যারা আছেন আলোচনায়
  • মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
  • দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তার হবেন অজুর্না রানাতুঙ্গা
  • লন্ডনে তারেক রহমানের শেষ কর্মসূচি আজ
  • মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা ইতিহাসের ৯০ ভাগই মিথ্যা: আমির হামজা
  • ৭১ ও ২৪-এর দালালদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছি: নাহিদ ইসলাম
  • ভারতের আতিথেয়তায় মুগ্ধ মেসি
  • আজ মঙ্গলবার, ২ পৌষ, ১৪৩২ | ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
    ধর্ম ও জীবন

    নবীজি (সা.) যেভাবে উদযাপন করেছিলেন বিজয়

    ধর্ম ও জীবন ডেস্ক প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫২ এএম
    ধর্ম ও জীবন ডেস্ক প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫২ এএম

    নবীজি (সা.) যেভাবে উদযাপন করেছিলেন বিজয়

    ধর্ম ও জীবন ডেস্ক প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫২ এএম
    ছবি: সংগৃহীত

    কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা ও আল্লাহর সাহায্যে আনন্দ প্রকাশের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। ইসলামের ইতিহাসে বদর, খন্দক, তাবুক, হুদায়বিয়ার সন্ধি, মক্কা বিজয়ের পর মুজাহিদরা যখন ফিরে আসতেন, তখন মানুষের চোখে গর্বের চেয়ে আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা বেশি ঝিলিক দিত। পুরুষরা মসজিদের দিকে ছুটে যেত, কেউ সিজদায় লুটিয়ে পড়ত, কেউ কোরআন তিলাওয়াত করত। দূর থেকে ভেসে আসত নাত, হামদ ও তাকবিরের সুর, যেন আকাশও বিজয়ের ঘোষণা উচ্চারণে জমিনের মানুষের সঙ্গে এক সুরে মিলিত হয়েছে।

    নবীজির মদিনায় হিজরত এবং ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর দ্বিতীয় হিজরিতে (৬২৪ খ্রিস্টাব্দ) সংঘটিত ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ ছিল মুসলিমদের প্রথম সামরিক বিজয়, যা মুসলমানরা দুর্বল অবস্থায় থাকার পরও অর্জিত হয়। কোরআনে এই বিজয়ের কারণ হিসেবে আল্লাহর সাহায্যের কথাই বেশি গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। সুরা আলে ইমরানের ১২৩ থেকে ১২৬ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের প্রতি তাঁর সাহায্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। বিজয়ের মূল কারণ হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফেরেশতাদের সাহায্যকেই চিহ্নিত করেন, মানুষের শক্তিকে নয়।

    বদরের যুদ্ধ শেষে নবীজি (সা.) মদিনাবাসীর কাছে এই বিশাল বিজয়ের সুসংবাদ পৌঁছাতে লোক পাঠান। মদিনাবাসী দফ বাজিয়ে ও আনন্দ-সংগীত গেয়ে নবীজি (সা.) ও বদরের বীরদের অভিনন্দন জানায়।

    ইতিহাসবিদ মাকরিজি বলেন, ‘জায়েদ ইবনে হারেসা এবং আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) নবীজির বার্তা নিয়ে মদিনায় আসেন। ঠিক দুপুরের কাছাকাছি সময়ে আবদুল্লাহ উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করেন, “হে আনসারগণ! সুসংবাদ গ্রহণ করুন! রাসুল (সা.) নিরাপদে আছেন এবং মুশরিকরা নিহত ও বন্দি হয়েছে।” পরে আনসারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি সুসংবাদ পৌঁছে দেন। জায়েদ ইবনে হারেসা (রা.) রাসুলের উষ্ট্রী ‘কাসওয়া’তে চড়ে এসে মদিনাবাসীকে সুসংবাদ দেন। কিন্তু মুনাফিকরা তা বিশ্বাস করেনি, উল্টো নিন্দামন্দ শুরু করেছিল।’

    মাকরিজি আরও বলেন, ‘নবীজির (সা.) আগমনের সময় শিশু-কিশোর ও নারীরা দফ (বাদ্যযন্ত্র) বাজিয়ে আনন্দ-সংগীত গাইছিল। সবার মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল, ‘তালাআল বাদরু আলাইনা...।’ নবীজীবনের শেষ যুদ্ধ তাবুকের পরেও এই আনন্দময় দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হয়েছিল।

    মক্কা বিজয় ছিল ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিজয়, যা সুরা নাসরে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে... তখন আপনি আপনার রবের প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন; নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী।’ (সুরা নাসর: ১-৩)

    মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কায় প্রবেশ করেন বিনয়ের সঙ্গে, মাথা ঝুঁকিয়ে, কোনো গর্ব বা অহংকার প্রকাশ না করে। ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রতিশোধ না নিয়ে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।

