চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ‘ছোট সাজ্জাদ’কে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি মার্কেট থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার (১৫ মার্চ) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি বিশেষ টিম এই অভিযান চালায়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) এডিসি মো. জাহাঙ্গির সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা সাজ্জাদ সম্প্রতি রাজধানীতে অবস্থান করছিলেন। শনিবার দুপুরে বউকে নিয়ে বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে গেলে ডিবি পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে শনাক্ত করে। এরপর পরিকল্পিত অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তাকে চট্টগ্রামে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের বায়েজিদ, অক্সিজেন ও চান্দগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি, অস্ত্র প্রদর্শন, হত্যা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলেন।
পুলিশি সূত্র জানায়, তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ থানায় হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ১০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। একসময় চট্টগ্রামের অপরাধ জগতে ভয়ংকর এক নাম হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
বিশেষ করে ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া এলাকায় এক চায়ের দোকানে বসে থাকা তাহসিন নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ছোট সাজ্জাদের নাম সামনে আসে। পুলিশ তাকে ওই মামলার প্রধান আসামি করে। এছাড়া, প্রায় দুই দশক আগে শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়কে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বহনকারী একটি মাইক্রোবাসে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে আটজনকে হত্যার ঘটনায়ও তার সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে জানা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে আত্মগোপনে থাকাকালীন ছোট সাজ্জাদ ফেসবুক লাইভে এসে প্রকাশ্যে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফ হোসেনকে মারধরের হুমকি দেন। ১৯ মিনিটের সেই বিতর্কিত লাইভে তিনি বলেন, “ওসি আরিফ যদি পুলিশ না হতেন, তাহলে রাস্তায় ন্যাংটো করে পেটাতাম।”
তার এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দ্রুত তার অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেন। ওসি আরিফ এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন, যার ভিত্তিতে পুলিশের পক্ষ থেকে সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাজ্জাদ দীর্ঘদিন ধরে গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করছিলেন। তবে প্রযুক্তিগত নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়।
সিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, “অপরাধীরা যত শক্তিশালীই হোক, তারা আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না। ‘ছোট সাজ্জাদ’ চট্টগ্রামের অপরাধ জগতে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছিল। তার গ্রেপ্তার সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির খবর।
এনআই