মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক সদর দপ্তর দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এ নিয়ে দ্বিতীয় আঞ্চলিক কমান্ড সেন্টার হারালো জান্তা বাহিনী। সম্প্রতি মিয়ানমারজুড়েই বিদ্রোহীদের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েছে সামরিক বাহিনী।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে আরাকান আর্মির এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে দুই সপ্তাহের তীব্র লড়াইয়ের পর পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের পতন ঘটেছে।
তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য আসেনি মিয়ানামারের সামরিক সরকারের মুখপাত্রের কাছ থেকে।
আগস্টের শুরুতে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আরাকান আর্মি উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের রাজধানী লাশিওতে নর্থইস্টার্ন কমান্ড দখল করে। এরপর থেকে ১৪টি সামরিক কমান্ড দখলে নেয় তারা। এগুলোর মধ্যে জান্তার রাখাইনের শক্ত ঘাঁটি হলো পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থুখা মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীকে বলেন, রাখাইনের ডেপুটি কমান্ডার (জান্তা বাহিনীর) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থাউং তুন ও চিফ অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কিয়াও কিয়াও থানকে আটক করা হয়েছে।
তবে জান্তা বাহিনীর বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। কিছু সরকারি সেনা ঘাঁটি থেকে পালিয়ে গেছে। থুখা বলেন, জান্তার যুদ্ধবিমান ওই এলাকায় বোমা ফেলছে। আমাদের সেনারা পলায়নরত সরকারি সেনাদেরও ধাওয়া করছে।
চলতি সপ্তাহে সরকারের অনেক সেনা পরিবারসহ আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। আরাকান আর্মির একটি ভিডিওতে বিপুলসংখ্যক জান্তা সেনাকে সাদা পতাকা নিয়ে আত্মসমর্পণ করতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার আরাকান আর্মির আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কমান্ডাররা পালিয়ে যাওয়ার পর জান্তা বিমান হামলার সময় সরকারি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী জোট থ্রি ব্রাদারহুডে থাকা আরাকান আর্মি (এএ) ২০২৩ সালের অক্টোবরে সরকারবিরোধী অভিযান শুরু করে। চীন–সংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তে উল্লেখজনক তারা বিজয়ও অর্জন করে। গত আগস্টে উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় লাশিও শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহী জোট। যা মিয়ানমারের ইতিহাসে প্রথম কোনো আঞ্চলিক সামরিক কমান্ড দখলের ঘটনা।
গেল নভেম্বরে আরাকান আর্মি ও জান্তার মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পর রাখাইনে নতুন করে লড়াই শুরু হয়। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি অভিযানে জয় পেয়েছে। রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে অভিযান চালানোর সময় আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদেরও লক্ষ্যবস্তু করেছে। এই পরিস্থিতিতে কয়েক হাজার মানুষ বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য হয়েছে।