বাজার বলতে আমরা সেই স্থানকেই বুঝি যেখানে নানা ধরনের ক্রেতা ও বিক্রেতার সমাগম ঘটে। তবে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় এমন একটি বাজার রয়েছে যেখানে বিক্রেতা পুরুষ হলেও ক্রেতাদের প্রায় সবাই নারী। আর নারীরা এ বাজারের মূল ক্রেতা হওয়ায় তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মহিলা বাজার’।
প্রতিদিনই ভোর হওয়ার সাথে সাথে বাজারে বিভিন্ন বয়সী নারীরা আসতে শুরু করেন। বাজার পরিচালনায় কোন কমিটি না থাকলেও নিরাপত্তায় কোন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের এই দৃশ্য প্রতিদিনের। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জমজমাট এই বাজারের সকল বিক্রেতা পুরুষ হলেও ক্রেতা সকলেই প্রায় নারী। এ কারণে গ্রামের মানুষরাও নাম দিয়েছেন মহিলাদের বাজার। বিভিন্ন জায়গা থেকে বাজারে মাছ, শাক, সবজিসহ নিত্যপন্য সকল কিছু নিয়ে ছুটে আসেন দোকানিরাও। একটি গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠা এই একটি ইউনিয়নের চারদিকে নদী। ঘোড়াউত্রা নদী ঘেষা এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ হাওরে মাছ শিকার করে থাকেন। তাই পুরুষরা ভোর হওয়ার সাথে সাথে মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়েন। মাছ ধরাসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় বাজার করা থেকে রান্না বান্না সবকিছু নারীদেরকেই সামলাতে হয়।
কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওরে বেষ্টিত গ্রাম ছাতিরচর। এ একটি গ্রাম নিয়েই গঠিত এই ইউনিয়নে ২০ হাজারেরও অধিক মানুষের বসবাস। ২০০ বছর আগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন এসে হাওরের মাঝে বসতি গড়ে তোলেন। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ হাওরে মাছ শিকার করেন। পুরুষরা হাওরে মাছ শিকারে ব্যস্ত থাকায় নারীরা সংসারে বাকি সব কাজ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে আসাদের মধ্যে প্রায়ই নারী। বাড়ির পুরুষরা মাছ ধরাসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় বাধ্য হয়ে নারীদের বাজারে আসতে হয়। এ ছাড়া নারীরা নাকি দরদাম করে বাজার করতে পারদর্শী এ তারা বাজারে আসেন।
বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আওয়াল হোসেন বলেন, বাজারে সবসময়ই নারী ক্রেতাদের ভিড় থাকে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আসা লোকজনের ৮০ ভাগই নারী। পুরুষ লোক বাড়িতে কম থাকে হাওরে মাছ ধরতে বা কৃষি কাজে থাকে তাই মহিলারই বাজার করে।
বাজার করতে আসা হেনা আক্তার বলেন, এটা নারীদের বাজার। এখানে পুরুষরা কম আসে। নারীরা বাজার করলে সহজেই দরদাম করে কিনতে পারেন।
রাজিয়া খাতুন নামের আরেক নারী জানান, পুরুষেরা হাওরে জাল বাইতে যান। অনেকে ঢাকায় থাকেন। তাই বাধ্য হয়ে বাজারে আসতে হয়।
সবজি বিক্রেতা হাসেম মিয়া বলেন, ছাতিরচরে বেশির ভাগই নারী ক্রেতা। তবে দোকানদার সবাই পুরুষ। তাই কেউ কেউ এ বাজারকে মহিলা বাজার বলেও ডাকেন। বাজারটি সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত চলে।
ক্রেতা রুনা আক্তার বলেন, ছাতিরচরের এই বাজারটি মহিলাদের। এখানে পুরুষ ক্রেতা এসে জায়গা পান না। আমার সংসারের পুরুষ লোক সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার হিলচিয়া এলাকায় কাজে চলে গেছে। আরেকবার বাসায় এসে রাতে খাওয়াদাওয়া করবে। তাই বাজার করতে আসছি।
ক্রেতা আমেনা আক্তার বলেন, আমার পরিবারের সকল পুরুষ ঢাকা ও চট্টগ্রাম থাকেন। পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। বাজার করার জন্য তাই আমাকেই আসতে হয়। আজকে বাজার করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিল দিয়ে পরে বাড়ি যাব। এই বাজারে মহিলা ক্রেতাই বেশি। কারণ পুরুষ লোক কেউ বাড়িতে থাকে না।
স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, এই বাজারে আমরা নারীদের জন্য আসতে পারি না। এখানে পুরুষ বিক্রেতা হলেও ক্রেতা সবাই নারী। তাই গ্রামের মানুষ এই বাজারকে নারীদের বাজার বলে ডাকেন। শুধু বাজার করা না সংসারের সকল কাজ নারীদের করতে হয়ে। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি সকল কিছু নারীদের দেখাশোনা করতে হয়।
এ বিষয়ে ছাতিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, বাজারটির কোনো ইজারা নেই। অলিখিত ভাবে বাজারটির দেখাশোনা করি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। নিরাপত্তার কোন সমস্যা না থাকলেও পরিচালনার জন্য একটি কমিটি থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এআই