এইমাত্র
  • সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে আলাদা করে দেবো: হাসনাত
  • দিল্লিতে ২৭টি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতি হবে মেসির ফুসফুুসে!
  • গালফ প্রো কার চ্যাম্পিয়ন হলেন অভিক আনোয়ার
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে
  • নেপালকে হারিয়ে সেমির পথে বাংলাদেশ
  • বিএনপির প্রার্থী পুনঃবিবেচনার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
  • পিএসএলের কারণে পিছোতে পারে পাকিস্তানের বাংলাদেশ সফর
  • ৩০ বছর পর রোগীর পেট থেকে বের হলো লাইটার
  • বার্সেলোনাকে কিনতে ১০ বিলিয়ন ইউরো’র প্রস্তাব সৌদি যুবরাজের
  • বিজয় দিবসে যেসব সড়ক এড়িয়ে চলতে বলেছে ডিএমপি
  • আজ সোমবার, ১ পৌষ, ১৪৩২ | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    পুকুরে ধ্বসে পড়ার ঝুঁকিতে শেরপুরের হুসনাবাদ বিদ্যালয়

    সাখাওয়াত হোসেন জুম্মা, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম
    সাখাওয়াত হোসেন জুম্মা, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম

    পুকুরে ধ্বসে পড়ার ঝুঁকিতে শেরপুরের হুসনাবাদ বিদ্যালয়

    সাখাওয়াত হোসেন জুম্মা, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম

    বগুড়ার শেরপুরের খামারকান্দি ইউনিয়নের হুসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাপীঠটি গত প্রায় চার দশক ধরে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। এখান থেকে সরকারি বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে অনেক শিক্ষার্থী আজ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। অথচ সুনামের সঙ্গে পাঠদান চালিয়ে আসা এই প্রতিষ্ঠানটির প্রবেশপথ এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মরণফাঁদে’ পরিণত হয়েছে।

    বিদ্যালয়ের উত্তর ও দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে থাকা বিশাল ও গভীর দুটি পুকুরের মাঝখানের সরু পাড় দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে অন্তত ১২৫ জন শিশু শিক্ষার্থী। এমনকি পুকুর দুটি’র পাড় ভাঙনের কারণে খোদ স্কুল ভবনটিও যেকোনো সময় ধ্বসে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

    সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের একেবারে গা ঘেঁষেই রয়েছে দুটি বড় পুকুর।

    স্থানীয়দের বক্তব্য মতে, পুকুরগুলোর গভীরতা প্রায় ১৫ ফুট। বিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য কোনো প্রশস্থ রাস্তা নেই, পুকুর দুটি’র মাঝখানের সরু আইল বা পাড়ই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। বর্ষাকালে বা সামান্য বৃষ্টিতে এই মাটির পথ পিচ্ছিল ও কর্দমাক্ত হয়ে যায়। এছাড়া পুকুরের পাড় ভাঙতে শুরু করায় রাস্তাটি এতটাই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে যে, পাশাপাশি দুজন হাঁটাও দায়। অভিভাবক ও স্থানীয়দের আশঙ্কা, যেকোনো মুহূর্তে পাড় ধ্বসে বা পিচ্ছিল পথে পা পিছলে পুকুরে পড়ে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

    বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ওসমান গণি বলে, “স্কুলে আসার সময় খুব ভয় লাগে। রাস্তাটা অনেক সরু, একটু এদিক-সেদিক হলেই পুকুরে পড়ে যাব। বর্ষাকালে তো আসতেই পারি না।”

    চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাতেমা খাতুন ও তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন জানায়, “পুকুরের পাড় অনেক উঁচু আর খাড়া। আমাদের যাতায়াত করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে, তবুও ভয় লাগে।” দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারিহা খাতুন ও প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাত ইসলাম জানায়, তাদের এই ভয়ের রাস্তা অনেক কষ্টে পার হতে হয়।

    স্থানীয় বাসিন্দা মো. রুবেল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বিদ্যালয়টি বর্তমানে চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।”

    বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা নিয়ে প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা খাতুন বলেন, “বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুনামের সাথে চলছে, কিন্তু এই যাতায়াত সমস্যার কারণে আমরা চরম বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। বিদ্যালয়ের নামে বর্তমানে মোট ৩৩ শতাংশ জমি রয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের জন্য কোনো গাড়ি বা মালামাল প্রবেশ করানো যায় না, ফলে সংস্কার কাজও ব্যাহত হচ্ছে।”

    তিনি আরও বলেন, “পুকুরের পাড় সংস্কার করাটা এখন সবচেয়ে জরুরি। এছাড়া স্কুল ভবন সংলগ্ন একটি বটগাছ বেড়ে উঠেছে যা ভবনের জন্য ঝুঁকির কারণ। গাছটি নিলামের মাধ্যমে কাটার জন্য আমি সমাপনী পরীক্ষার পর উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাবো।”

    বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুরের মালিক আব্দুস সাত্তার বলেন, “বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই এখানে পুকুর ও জঙ্গল ছিল। জমির মূল মালিক শচীন্দ্রনাথ রায় মোট সোয়া ৫ বিঘা জমি থেকে ৩৩ শতক বিদ্যালয়কে দান করেন এবং বাকি সোয়া ৪ বিঘা (দুটি পুকুর) আমাকে কবলা মূলে লিখে দেন। যার মধ্যে উত্তরের পুকুরটি ১ একর ৩৯ শতক ও অন্যটি ৮২ শতক।

    পকুরগুলোর গভীরতা ১৫ ফুট নয়, ৮ থেকে ১০ ফুট হবে। যেহেতু স্কুলের নিজস্ব কোনো রাস্তা নেই, তাই এর দায়ভার আমার ওপর বর্তায় না। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসন বা স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি এখানে গাইড ওয়াল নির্মাণ করে বা রাস্তা প্রশস্থ করতে চায়, সেক্ষেত্রে আমার পূর্ণ সম্মতি থাকবে।”

    শেরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা বলেন, “হুসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি জানার পরপরই আমি গুরুত্বের সাথে নিয়েছি এবং আগামীকালই সরেজমিনে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করব।

    শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে গাইড ওয়াল নির্মাণ বা ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। আশা করছি, খুব দ্রুতই আমরা এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারব।”

    এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ আহমেদ বলেন, “বিষয়টি আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি। আগামী ১৭-১৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই আমি প্রতিনিধি পাঠিয়ে অথবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেব। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…