বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) আয়োজিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মব সৃষ্টির অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও অছাত্রের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা সংসদ (ববিচাস)।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা সংসদের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান “সেইলর প্রেজেন্টস মাঘমল্লার ২.০”। অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। তবে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরপরই একটি মহল পরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়।
অভিযোগ অনুযায়ী, অনাবাসিক ও অছাত্র সাজেদুল ইসলাম (২০১৭–১৮ সেশন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা), ফয়সাল বাদশা (২০১৮–১৯ সেশন, উদ্ভিদবিজ্ঞান), রফিক (২০১৮–১৯ সেশন, রসায়ন), মেহেদি হাসান (২০১৯–২০ সেশন, লোক প্রশাসন), আবদুল আলিম (২০২০–২১ সেশন, রসায়ন), ইমাম হাসান (২০২১–২২ সেশন, ইংরেজি), তানজিল আহমেদ রাকিব (২০২১–২২ সেশন, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম), এস এম ওয়াহিদুর রহমান (২০১৯–২০ সেশন, আইন)সহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন অনাবাসিক শিক্ষার্থী ও অছাত্র ব্যক্তি নিজেদের আবাসিক শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে লাঠিসোঁটা ও রড হাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে এবং সংঘবদ্ধভাবে একটি মব গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালায়। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও শিক্ষাবান্ধব সংস্কৃতির পরিপন্থী।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে মব সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের আংশিক পরিচয় স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান রয়েছে বলেও অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা সংসদ তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে। সংগঠনটির উদ্যোগে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি মববিরোধী প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করেন।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, এ ধরনের মব সৃষ্টির অপচেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা, শিক্ষার পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য গুরুতর হুমকি। তাই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল বাদশা বলেন,
“আমরা কেউই মুক্তমঞ্চে মব সৃষ্টির জন্য যাইনি। সাউন্ডের ফলে আমরা অনেক বিরক্ত ছিলাম, তাই কথা বলে সেখান থেকে চলে এসেছি। উচ্চস্বরে কথা বলা হয়েছে ঠিকই, তবে মব সৃষ্টির কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। একজন অপরিচিত ব্যক্তির হাত থেকে আমি লাঠি নিয়েছি তবে স্টেজে যাওয়ার আগেই সেটি আমি ফেলে দিই। এরপর স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে চলে আসি।”
লোক প্রশাসন বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন,“রাত ১২টা পার হওয়ায় আমরা সাউন্ড বন্ধ করতে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো মারামারি হয়নি এবং আমার হাতে কোনো কিছুই ছিল না। সাউন্ড বন্ধ করতে যাওয়ার সময় কিছু কথা-কাটাকাটি হয়েছে, এর বেশি কিছু হয়নি।”
অভিযুক্ত আইন বিভাগের ২০১৯–২০ সেশনের শিক্ষার্থী এস এম ওয়াহিদুর রহমান জানান,“ববিচাস যাচাই-বাছাই ছাড়াই আমার নাম অভিযোগে যুক্ত করেছে। আমি কোনোভাবেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে আমি উত্তেজিত পরিস্থিতি শান্ত করতে সেখানে গিয়েছিলাম। কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না। এই উত্তেজনা সৃষ্টির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
অভিযোগপত্রে ববিচাসের সভাপতি সামিউল আলম ও সাধারণ সম্পাদক শুভকুন্ডু স্বাক্ষর করেন। অভিযোগের সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে একটি ভিডিও ফুটেজের লিংক সংযুক্ত করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এসআর