সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ অফিসের গাড়ি চালান শেখ কামরুজ্জামান (কামরুল)। গাড়ি চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তার নিয়োগ হয়েছে ‘কুক (বাবুর্চি)’ পদে। তবে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এ কোন কুকের পদ না থাকলেও পতিত আ.লীগ সরকারের সাবেক এমপি মীর মেস্তাক আহমেদ রবির পাওয়ারে গাড়ী চালকের কাজ অব্যাহত রাখেন তিনি। সাবেক ওই এমপির প্রভাবে বাগিয়ে নিয়েছেন জাতীয় শ্রমিক লীগের অধিনস্থ 'পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্রমিক-কর্মচারী লীগের অর্থ সম্পাদকের পদ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পাউবোর সব ঠিকাদারি কাজ হতো তার আঙুলের ইশারায়। আ.লীগের সাবেক এমপির অত্যন্ত আস্থাভাজন লোক হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কামিয়েছে কোটি কোটি টাকা। নামে বেনামে গড়েছেন বিপুল সম্পদ। গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পরেও কামরুল আছেন বহাল তবিয়তে। সাতক্ষীরা শহরের বাইপাস রোডে রয়েছে কোটি টাকার সম্পদ। খুলনার সোনাডাঙ্গা আবাসিকে রয়েছে ফ্ল্যাট। সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর ও সিরাজগঞ্জে একাধিক ব্যাংক হিসাব ও ডিপিএস আছে তার স্ত্রী, ভাই, সন্তান, মেয়ে, জামাতা ও নিজ নামে। সাতক্ষীরার প্রধান ডাকঘরেও সঞ্চিত আছে কয়েক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। এছাড়া বেশ কয়েকটি মালবাহী ট্রাক ও প্রাইভেট কারেরও মালিক তিনি। সিরাজগঞ্জ জেলার বাসিন্দা কামরুল চাকরির সুবাদে স্থায়ী হয়েছেন সাতক্ষীরার ইটাগাছা এলাকায়।
স্থানীয় আ.লীগ নেতাদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ করছেন সাতক্ষীরা পাউবো-১ এর যাবতীয় ঠিকাদারি কার্যক্রম। আ.লীগের সাবেক এমপির আস্থাভাজন হওয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলীরাও তাকে ব্যবহার করেছেন সব কাজে। এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের স্ত্রী, ছেলে ও ভাইয়ের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে ওপেন ঠিকাদারি কাজ করেন তিনি। তার ঠিকাদারি লাইসেন্সের নাম ‘মেসার্স রাফিদ এন্টারপ্রাইজ’। রাফিদ তার ছেলের নাম। অভিযোগ রয়েছে, সাতক্ষীরা পাউবো ১-এর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৬ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন কুক কামরুল।
পাউবোর শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক যুগেরও বেশী সময় ধরে নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়িচালক হিসেবে কাজ করায় অফিসের সব তথ্য জেনে যান কামরুল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীদের কাছ থেকে জরুরি বাঁধ মেরামতের নামে শতাধিক কাজ বাগিয়ে নিয়ে হাতিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ পেয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমানে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. আবুল খায়েরের সময়ে।
শুধু জরুরি বাঁধ মেরামতই নয়, পরিবারের সদস্যদের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে সেসব লাইসেন্সের বিপরীতে বাগিয়েছেন বেশ কিছু বড় বাজেটের কাজ। বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরের ওয়াপদার মোড় হতে পশ্চিম দিকে ইটাগাছা এলাকায় কোটি টাকার আলিসান বাড়ি আছে তার। তার নিয়োগকৃত কুকের কোনো পদ না থাকলেও নিয়মিত এ অফিস থেকে বেতন নিচ্ছেন তিনি। আবার অফিসে নিয়মিত কোনো গাড়িচালকের পদায়ন হলেও তারা টিকতে পারেননি কামরুলের অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে।
আরো জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এ গাড়ি চালকের পদটি তিন বছর যাবত শূন্য থাকার পরেও হেড অফিসে গাড়ি চালকের জন্য কোনো চাহিদা পাঠাননা নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দীন। কারন দুর্নীতিবাজ কুক কামরুজ্জামানকে দিয়ে গাড়ি চালানোয় তার উদ্দেশ্য। তাছাড়া আউটসোর্সিং এ দুইজন দক্ষ ড্রাইভার থাকলেও তাদেরকে ব্যবহার করেননা নিজের গাড়ীচালক হিসেবে।
এ বিষয়ে কুক শেখ কামরুজ্জামান কামরুলের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দীন বলেন, 'আমি যোগদানের পর কামরুলের বিরুদ্ধে ঠিকাদারিসহ বেশকিছু অভিযোগের কথা শুনেছি। কিন্তু বর্তমানে কোনো ধরনের ঠিকাদারি কাজ করছেন না তিনি।'
কুক পদে নিয়োগ পেয়ে কীভাবে ড্রাইভার হিসেবে একই স্টেশনে দীর্ঘদিন চাকরি করছেন জানতে চাইলে বোর্ডের মহাপরিচালকের উপর দোষ চাপিয়ে তিনি বলেন, 'পানি উন্নয়ন বোর্ডের বদলির বিষয়টি বোর্ডের প্রধান কার্যালয় থেকে সরাসরি দেখা হয়। ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
এমআর