বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্য তেল ফসল সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে ভোরে উঠছে চারিদিক। সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মেহেরপুরে বৃদ্ধি পেয়েছে সরিষার চাষ। আগেকার দিনে মানুষ প্রতিটা তরকারিতেই ব্যবহার করতো খাঁটি সরিষার তেল। দিন দিন খাদ্য তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন তেলের নাম। এজন্যই কমতে শুরু করেছিল সরিষা চাষ। কিন্তু যেভাবে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে কিনে খাওয়া হয়ে যাচ্ছে দুষ্কর। সেজন্য আবারও বেছে নিয়েছে চাষিরা সরিষা চাষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে জেলা সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ সরিষা ফুল। অনুকূল আবহাওয়া আর সঠিক পরিচর্যায় ভরে উঠছে ফুলের সমারোহে। ফুলের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে মধু সংগ্রহে আসছে মৌমাছির দল।
চাঁদপুর গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার সরিষা চাষ করেছি। অনেকদিন সরিষা বোপণ থেকে বিরত ছিলাম তখন তেলের দাম ছিল অনেক কম। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই আবার শুরু করেছি সরিষা চাষ।
কাজিপুর গ্রামের সরিষা চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, তেলের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে তেল কিনতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠতে হচ্ছে। আর এ জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে সরিষার চাষ করব।
ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান জানান, সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় মানুষ সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে চাষিরা চলতি বছরও দাম ভালো পাবে। বর্তমানে সাদা সরিষার বাজার দর ৩৪শত-৩৫শত টাকা। আর লাল সরিষা ৩১শত-৩২শত টাকা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে চলতি বছরে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৯৭৩ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চলতি মৌসুমে জেলায় এবার ৭ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১শ' ৭২ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে সরিষার চাষ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও দাম ভালো থাকলে কৃষকরা লাভবান হবে। কৃষকদের বলা হচ্ছে আবাদি কোন জমি যেন পড়ে না থাকে। সকল জমি আবাদের আওতায় আনার জন্য কৃষি অফিস সবসময় চাষিদের সাথে যোগাযোগ করছে।
তিনি আরও বলেন, সরিষা থেকে তেল, গবাদি পশুর খাবার হিসেবে খৈল হয়। এছাড়াও সবুজ পাতা শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সরিষা অনেক সুন্দর হয়েছে আশা করি ভালো ফলন ও দাম ভালো থাকলে লাভ হবে। এবার মাঠে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরিষা চাষ হয়েছে। প্রত্যেক চাষিদের উচিত খাদ্যশস্য সহ যে সকল দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায় সেগুলো উৎপাদন করা।
এআই