এইমাত্র
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইসলামিক বক্তা তাহেরীর গাড়িতে হামলা
  • ইমরানের বিরুদ্ধে এবার সন্ত্রাসবাদে উস্কানির মামলা
  • হাসিনার ছেলে জয় ও মেয়ে পুতুলের ব্যাংক হিসাব জব্দ
  • সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিচারিক ক্ষমতা পেল সশস্ত্র বাহিনী
  • দেশ গঠনে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে: উপদেষ্টা নাহিদ
  • প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে আসছেন সৌদি যুবরাজ
  • বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হবে
  • সংস্কারের আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসবে সরকার
  • মাহমুদউল্লাহকে দলে নেওয়ার ব্যাখ্যা দিলেন নির্বাচক
  • সাকিবের শেষ টেস্ট ভারতে না বাংলাদেশে, যা বলছেন তামিম
  • আজ মঙ্গলবার, ১৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১ অক্টোবর, ২০২৪
    আন্তর্জাতিক

    স্কুলের সমৃদ্ধির জন্য ১১ বছরের ছাত্রকে বলি দেওয়ার অভিযোগ উত্তরপ্রদেশে

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৫ পিএম
    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৫ পিএম

    স্কুলের সমৃদ্ধির জন্য ১১ বছরের ছাত্রকে বলি দেওয়ার অভিযোগ উত্তরপ্রদেশে

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৫ পিএম

    ভারতের উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে ডিএল পাবলিক স্কুলের ১১ বছরের এক আবাসিক ছাত্রকে ‘বলি’ দেওয়ার অভিযোগকে উঠেছে। এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই বিদ্যালয়।

    রসগাওয়াঁ গ্রাম থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে ধান ও বাজরা ক্ষেতের মাঝে অবস্থিত এই দোতলা ছাত্রাবাস।

    ঘটনার পর ডিএল পাবলিক স্কুলের গেটে তালা ঝোলানো রয়েছে। যে বোর্ডে স্কুলের নাম লেখা ছিল তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। স্কুলের বাইরে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর।

    স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামবাসীদের অনেকে মানতে পারছেন না যে ‘একটা ভালো ইংরেজি মাধ্যম এই বিদ্যালয়ে’ এক আবাসিক ছাত্রকে ‘বলি দেওয়া হয়েছে’।

    দিন কয়েক আগে এই বিদ্যালয়ের হোস্টেলে আবাসিক ছাত্র কৃতার্থ কুশওয়াহারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। আনুমান করা হচ্ছে, ঘটনাটা ২২-২৩শে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি রাতের।

    পরদিন সকালে অর্থাৎ ২৩শে সেপ্টেম্বর সকালে, পড়ুয়ার মৃতদেহ বিদ্যালয়ের ম্যানেজার দীনেশ বাঘেলের গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। সেই সময় ছাত্রের পরনে স্কুলের পোশাক ছিল। তার ব্যাগও ওই গাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয়।

    নিহত ছাত্রের গলায় গাঢ় লাল দাগ ছিল বলে জানা গিয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, শ্বাসরোধের ফলে মৃত্যু হয়েছে তার। গলার হাড়ও ভাঙা ছিল।

    সাম্প্রতিকতম তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে রয়েছেন, স্কুল ম্যানেজার দীনেশ বাঘেল, তার বাবা যশোধন বাঘেল, প্রিন্সিপাল লক্ষ্মণ সিং এবং স্কুল চত্বরে বসবাসকারী দুই শিক্ষক। আপাতত তারা জেল হেফাজতে রয়েছেন।

    প্রসঙ্গত ধৃত যশোধন বাঘেল যিনি ঐ অঞ্চলে ‘ভগত জি’ নামে পরিচিত এক সময় ওঝার কাজ করতেন। সাত বছর আগে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত তথাকথিত ‘ঝাড় ফুঁক’ এবং ‘ভুত তাড়ানোর’ কাজ করেছেন।

    নাবালক ওই ছাত্রকে যে ‘বলি দেওয়া হয়েছে’ সে কথা মেনে নিয়েছে পুলিশ। সংবাদমাধ্যমকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ‘স্কুলের উন্নতি এবং সমৃদ্ধির’ জন্য ওই শিশুকে ‘বলি’ দেওয়া হয়েছে।

    পুলিশ কী বলছে?

