৬ বছরের শিশু স্বর্ণা। পিতার হাতে নির্মম লাঠিপেটার শিকার হচ্ছে। এলোপাতাড়ি লাঠিপেটার ফলে সাপের মতো ছটফট করে ওমা, ও বাবা বলে পায়ে ধরে মাফ চাইলেও মন গলেনি পাষাণ পিতার৷ বরং পায়ে লাথি দিয়ে আঘাতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে৷
প্রায় দশ মিনিট ধরে এই নির্যাতন চলে শিশুর উপর। আর এই দৃশ্যটি শিশুর সৎ মা রাবেয়া বাড়ির দরজায় বসে ভিডিও করেছেন। এমন পাশবিক হিংস্রতা ও মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পৌর এলাকার শিমুলতলী বাগরাইট মহল্লায়।
এ ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর নিন্দার ঝড় উঠেছে। অমানবিক পিতার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাচ্ছেন এলাকাবাসী। ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসনও নড়েচড়ে উঠেছে।
আজ সোমবার (২৯ মে) ভোরে সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধান ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাগরাইট গ্রামের মৃত নাজিম উদ্দীনের ছেলে ইকবাল বিয়ে করেছেন দুটি। তিনি পেশায় শ্রমিক। প্রথম স্ত্রীর নাম হালিমা। তার চার সন্তানের মধ্যে এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে৷ বড় ছেলে ও মেয়ে বাড়িতে থাকেন না, বাড়িতে শুধু ছোট দুই মেয়ে থাকে।
পারিবারিক কলহ ও বনিবনা না হওয়াতে দুই বছর আগে প্রথম স্ত্রী হালিমার সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। চার সন্তান রয়ে যায় পিতার কাছে। এরপর কিছুদিন দেশে থেকে প্রবাসে চলে যায় হালিমা। এর মধ্যে রাবেয়া নামের এক নারীকে বিয়ে করে ইকবাল। আগের সংসারের সন্তানদের ভালোভাবে নিতে পারছিলেন না দ্বিতীয় স্ত্রী রাবেয়া। ফলে সংসারে এ নিয়ে কলহ তৈরি হতো প্রায় সময়। শিশুদের মারধর করা হত হরহামেশাই।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি করা গত রমজানের ১৫ তারিখের দিকে। এটি গতকাল সন্ধায় প্রকাশ পায় এবং সবার নজরে আসে। ওইদিন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মারধরের শিকার হয় শিশুটি। আর এটি ঠান্ডা মাথায় বসে ভিডিও করেন সৎ মা রাবেয়া। ভিডিওটি প্রবাসে থাকা শিশুর মার কাছে পাঠানো হয় তাদের স্বার্থগত চাওয়া পাওয়ার জন্য।
শিশুটির পিতা ইকবালের ফুফু প্রতিবেশী নাজমা আক্তার বলেন, ওই দিন পাশের বাড়ি থেকে মারধরের শব্দ শুনতে পাই। রাতেও তাদের বাড়ি থেকে হৈচৈ শুনি। পরদিন সকালে জেনেছি মারধর করা হয়েছে। ইকবাল চড়া মেজাজের মানুষ। প্রায় সময়ই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সন্তানদের মারধর করে। আমাদের খারাপ লাগে।
বাড়িতে গিয়ে শিশুটি ভয়ে তটস্থ দেখা যায়, শিশু স্বর্ণা বলে, তাকে মারপিট করা হয়৷ শরীরে আঘাতের দাগ রয়েছে। বাকি সময় নিশ্চুপ থাকে সে।
এ বিষয়ে কথা বলতে আজ সকালে অভিযুক্ত পিতা ইকবাল ও তার স্ত্রী রাবেয়াকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে ইকবালের ছোট ভাই রাসেল মিয়া বলেন, 'আমিও জানতাম না আগে৷ ভিডিও প্রকাশ হবার পরে জেনেছি৷ ভাই ইকবাল রাগী মানুষ খুব। মারধরের ঘটনা স্বীকার করেছে ভাই ইকবাল। তবে মারধরের ভিডিও পাঠিয়ে কিছু আদায় করার বিষয়টি সঠিক নয়। বরং তার মা হালিমা সংসার টিকিয়ে রাখতে চাপ দিচ্ছিল এবং যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতো।'
এদিকে গতকাল থেকেই শিশুটির পিতা ও সৎ মা গা-ডাকা দিয়েছে। বাড়িতে শুধু দুটি মেয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান বলেন, ঘটনা মর্মান্তিক। আমি সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এসএম শাহাদাত হোসেন বলেন, পুলিশ সুপারের মাধ্যমে ভিডিওটি পাই। গতকাল রাত থেকেেই পুলিশ তৎপর রয়েছে। শিশুটির পিতা ও সৎ মাকে খোঁজা হচ্ছে। গোয়েন্দা টিমসহ একাধিক টিম কাজ করছে।