সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে সারা বছরই ঘটছে দুর্ঘটনা। যানবাহন বাড়লেও এ মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হচ্ছে না। দিন দিন দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে এবং সেই সাথে হতাহতের হার ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ মহাসড়কটি এখন এক ভয়াল আতঙ্কের নাম।
অতীতে ও এ মহাসড়কে ১ মাসের মধ্যে প্রায় ২৫টি প্রাণহানির নজির রয়েছে। যেখানে একটি দুর্ঘটনার শিকার ৭ জন। একটি দুর্ঘটনা শুধু প্রাণই কেড়ে নেয় না, একটি পরিবারকে তছনছ করে দেয় আর পঙ্গু হলে এক ভয়াবহ করুণ জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। উল্লেখ যে কোম্পানীগঞ্জের নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।
সাকেরা স্টোন ক্রাশার সংলগ্ন মহাসড়ক, বউবাজার, ইসলামপুর কবর স্হান ও লাছুখালের মধ্যবর্তী টার্নিং মোড়, তেলিখাল এবং খাগাইল, পিয়াইনগুল হাজী কলিম উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বেশিভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।
গত ২১ অক্টোবর মহাসড়কের ডাকঘর এলাকার সামনে সুমন মিয়া (৩২) নামে একজন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। ৪ নভেম্বর পাড়ুয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে ট্রাক চাপায় সমরুন নেছা (৬০) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। ১৭ নভেম্বর সেবা ফিলিং স্টেশনের সামনে ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী কবির হোসেন (১৫) প্রাণ হারিয়েছেন। দিন দিন এই মহাসড়কে ঝরছে তরতাজা প্রাণ, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
একটি সড়ক দুর্ঘটনায় স্বজনরা দারুণ মর্মাহত শোকে কাতর গোটা পরিবার। এ মাসে আহতদের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। এই রাস্তাটি এখন চলাচলকারীদের জন্য বড়ই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কারণ। প্রতিদিন কয়েক হাজার যান চলাচল করে এই সড়কে। লাইসেন্স ও নম্বরবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারির ঘাটতি এসব সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। সাদাপাথর পর্যটনে আসা গাড়িগুলোরও থাকে বেপরোয়া গতি। তাছাড়া পাড়ুয়ায় সাকেরা স্টোন ক্রাশারের সামনে ও চকবাজার (বউ বাজার) জামে মসজিদের সামনে থেকে মহাসড়কের দুই পাশেই বড় ট্রাকগুলো সারি বাঁধা থাকে প্রতিদিন একদিকে তারা সড়কের ক্ষতি সাধন ও করছে। বলে যাত্রী পথচারী জনসাধারণের দাবি।
এলাকায় রাস্তার উপর দিনের পর দিন পার্কিং করে রাখা গাড়িগুলোও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মারাত্মক কারণ। কোম্পানীগঞ্জ ট্রাক-মালিক সমিতির আদেশ অমান্য করে রাস্তার উপর পার্কিং করে দিনের পর দিন গাড়ি রাখছেন অনেকেই। মানছে না প্রশাসনের বিধিনিষেধ।
কোম্পানীগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি রুহুল আমিন বাবুল বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীরা ভূমিকা রাখলে জনসচেতনতা তৈরি হবে এবং দুর্ঘটনা কমবে।
কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শাব্বির আহমদ বলেন, পথচারী ও গাড়িচালকের অসচেতনতা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রাস্তায় গতি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। এত প্রশস্ত রাস্তায় নেই কোনো ডিভাইডার। অসচেতন চালকেরা তাই শৃঙ্খলা মানছে না। যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করা থাকে। উন্নত বিশ্বের কোনো দেশে রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা নিষেধ। অমান্য করলে গুনতে হয় জরিমানা। দুর্ঘটনা রোধে প্রশাসন ও জনগণকে সচেতন হতে হবে।
এব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের সচেতনতা তৈরি ও সতর্ক থাকতে হবে। আপনারা অবগত আছেন ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম না থাকায় ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। আমরা এই মহাসড়কের যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কোম্পানীগঞ্জ ট্রাক মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন পরিবহণ সংগঠনের সাথে কথা বলব। পুলিশ জনতা একসাথে কাজ করতে পারলে সফলতা আসবে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবিদা সুলতানা দৈনিক সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে বিভিন্ন কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজের) সাথে আলাপ হয়েছে। আশাবাদী আগামী সপ্তাহে জেলা থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীলরা আসার কথা। আমরা দুর্ঘটনার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করব। যেসব স্থানে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে সেসব স্থান চিহ্নিত ও পরিদর্শন করব। অচিরেই তারা দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এআই