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাথরস পুলিশের একাধিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত তদন্ত করে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে তার উপর ভিত্তি করে বলা যেতে পারে এই ঘটনাকে ‘বলি’ বলেই মনে করা হচ্ছে।

    পুলিশ যশোধন বাঘেলের তান্ত্রিক হওয়া এবং ‘বলির’ সঙ্গে সম্পর্কিত ‘সারকামস্টান্সিয়াল এভিডেন্স’ বা পরিস্থিতিগত প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে, যা অভিযুক্তদের রিমান্ড রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে।

    তবে হাথরসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার সিং বিবিসিকে বলেন, “তদন্ত এখনও শেষ হয়নি, আরও কিছু তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।”

    হাথরসের পুলিশ সুপার নিপুণ আগরওয়ালকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিবিসির কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি।

    হাথরস পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমের জন্য জারি করা বিবৃতিতেও ওই শিশুর ‘বলির’দেওয়ার কথা উল্লেখ নেই।

    পুলিশের তরফে জারি করা প্রেস বিবৃতিতে বলে হয়েছে, “অভিযোগের ভিত্তিতে প্রমাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্য অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ্যে এসেছে। হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সময় অভিযোগের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

    এদিকে অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যরা পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের দাবি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ সত্যতা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি পুলিশ।

    তবে পুলিশ সুপার নিপুণ আগরওয়ালের একাধিক বিবৃতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি এই হত্যাকাণ্ড যে বলি তা স্বীকার করে মূল অভিযুক্ত যশোধন বাঘেলকে তান্ত্রিক হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

    ছাত্রের পিতার প্রশ্ন:

    রসগাওয়াঁ গ্রাম থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে তুরসেন গ্রামে নিহত ছাত্র কৃতার্থ কুশওয়াহার পরিবার থাকে। তার বাড়ির বাইরে বেশ ভিড়।

    শোকার্ত পিতা কৃষ্ণা কুশওয়াহা বারবার বলছেন, “একবিংশ শতাব্দীতে কীভাবে কেউ বলি দিতে পারে? আমার সন্তানের হত্যার পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে, পুরো সত্যিটা বেরিয়ে আসা উচিত।”

    পেশায় ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণা কুশওয়াহা।

    শনিবার উত্তরপ্রদেশ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান দেবেন্দ্র শর্মা, দিল্লির জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের একটা দল এবং জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ছাত্রের পরিবারের সাথে দেখা করেন।

    দেবেন্দ্র শর্মা বিবিসিকে বলেন, “যদি এটা বলির ঘটনা হয়, তাহলে বলব সুস্থ সমাজে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশ ঘটনার গভীরে যাবে এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে।”

    তার কথায়, “উত্তরপ্রদেশ সরকার এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আমাকে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পাঠিয়েছেন।”

    ছেলের জন্য ন্যায়বিচার প্রার্থনা করতে গিয়ে দেবেন্দ্র শর্মার পায়ে লুটিয়ে পড়েন শোকার্ত পিতা। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমি আমার একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছি, আমি ন্যায়বিচার চাই। সরকারের উচিত এমন পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে আর কোনও পিতাকে তার সন্তানকে হারাতে না হয়।”

    নিহত ছাত্রের মা কমলেশ কুশওয়াহা মানসিকভাবে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ছেলের স্কুলের পোশাক দেখাতে গিয়ে বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন তিনি।

    কোনওমতে বলেছেন, “অনেক আশা নিয়ে ছেলেকে স্কুলের ছাত্রাবাসে পাঠানো হয়েছিল। কখন কোনও অভিযোগ করেনি। আমরা আমাদের ছেলেটাকে পড়তে পাঠিয়েছিলাম, ওরা তাকে মেরে ফেলেছে।

