ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে শিক্ষক ও অবকাঠামো ছাড়াই শুরু হওয়া এই কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অন্য বিভাগের শিক্ষকদের দিয়ে চালানো হচ্ছে পাঠদান।
ইতিহাস বিভাগে এখনো কোনো স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এবং বাইরের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। বিভাগের জন্য কোনো নিজস্ব ক্লাসরুম বরাদ্দ নেই। দর্শন বিভাগের একটি কক্ষে খালি থাকা সাপেক্ষে ক্লাস চলছে।
ইতিহাস বিভাগের ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। বিভাগের নাম থাকলেও নেই নিজস্ব কোনো জায়গা বা শিক্ষক। বিভাগের শিক্ষার্থী জুনাইদ হোসেন বলেন, "আমাদের নিজস্ব রুম নেই, অন্য বিভাগের রুম খালি থাকলে ক্লাস করতে হয়। এটা খুব অস্বস্তিকর।"
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরো বাড়িয়েছে অবকাঠামোর অভাব। দর্শন বিভাগের কক্ষের দরজায় কাগজ সেঁটে লেখা ‘ক্লাসরুম, ইতিহাস বিভাগ’, যা অস্থায়ী ব্যবস্থার প্রমাণ।
ইতিহাস বিভাগ চালুর অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চলতি বছরের জানুয়ারিতে। একই সঙ্গে চারজন শিক্ষক ও দুজন কর্মচারী নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রথমবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ৪ এপ্রিল। তবে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখরের দায়িত্বকালে তা সম্পন্ন হয়নি। পরে নতুন প্রশাসন গত ২৩ অক্টোবর আবারো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ১৭ নভেম্বর আবেদন জমার শেষ সময় ছিল। তবে এখনো নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. হাবিবুল উল মাওলা, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ কে এম মাসুদুল মান্নান এবং অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রমজান আলী আকন্দকে ইতিহাস বিভাগের পাঠদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষক ছাড়াই বিভাগ চালুর ঘটনাকে অনিয়ম হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “বিশেষায়িত শিক্ষক ছাড়া বিভাগ চালু করা মানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা। এটা নীতিগতভাবে ভুল।”
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানান, অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, “নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। আশা করি, শিগগির সমস্যার সমাধান হবে।”
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছি। চেষ্টা করছি দ্রুত শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ সম্পন্ন করতে।”
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়াই বিভাগ চালু করায় তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সেশনজটের আশঙ্কা তাদের মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া না হলে শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এইচএ