বেকারত্ব একটি সামাজিক ব্যাধি অথবা সংকট। একজন বেকার মানুষ যেন গোটা সমাজের দ্বারা অভিশপ্ত। বেকারদের নিয়ে বললে প্রথমেই আসে সমাজ ও পারিবারিক জীবনে তাঁদের অবস্থান। বেকার থাকা ছেলেটাকে মনে করা হয়, সমাজ বা পরিবারের অভিশাপ। তার কারণ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হওয়ার পর থেকেই একটি চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে আমাদের তরুণ সমাজরা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোতে না পারা লোকজনও বেকারত্বের জ্বালা বুকে নিয়ে বয়ে বেড়ায়। আবার দেখা যায়, হঠাৎ চাকরি হারিয়ে সচ্ছল মানুষের গলায়ও বেকারত্বের কালো মালা জুটে যায় কখনো কখনো। তরুণ বয়সে বেকার থাকার মতো কষ্ট পৃথিবীর বুকে আর নেই। ওই সময় বেকারত্ব নিয়ে আপন বাবা-মাও ছেড়ে কথা বলেন না। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সামনে মুখ দেখানো যায় না।
দীর্ঘদিন বেকার থাকার কারণে একজন বেকারের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়। অনেকেই আবার বেঁছে নেন আত্মহত্যার পথ, আবার কেউ কেউ হতাশা ঝেড়ে ফেলতে গিয়ে নিয়ে ফেলে ভুল পদক্ষেপ। অনেকে নিজেকে অসামাজিক ও খারাপ কাজে জরিয়ে ফেলেন। ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অন্যায় বেড়ে যায়।
মনে রাখতে হবে, ইসলাম হলো একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এখানে বেকারত্বের যেমন নিন্দা রয়েছে, তেমনি বেকারদের প্রতিও রয়েছে সহমর্মিতা। আমরা বেকারত্বকে নিন্দা করতে গিয়ে ভুলে বেকার বন্ধুদের মনে আঘাত দিয়ে ফেলি। আর কোনো মানুষের মনে আঘাত দেওয়া নিঃসন্দেহে কবিরা গুনাহ।
আল্লাহর রাসুল বলেছেন , ‘তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দেবে না, তাদের লজ্জা দেবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধান করবে না। কেননা, যে মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধান করে আল্লাহ তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দেবেন...।’ (তিরমিজি)
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিষ্ঠিত মদিনা রাষ্ট্রেও বেকারত্ব ছিল। ইতিহাস পাঠে এটাও জানা যায়, মদিনায় বেকারত্বের কারণ ছিল বহুবিধ। যেমন কর্মের সীমিত সুযোগ, শিল্পের বিকাশ না হওয়া, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি, দারিদ্র্য, কুটির শিল্পের দুর্বল অবস্থা, বিনিয়োগে ত্রুটি পূর্ণতা, মূলধনের অভাব, নিরাপদ অভিবাসনের সমস্যা, শ্রমজীবীদের গতিশীলতার অভাব, অলসতা ও শ্রম বিমুখতা, বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা প্রভৃতি। এসব কারণে সদ্য বিকশিত ইসলামি রাষ্ট্রে বেকারত্ব একটি অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বেকার সমস্যা মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেন এবং সে অনুযায়ী কর্মপন্থা গ্রহণ করেন।
পৃথিবীর সব মানুষ সমান নয়। কেউ ধনী, কেউ গরিব। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা এমন সব বিষয় আকাঙ্ক্ষা করো না, যেসব বিষয়ে আল্লাহ তোমাদের একের ওপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩২)
ধনীরা গরিবদের দান করে খোঁটা দিলে তারা খুব কষ্ট পায়। এতে দানের সওয়াব নষ্ট হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানগুলোকে বিনষ্ট করো না—ওই ব্যক্তির মতো, যে তার ধন-সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য এবং সে আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে না। ওই ব্যক্তির উদাহরণ একটি মসৃণ পাথরখণ্ডের মতো, যার ওপর কিছু মাটি জমে ছিল। অতঃপর সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হলো ও তাকে পরিষ্কার করে রেখে গেল। এভাবে তারা যা কিছু উপার্জন করে, সেখান থেকে কোনো সুফল তারা পায় না...।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৪)
তবে অলস মানুষের জন্য কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক নামাজিকে আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করতে আদেশ করা হয়েছে।’ সুরা জুমআ : ১৩
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিজ হাতে উপার্জনকারী আল্লাহর বন্ধু, যে চেষ্টা করবে রিজিকের সন্ধানে জমিনে ছড়িয়ে পড়বে সে রিজিক পাওয়ার যোগ্য আর যে অলস ভঙ্গিতে বসে থাকে, সে বঞ্চিত হওয়ারই যোগ্য।’
ইসলামে কাজকে পুণ্য এবং অলসতাকে পাপ গণ্য করা হয়েছে। কোরআনে কারিমে নবী কারিম (সা.) কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, ‘আর আপনি বলে দিন, তোমরা কাজ করে যাও। আল্লাহ তোমাদের কাজ দেখবেন আর দেখবেন রাসুল ও মুমিনরা।’ সুরা তাওবা : ১০৫
হজরত দাউদ (আ.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, হে আল্লাহ! নিজের হাতে কামাই করার জন্য আমাকে রোজগারের একটি পথ খুলে দাও। আল্লাহতায়ালা তার প্রার্থনা কবুল করলেন, কঠিন লোহাকে মোমের মতো নরম করে দিলেন যাতে করে তিনি যুদ্ধাস্ত্র ইত্যাদি লোহা উদগত পণ্য তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে পারেন। সহিহ্ বোখারি
এবি