এইমাত্র
  • তিনবার আত্মহত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন সালমান, দাবি স্ত্রী সামিরার
  • অর্থাভাবে বন্ধ সোহম চক্রবর্তী-ইধিকা পালের 'বহুরূপ'
  • জাবি ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুতে সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে নিয়ে অপপ্রচার
  • রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের এমডির নিয়োগ বাতিল
  • চট্টগ্রামের এমপি মিতাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক
  • মার্টিনের ঢাকা সফর শেষ, ২৩০ কোটি ডলার সহায়তা নিয়ে আলোচনা
  • তমা মির্জাকে ছেড়ে তানজিন তিশায় মজলেন রায়হান রাফী?
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন পরিচালক ফাহমিদা খাতুন
  • যাদের হাতে রক্ত তারা ক্লাসে বসার সুযোগ পেতে পারে না
  • মব জাস্টিস গ্রহণযোগ্য নয়, কোনো সমাধানও আনবে না: নাহিদ
  • আজ শুক্রবার, ৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    ঘোষণা দিয়ে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ, পুলিশ বলছে প্রেম

    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫ পিএম
    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫ পিএম

    ঘোষণা দিয়ে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ, পুলিশ বলছে প্রেম

    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫ পিএম

    স্কুল শিক্ষার্থী হিন্দু ধর্মাবলম্বী কিশোরীর (১৭) সাথে ৩৫ বছর বয়সি বিবাহিত মুসলিম যুবকের অসম প্রেম। সেই প্রেমের সম্পর্কের জেরে যুবক কর্তৃক কিশোরীকে তুলে নিয়ে বিয়ে করার ঘোষণা এবং শেষ পর্যন্ত ভাগিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

    বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নে দক্ষিণ অন্তপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে অভিযুক্ত যুবক, তার ভাই ও বোনের বিরুদ্ধে ‘অপহরণের’ অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ফুলবাড়ী থানায় মামলা করেছেন।

    অভিযুক্ত যুবকের নাম আলিনুর রহমান (৩৫)। তিনি কাশিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ অন্তপুর গ্রামের আব্দুল হালিমের ছেলে। ভুক্তভোগী কিশোরী একই গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

    মামলার এজাহারে কিশোরীর বাবা উল্লেখ করেছেন, আসামি আলিনুর তার দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে স্কুল যাওয়ার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিতেন। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখানো সহ নানা ভাবে উত্তক্ত করতেন। বিষয়টি কিশোরী তার পরিবারকে জানালে এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক করে অভিযুক্ত আলীনুরকে সতর্ক করে এসব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। এ নিয়ে আলিনুর ও তার পরিবারের লোকজন কিশোরীর পরিবারের উপর ক্ষিপ্ত হয়।

    পুলিশ ও স্থানীয়রা বলেন, দক্ষিণ অনন্তপুর গ্রামে ৩০টি হিন্দু পরিবার বসবাস করছে। আসামীরা ওই কিশোরীর বাড়ীর সামনে গত ২ সেপ্টেম্বর হতে ৩ সেপ্টেম্বর সকালের জাম গাছে চিঠি টাঙিয়ে দেয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় ‘এই বাড়ির মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে এবং মুসলমান বানানো হব।’ এ ঘটনায় ৪ সেপ্টেম্বর রনজিত চন্দ্র সেন ফুলবাড়ী থানায় একটি সাধারন ডায়রি (জিডি) করেন।

    এই পরিস্থিতিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকালে ওই কিশোরী বাড়ী থেকে কোচিং করা জন্য গেলে আলিনুরসহ অন্য আসামিদের সহায়তায় ওই কিশোরীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বুধবার রাতে আসামি আলিনুরের বাড়িতে গিয়ে মেয়ের খোঁজ করে তাকে ফেরত চাইলে পরিবারের লোকজন কিশোরীর বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ঘটনার অনুসন্ধানে যা জানা গেল:

