বাংলাদেশের ৫৩ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই রকমের রাজনৈতিক ঐকমত্য এর আগে দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশ্নে যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, তা এক নতুন দৃষ্টান্ত।”
সোমবার সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নুর এসব কথা বলেন।
নুর বলেন, “অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারকে নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে বলে আমরা আশাবাদী। যদিও চার মাসে কিছুটা হোঁচট খেয়েছে, আমরা হতাশ নই। আশা করি, সরকার জনআকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথ সুগম করবে।”
তিনি আরও বলেন, “চার মাসের মধ্যে কোনো সরকারের মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়, বিশেষ করে এমন একটি পরিস্থিতিতে যেখানে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে মসজিদের ইমাম পর্যন্ত পালিয়ে গেছে। এমন ভঙ্গুর রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে সময়ের প্রয়োজন।”
এবারের বিজয় দিবস সম্পর্কে নুর বলেন, “২০২৪ সালের বিজয় দিবস আমাদের জন্য বিশেষ। কারণ গত দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে মুক্তির পর এবার সবাই আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দিবসটি উদযাপন করছে। অতীতে শহিদ মিনার বা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে, যা এ বছর দেখা যায়নি।”
ভিপি নুর বলেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন। কিন্তু ৫৩ বছর পরও সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। বরং তরুণ প্রজন্মকে এখনো বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হচ্ছে। এ থেকে স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রের গভীর সংস্কার দরকার। জনগণের এই চাহিদা পূরণ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।”
নুর বলেন, “আমাদের অস্তিত্বের জায়গা হলো মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করতে হলে ১৯৭১-এর চেতনা মেনে চলতে হবে। তবে আমি মনে করি, এখন স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বলে আর কিছু নেই। দেশে যারা আছে, তারা সবাই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। বিভাজন ও ট্যাগ দেওয়ার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।”
নুর তার বক্তব্যে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ ভবিষ্যৎ কামনা করেন। তিনি বলেন, “জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ সফল হলে ৫৩ বছরের অপূর্ণতা দূর হবে, এবং আমরা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার একটি বাস্তবায়িত বাংলাদেশ পাবো।”
এসএফ