    কৃষ্ণা কুশওয়াহা নয়ডার একটা তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। প্রতি সপ্তাহান্তে গ্রামে আসেন তিনি। ঘটনার দিনও গ্রামে ছিলেন। তাদের বাড়ি থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে রসগাওয়াঁ গ্রামের স্কুল।

    ২৩শে সেপ্টেম্বর সকালের ঘটনার কথা মনে করে তিনি বলেছেন, “তখন ভোর পাঁচটা হবে। আমি নয়ডা যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরচ্ছিলাম। সেই সময় স্কুলের ম্যানেজার দীনেশ বাঘেল ফোন করে আমাকে জানান যে কৃতার্থের শরীর খারাপ।”

    “কেন জানি না আমার মনে হলো কিছু একটা গণ্ডগোল রয়েছে। আমি দীনেশ বাঘেলকে বারবার ফোন করতে থাকি। কখনও তিনি কখনও বলেন বাচ্চাকে নিয়ে আগ্রা যাচ্ছেন, কখনও বলে আলিগড় যাচ্ছেন।”

    “এরই মাঝে সাদাবাদে তার গাড়ি পাওয়া যায়। সেখানে আমার ছেলের দেহ পড়েছিল। আমরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দিই।

    কৃষ্ণা কুশওয়াহা জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে তিনি জানতে পারেন, ছেলেকে বলি দেওয়া হয়েছে।

    শোকার্ত এই পিতা প্রশ্ন করেন, “আমি একজন বাবা, আমি আমার একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছি। আমার ছেলের কী হয়েছিল সেটা জানাটা আমার অধিকার। কেন তাকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো?

    ছাত্রাবাসে এর আগেও শ্বাসরোধের চেষ্টার অভিযোগ
    এই ছাত্রাবাসকে ঘিরে এটাই প্রথম অভিযোগ নয়। এর আগেও সেখানকার ছাত্রদের সঙ্গে অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।

    তুরসেন গ্রাম থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বাহারদোই গ্রামের দুই ছাত্রের পরিবারের সদস্যরা এমনটাই দাবি করেছেন।

    কৃতার্থ কুশওয়াহার সঙ্গে একই স্কুলের ছাত্রাবাসের আবাসিক ছিল আক্রান্ত ঐ দুই পড়ুয়া। পরিবারের দাবি তাদের সন্তানদের হত্যা করার চেষ্টা হয়েছিল ছাত্রাবাসে।

    বাহারদোই গ্রামের শেষ প্রান্তে একটা বাড়িতে অনেক ছাগল-মহিষ বাঁধা আছে। এই কৃষক পরিবারের নয় বছরের একটা ছেলেও ওই একই স্কুলে পড়ত এবং ছাত্রাবাসের থাকত।

    পরিবারের অভিযোগ, ছয়ই সেপ্টেম্বর রাতে তাদের ছেলেকেও শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ঘটনার তিন সপ্তাহ পরেও ওই শিশুর গলায় আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট রয়েছে।

    আক্রান্ত বালকের বাবা বলেছেন, “(ঘটনার) পরের দিন স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায় যে আমার ছেলে অসুস্থ। আমি সঙ্গে সঙ্গে স্কুলে গিয়ে দেখি আমার ছেলের অবস্থা বেশ খারাপ। ওর গলা ফোলা ছিল এবং গলায় একটা গভীর লাল চিহ্নও ছিল। চোখও লাল ছিল।”

    ঘটনার পর এখনও বিপর্যস্ত রয়েছে এই শিশু। তার বাবা-মায়ের উপস্থিতিতেই সে বলে ওঠে, "ভগত জি (যশোধন বাঘেলা) সেই রাতে আমার গলা টিপে ধরেছিল। আমি চোখ খুলে দেখলাম উনি আমার উপরে বসে গলা টিপে ধরেছেন।”

    ঘটনার পর হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয় ছাত্রকে। তাকে ওই স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে তার পরিবার।

