শেরপুরে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কমায় এবং বৃষ্টি না হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এখনও প্রতিটি এলাকায় খাদ্য সংকট রয়েছে। অনেক এলাকায় এখন পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছেনি।
এদিকে, সোমবার (৭ অক্টোবর) নালিতাবাড়ীর ঘোনাপাড়ায় জিমি আক্তার নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বন্যায় নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলায় এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হলো। শিশু জিম শেরপুর সদরের চান্দেরনগরের কড়ইতলা এলাকার জামান মিয়ার মেয়ে। নানার বাড়ি বেড়াতে এসে তার মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে, রবিবার সন্ধ্যায় বন্যার পানিতে ডুবে নকলার গণপদ্দি ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামে মো. আবদুর রাজ্জাক (৫০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। একই দিন বিভিন্ন সময়ে আরও ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে, শনিবার ৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১০ জনে দাঁড়িয়েছে।
জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, রবিবার দুপুরের পর থেকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত শেরপুরে বৃষ্টি হয়নি। এছাড়া মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি অনেকটাই কমেছে। এর ফলে সোমবার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এসব ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম থেকে বন্যার পানি ধীরে ধীরে নিম্নাঞ্চলে নেমে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। তবে নকলা উপজেলার ধনাকুশা উচ্চবিদ্যালয় ও তারাকান্দা দাখিল মাদ্রাসা বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও শতাধিক মানুষ অবস্থান করছেন।
সোমবার বিকাল ৩টায় শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর পানি ১৫৭ সেন্টিমিটার, চেল্লাখালী নদীর ৭৬ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৫৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া অপর ২টি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে বইছে।
পাউবো শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকীবুজ্জামান বলেন, নদ-নদীর পানি দ্রুত কমে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এভাবে রোদ থাকলে আরও উন্নতি হবে।
অপরদিকে, বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বেহাল গ্রামীণ সড়কের চিত্র ভেসে উঠছে। ঝিনাইগাতী-ফাকরাবাদ সড়কের বিভিন্ন অংশ ঢলের পানিতে ভেঙে যাওয়ায় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. জাহিদুল হক বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এখনও দুর্গম এলাকায় মানুষের খাদ্যসংকট আছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত সব এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কাজে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সার্বিক তৎপরতা চালাচ্ছেন ও সহযোগিতা করছেন। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ সবাই এগিয়ে এসেছেন। সবাই মিলে এ দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো।
এইচএ