    কিশোরী ‘অপহরণ’ হওয়ার খবরে নড়েচরে বসে থানা পুলিশ

    পুলিশ ঘটনাস্থলে উভয় পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আলিনুরের বাড়ি থেকে কিশোরীর বাড়ির দূরত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার। আলিনুরের বাড়ির পথ ধরেই প্রতিদিন স্কুলে যায় ওই কিশোরী। এই সুযোগে আলিনুর তাকে ফুসলিয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। বয়স ও ধর্মের বিবেচনায় অসম এই প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ হলে কিশোরীর পরিবারের অনুরোধে সালিশ বৈঠক হয়।

    ৬ মাস আগে হওয়া সেই সালিশে আলিনুরকে সতর্ক করে দেন স্থানীয় মাতবররা। কিছুদিন সংযত থাকেন আলিনুর। সালিশ হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আলিনুরকে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেওয়া হয়। মাস ঘুরতে না ঘুরতে সেই সংসার ভেঙে যায়। পরিবার সতর্ক থাকায় আলিনুর ও কিশোরী কৌশলে পরস্পর যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। যদিও আলিনুরের পরিবারের দাবি, কিশোরীর অব্যাহত চাপে স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন আলিনুর।

    এমন দাবি করে আলিনুরের মা আনোয়ারা বলেন, ‘প্রেমের সম্পর্ক প্রকাশ হলে সালিশ হয়। এরপর তাকে আমরা বিয়ে দেই। দুই মাসেও সংসার টেকেনি। কিন্তু ওই হিন্দু মেয়ের সাথে আমার ছেলের আবারও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।

    স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস ছালেক বলেন, ‘ দেড় মাস আগে সালিশ করে ছেলেকে শাসন করা হয়েছিল। এরপর বুধবার বিকালে মেয়েকে নিয়ে চলে যায়।’

    স্থানীয়রা যা বলছেন, আলিনুরের সাথে কিশোরীর প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি স্থানীয়দেরও জানা। তবে বয়সের দূরত্ব ও ধর্মীয় পার্থক্যের কারণে তাতে কারও সমর্থন ছিল না।

    কিশোরীকে তুলে নিয়ে মুসলিম করার ঘোষণা:

    চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কিশোরীর বাড়ির সামনে একটি জাম গাছে কাগজে লেখা একটি ঘোষণাপত্র সাঁটানো দেখতে পান স্থানীয়রা। তাতে লেখা ছিল ‘ ৭ দিনের মধ্যে এই বাড়ির মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে, মেয়েকে মুসলমান করা হবে’। এ ঘটনায় আতঙ্ক প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দা রজিত চন্দ্র অজ্ঞাত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।

    তবে ওই জিডি নিয়ে তেমন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। ভুক্তভোগী কিশোরী সহ স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি, পুলিশ ওই জিডির বিষয় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হতো না

    ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বলেন, গাছে হুমকির চিঠি দেখে আমরা আতংকিত হয়ে পড়েছিলাম। হুমকিদাতা তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলো। মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। মামলা করেছি। আমার মেয়েকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত চাই।’

    এফিডেভিট করে ধর্মান্তরিত হয়েছেন কিশোরী:

    এদিকে গত ১২ সেপ্টেম্বর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে ওই কিশোরী ধর্মান্তরিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এফিডেভিটটির একটি কপি এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে নতুন নাম রেখেছেন সাজেদা খাতুন। এফিডেভিটে স্বাক্ষরকারী কুড়িগ্রামের আইনজীবী সোহেল রানা বাবুর সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

    বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার সভাপতি সুনীল চন্দ্র রায় বলেন, আমার সংগঠন সাধারণ বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের কাছে ওই যুবকের সাথে কিশোরীর প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানাতে পারে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশও হয়েছিল। তবে মেয়ের পরিবার প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। পরিবারের নিষেধ থাকার পরও অপ্রাপ্তবয়স্ক স্কুল ছাত্রীকে এভাবে নিয়ে যাওয়া আইনসম্মত হয়নি। আমি আইনি বিহিত দাবি করছি।’

    ফুলবাড়ী থানার অফিসার (ওসি) নওয়াবুর রহমান জানান, প্রাথমিক তদন্তে উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের বিষয় জানতে পারি। মেয়ের বাবার এজাহারের ভিত্তিতে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। আসামি গ্রেফতারসহ কিশোরীকে উদ্ধারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…