পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মাদ্রাসার জমি লিজের টাকা নিজের কাছে রাখার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। অভিযোগের তীর চিলাহাটি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদের দিকে।
সম্প্রতি শেখবাঁধা রেয়াজিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার সাইফুল ইসলামের বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা ইউএনও'র নিকট অভিযোগ করলে তিনি মাদ্রাসা পরিদর্শনে যান। সরেজমিন পরিদর্শন শেষে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে ও প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ইউএনও মাহমুদুল হাসানের নির্দেশে গত ০৩ ডিসেম্বর শিক্ষক ও ছাত্রদের সমন্বয়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট জরিপ কমিটি গঠন করা হয়।
জরিপ কমিটির প্রতিবেদনে জমি লিজের টাকা অগ্রীম গ্রহণের বিষয়টি উঠে আসে। এরই মধ্যে মাদ্রাসার প্রায় ৪৯ বিঘা আবাদি জমি থেকে ২০২৫ সালের জন্য ৪ লাখ টাকা অগ্রীম আদায় করা হয়।
এর আগে গত ১৯ নভেম্বর চিলাহাটি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদের বাসায় সুপারসহ লিজ গ্রহীতাদের নিয়ে মিটিং হয়। সেখানে সুপার ও চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে লিজের অগ্রীম টাকা আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইউনিয়ন বিএনপি'রসহ সম্পাদক মোস্তফাকে।
লিজ গ্রহীতা আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, আমি ৩ বিঘা ৮ শতক জমি লিজ নিয়েছি। চেয়ারম্যানের বাসায় আমাদের সকলকে ডাকা হয়। সেখানকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছরের জন্য ২০ হাজার টাকা মোস্তফাকে দেই। ফজলার রহমান বলেন, আমি ২ বিঘা ২৫ শতক জমির জন্য আগামী বছরের লিজের জন্য অগ্রীম ৩০ হাজার টাকা মোস্তফাকে দেই। তার আগে আকরামকে দেই ১০ হাজার টাকা।
আব্দুস সালাম নামে অপর লিজ গ্রহীতা বলেন, ৩ বিঘা জমির আগামী বছরের লিজের জন্য মোস্তফাকে ৫০ হাজার টাকা দেই। লিজ গ্রহীতা শ্রী লক্ষ্মী বলেন, ৩ বিঘা ২৪ শতক জমির জন্য ৩২ হাজার ৫০০ টাকা অগ্রীম দিয়েছি মোস্তফাকে। জুয়েল ৬ বিঘা ১৩ শতক জমির জন্য মোস্তফাকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে জানান।
টাকা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে মোস্তফা বলেন, আগ্রীম যে টাকা নেওয়া হয়েছে তা চেয়ারম্যানের কাছে জমা আছে। পুরো টাকা উত্তোলনের পর ব্যাংকে জমা দেওয়া হবে।
তবে সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, কে লিজ দিল কে টাকা নিল এগুলো আমি জানি না। আমি শুধু জমির হিসাব আর আধিয়ারদের তালিকা দিয়েছিলাম। আর চেয়ারম্যানের কাছে টাকা জমা থাকলে অবশ্যই দিবে।
মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে একজন চেয়ারম্যান হস্তক্ষেপ করতে পারেন কিনা তা নিয়ে সচেতন মহলে চলছে নানান আলোচনা। স্থানীয়দের দাবি, চেয়ারম্যান ইউনিয়ন বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এভাবে লিজ গ্রহীতাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে মিটিং করে মাদ্রাসার ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা দিতে না বলে কোন ব্যক্তিকে টাকা দিতে বলাটা ঠিক করেননি।
জরিপ কমিটির সদস্য ও সহকারী শিক্ষক রুহুল আমীন বলেন, হারুন চেয়ারম্যানের বাসায় মিটিং করে জমি লীজ দেয়া হয়েছে এবং ২০২৪-২৫ ইং অর্থ বছরের ৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা উত্তোলন করেন, যা এখন পর্যন্ত ব্যাংক হিসেবে জমা হয়নি।
চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, আমাকে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা জমা দিয়ে গেছে। বাকী টাকা কোথায় আছে আমার জানা নেই। ইউএনও স্যারকেও জানিয়েছি বাকী টাকা উঠলে বা উনি চাইলে জমা দিব।
ইউএনও মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি মোট জমি ও কারা লিজ নিয়েছিল আগে তার তালিকা করতে বলেছিলাম। টাকা নেওয়ার কথা বলিনি। চুক্তিপত্র হওয়ার পর ব্যাংকে টাকা জমা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে যে টাকা নেওয়া হয়েছে সেটা আমি জানতাম না। প্রতিবেদন পেয়েছি। যাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।