    সেই ছাত্রকে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি তার পরিবারের কাছে রয়েছে।

    ছাত্রের বাবা দাবি করেছেন, “ডাক্তার আমার ছেলেকে দেখে বলেছিলেন যে ওকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।”

    তবে পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি এই ঘটনার বিষয়ে।

    একই গ্রামের ১০ বছর বয়সী আরেক শিক্ষার্থীকেও গলা টিপে শ্বাসরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তার পরিবার জানিয়েছে ঘটনাটা ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঘটেছে।

    শিশুটির মা ও বাবা বলেন, “ছেলে আমাদের জানিয়েছিল যে ছাত্রাবাসে থাকা অন্য একটা বড় ছেলে ওর গলায় দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানালেও ম্যানেজার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে বিষয়টা চেপে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

    শ্বাসরোধের অভিযোগের পর তোলা আক্রান্ত শিশুদের ছবি দেখেছে বিবিসি যেখানে তাদের গলায় দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

    এই দুই শিশুর পরিবারের সদস্যরাই এখন মনে করেন সময়মতো পুলিশকে খবর দিলে হয়তো কৃতার্থ কুশওয়াহার প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হতো।

    দুই ছাত্রই জানিয়েছে অভিযুক্ত যশোধন বাঘেল রাতে ওই ছাত্রাবাসেই থাকতেন। শুধু তাই নয়, আবাসিকদের সঙ্গে একই হলে ঘুমাতেনও তিনি।

    হাথরাস পুলিশও স্বীকার করেছে যে এই দুই ছাত্রকেও শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল।

    ছয়ই সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের দিয়ে অন্য এক বালককে শ্বাসরোধ করানোর চেষ্টা করা হয়েছিল বলে বিবিসি জানতে পেরেছে। যদিও স্বাধীনভাবে এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

    অবৈধভাবে চলছিল স্কুলের ছাত্রাবাস:

    এদিকে ডিএল পাবলিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রদের পড়ানোর অনুমতি থাকলেও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলছিল বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে ছাত্রাবাস চালানোর জন্য অনুমতি ছিল না।

    ছাত্রের মৃত্যুর পর হাথরাসের শিক্ষা বিভাগ ওই স্কুলের স্বীকৃতি বাতিল করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

    বেসিক এডুকেশন অফিসার স্বাতী ভারতী বিবিসিকে বলেন, “ওই ছাত্রাবাস বেআইনিভাবে চলছিল। স্কুলটা সিল করে দেওয়া হবে।”

    ওই স্কুলে ৬০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। পাঠরতদের মধ্যে ২৫ জন শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে থাকত।

    স্কুল বন্ধ থাকার কারণে সমস্ত শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। প্রশাসন এই ছাত্রদের জন্য কোনও ব্যবস্থা করেছে কি না জানতে চাইলে স্বাতী ভারতী বলেন, “এখনও চেষ্টা চলছে।

    অভিযুক্তদের পরিচয়:

    রাসগাওয়ান গ্রামের মাঝখানে একটা বড় দোতলা ভবন রয়েছে যা দেখতে আশপাশের বাড়িগুলোর চাইতে অনেকটা বড়। দেখে সহজেই অনুমান করা যেতে পারে যে ওই ভবনে বসবাসকারী পরিবার আশপাশের পরিবারের চাইতে আর্থিক দিক থেকে অনেকটা মজবুত।

    বাঘেলা পরিবারের বাড়ির উঠোনে বিছানো একটা খাটে শুয়ে আছেন প্রায় ৯৫ বছরের ডোরিলাল বাঘেল। তার নামেই ডিএল পাবলিক স্কুলের নামকরণ করা হয়েছে।

    “আমার ছেলে আর নাতি জেলে আছে। আমাদের কথা শোনার কেউ নেই,” বলেছেন ডোরিলাল বাঘেল।

    পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬৫ বছর বয়সী যশোধন বাঘেল বেশিরভাগ সময়ই স্কুলে থাকতেন।