    কোরআন মাজিদ শুধু সামরিক সাফল্যকেই ‘বিজয়’ হিসেবে গণ্য করেনি; রাজনৈতিক ও আদর্শিক সাফল্যকেও বিজয়ের মর্যাদা দিয়েছে। ৬ষ্ঠ হিজরিতে সংঘটিত হোদায়বিয়ার চুক্তি মুসলমানদের জন্য কম ও মুশরিকদের জন্য বেশি সুবিধাজনক মনে হলেও কোরআন একে ‘ফাতহুম মুবিন’ বা ‘সুস্পষ্ট বিজয়’ বলে ঘোষণা করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দান করেছি সুস্পষ্ট বিজয়।’ (সুরা ফাতহ: ১)

    এ ছাড়া কোরআন মাজিদ মুসলমানদের আধ্যাত্মিক ও আদর্শিক সংহতির কারণে অন্য সত্যপন্থীদের বিজয়েও আনন্দ প্রকাশকে উৎসাহিত করেছে। অগ্নি-উপাসক পৌত্তলিক পারসিকদের বিরুদ্ধে রোমান খ্রিষ্টানদের বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং সেদিন মুমিনগণ আল্লাহর সাহায্যে আনন্দিত হবে।’ (সুরা রুম: ৪-৫)

    এই আনন্দ ছিল আদর্শিক কারণে। রোমানরা যখন পারসিকদের কাছে পরাজিত হয়, তখন মুসলমানরা তখন মক্কায় দুর্বল ছিল। মক্কার মুশরিকরা আদর্শিক মিল থাকায় পারসিকদের বিজয়ে আনন্দিত হয়েছিল আর মুসলমানরা দুঃখিত হয়েছিল। তখন কোরআনে রোমানদের বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রোমকরা নিকটবর্তী দেশে পরাজিত হয়েছে এবং তারা তাদের পরাজয়ের পর অনতিবিলম্বে বিজয়ী হবে; কয়েক বছরের মধ্যেই। পূর্বের ও পরের সকল ক্ষমতা আল্লাহরই। আর সেদিন মুমিনরা আল্লাহর সাহায্যে আনন্দিত হবে।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২-৩)

    এই প্রসঙ্গে ইমাম জাহাবি তার ‘তারিখুল ইসলাম’ গ্রন্থে বলেন, ‘রোম ও পারস্যের মধ্যে একটি বিশাল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যেখানে আল্লাহ রোমকে সাহায্য করেছিলেন। ফলে মুসলমানরা এতে আনন্দিত হয়েছিল, কারণ এর মাধ্যমে আহলে কিতাবরা অগ্নি-উপাসকদের ওপর বিজয়ী হয়েছিল।’

    জন্মভূমির প্রতি অনুরাগ ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক ও প্রশংসনীয়। নবীজি (সা.) আল্লাহর নির্দেশে মদিনায় হিজরত করলেও তার হৃদয় মক্কার জন্য ব্যাকুল ছিল। কোরআন ও হাদিসে এই ভালোবাসার প্রমাণ মেলে। নবীজি (সা.) তার জন্মভূমি মক্কাকে কতটা ভালোবাসতেন, তা হিজরতের সময় তার আবেগপূর্ণ বিদায়ের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আবদুল্লাহ ইবনে আদি ইবনে হামরাহ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহকে (সা.) আমি মক্কার একটি ক্ষুদ্র টিলার ওপর দণ্ডায়মান দেখলাম। তিনি বললেন, “আল্লাহর কসম! তুমি নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার সব ভূমির মধ্যে সর্বোত্তম এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তুমিই সবচেয়ে প্রিয় ভূমি। আমাকে যদি তোমার বুক থেকে (জোরপূর্বক) বিতাড়িত না করা হতো, তবে আমি কখনো (তোমাকে ছেড়ে) চলে যেতাম না।”’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৯২৫)

    কোরাইশের মুশরিকরা নবীজির (সা.) মক্কায় বসবাস অসম্ভব করে তুলেছিল। মাত্র কয়েক বছর পর তিনি সেই মাতৃভূমিতে বিজয়ী হিসেবে ফিরে আসেন। সেদিন তিনি কাবাঘরে প্রবেশ করে দীর্ঘক্ষণ সিজদায় পড়ে থাকেন এবং নফল নামাজ আদায় করেন। (সহিহ বুখারি: ২৯৮৮)

    নবীজি (সা.) এভাবেই বিজয় উদযাপন করেন। তবে এ সময় নবীজি (সা.) ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোনো প্রতিশোধ নেননি; বরং সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি সমবেত মক্কাবাসীদের জিজ্ঞেস করেন যে, তারা তার কাছে কেমন ব্যবহার প্রত্যাশা করে। তারা যখন উদার আচরণ প্রত্যাশা করে বলে জানায়, তখন তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি আজ তোমাদের সবার জন্য আমার ভাই ইউসুফের (আ.) মতো সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলাম। যাও, তোমরা সবাই মুক্ত। তোমাদের প্রতি আজ কোনো অভিযোগ নেই। তোমাদের থেকে কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবে না।’ (ফাতহুল বারী: ৭/৬১১)

    এইচএ

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…