    মেয়ে বিনীতা বাঘেল দাবি করেছেন যে তার বাবা ধার্মিক প্রকৃতির মানুষ এবং আচার-অনুষ্ঠান করতে অভ্যস্ত। তার সঙ্গে তন্ত্র-মন্ত্রের কোনও সম্পর্ক নেই।

    “পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ভগত জি চাকরি ছেড়ে দেন। স্কুল তৈরি হওয়ার পর বেশিরভাগ সময় সেখানেই থাকতেন,” জানালেন ওই পরিবারের এক নারী।

    অভিযুক্ত দীনেশ বাঘেলের মা শকুন্তলা বাঘেল বলেন, “আমার ছেলে বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে পড়াশোনা করেছে। ছেলেবেলায় ফিরোজাবাদে থাকত, তারপরে কোটায় (ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য) প্রস্তুতি নিতে চলে যায়। তারপরে রুরকি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে।”

    পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রুরকি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করার পর দীনেশ বাঘেল মালয়েশিয়ায় একটা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি পেলেও এক মাসের মধ্যেই ফিরে আসেন।

    ২০১৯ সালে গ্রামে পৈতৃক জমিতে স্কুল তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি।

    “ও জমি বিক্রি করে, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে স্কুল তৈরি করেছেন,” বলেছেন মা শকুন্তলা বাঘেল।

    স্কুল খোলার আগে গ্রামেই বাচ্চাদের পড়াতেন দীনেশ বাঘেল। নিকটবর্তী বসবাসরত শিক্ষার্থীদের অনেকে দাবি করেছেন পড়াশোনার জন্য তাদের অনুপ্রাণিত করতেন রুরকির এই প্রাক্তনী।

    স্কুলের উন্নতির জন্য শিশুকে বলি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে শকুন্তলা বাঘেল বলেন, “এমন কাণ্ড ঘটিয়ে কেউ নিজের কাজ কেন নষ্ট করতে চাইবে? একজন শিশু খুন হয়েছে, পুলিশের উচিত তদন্ত করে তথ্য প্রমাণ খুঁজে সত্য সামনে আনা।”

    বোন বিনীতা বাঘেল বলেন, “আমার বাবা স্কুলে থাকতেন, তাদের দেখাশোনা করতেন। নিজেদের স্কুলে পড়া একটা বাচ্চাকে কেন খুন করবেন তিনি?”

    ওই পাড়ার একাধিক নারী বলেছেন, “যদি বলি দিয়ে থাকে, তা হলে পুলিশ প্রমাণ করুক বা সিবিআই এই ঘটনার তদন্ত করুক।

    ডিএল পাবলিক স্কুলের ওয়েবসাইটে এই বিদ্যালয়কে সিবিএসই মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানকারী একটি ‘হাই-টেক স্কুল’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

    ডিএল পাবলিক স্কুলের মতো অনেক স্কুল আশেপাশের গ্রামে রয়েছে।

    এই গ্রামাঞ্চলে শিশুদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ানোর ‘ঝোঁক’ বেশ স্পষ্ট।

    বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে অনেক অভিভাবকই জানিয়েছেন, শিশুদের সেরা শিক্ষাই তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

    রাসগাওয়ান গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দশম পর্যন্ত শিক্ষার জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও গ্রামের অধিকাংশ শিশুই ডিএল পাবলিক স্কুলে লেখাপড়া করে।

    দীনেশ বাঘেলের পরিবারের সদস্য অমিত বাঘেল বলেন, “আমার তিন সন্তানই ডিএল পাবলিক স্কুলে পড়ত, এখন তিনজনেরই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমি আমার সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত।”

    বাচ্চাদের সরকারি স্কুলে পাঠানোর প্রশ্নে তিনি বলেন, "আমি একজন গাড়িচালক। আমি চাই বাচ্চারা ভালোভাবে পড়াশোনা করুক, সরকারি স্কুলের পরিবেশ ততটা ভালো নয়।

    সূত্র: বিবিসি

    এফএস

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…