বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা, র্যাগিং, হলে সিট বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১৮ জনকে বহিষ্কারসহ ও ৩১ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।
এর মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কার বা, ছাত্রত্ব না থাকলে সনদ বাতিলের শাস্তি পাওয়া ছয়জন শিক্ষার্থী হলেন- রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব, সাবেক সভাপতি সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জয়ন্ত কুমার রায় এবং হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মিশকাত হাসান।
দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- সমাজকর্ম বিভাগের মো. শামীম রেজা, মো. আব্দুল্লাহ আত তাসরীফ, মিনহাজুল ইসলাম ও মুজাহিদ আল হাসান এবং আরবি বিভাগের আরিফুল ইসলাম।
এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- সমাজকর্ম বিভাগের আলফি শাহরিন আরিয়ানা ও জারিফা আহনাফ ইলমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মো. আহসানুল হক মিলন এবং দর্শন বিভাগের কিশোর পাল।
ছয়মাসের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছেন- সমাজকর্ম বিভাগের আনিকা আলম উষা ও মরিয়ম আক্তার শান্তা। ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার শাস্তি পেয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাস। শুধু পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার শাস্তি পেয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল হোসেন নাবিল।
এছাড়া, আবাসিকতা বাতিলের শাস্তি পাওয়া ১৩ জন শিক্ষার্থী হলেন- আইন বিভাগের তাজরীন আহমেদ খান মেধা, চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের মোছা. আশা খাতুন, ইংরেজি বিভাগের নবনিতা বিশ্বাস, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের নুসরাত জাহান পাপড়ি, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নূর-ই-জান্নাত কথা ও ফারিনা জামান মিম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের লিমা খাতুন, সংস্কৃত বিভাগের বাবলি আক্তার, নৃবিজ্ঞান বিভাগের জাফরিন খান প্রিয়া, চারুকলা বিভাগের বাবলী ইসলাম নিঝুম, লোকপ্রশাসন বিভাগের রাইতাহ ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগের কাজী উর্বি ইয়াসমিন রুপ এবং ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের আফ্রিদা বিনতে ইকবাল।
মুচলেকা দেয়া পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- ফোকলোর বিভাগের শামীমা ইয়াসমিন জীবন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের নাছরিন আক্তার নেহা, ইতিহাস বিভাগের তানজিনা আক্তার; চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের মোছা. হুমায়রা আক্তার এবং চারুকলা বিভাগের মোছা. তামান্না তাসনিম আরিতা।
এরমধ্যে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রমাণিত অপরাধের জন্য শাস্তি প্রদান করা হলেও অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে পুনরায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই পাঁচজন হলেন- সংস্কৃত বিভাগের বাবলি আক্তার, নৃবিজ্ঞান বিভাগের জাফরিন খান প্রিয়া, চারুকলা বিভাগের বাবলি ইসলাম নিঝুম, লোকপ্রশাসন বিভাগের রাইতাহ ইসলাম এবং দর্শন বিভাগের রাইতাহ ইসলাম
এর আগে শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়ার কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শৃঙ্খলা উপ-কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ১১ ডিসেম্বর উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করা হয়। ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৫৩৫তম সভায় ওই সুপারিশকৃত শাস্তি অনুমোদন করা হয়।
অপরাধের মধ্যে রয়েছে- র্যাগিং, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি হামলা, ষড়যন্ত্র, ইন্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, ভয়ভীতি, হলে সিট বাণিজ্য এবং গণরুমের ছাত্রীদেরকে জোরপূর্বক শ্লোগান দিতে বাধ্য করা, হলের কক্ষের তালা ভেঙ্গে কক্ষ দখল, গভীর রাতে ছাত্রীদের ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে মিটিং করা, শিক্ষার্থীদের ব্লাকমেইল করা, শিক্ষার্থীদের জিনিস চুরি, দূর্ব্যবহার করা, নেশাদ্রব্য সেবন করা, উচ্চস্বরে গান-বাজনা বাজিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো, রাতে নিজ কক্ষে নিয়ে গিয়ে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো, মোবাইল ফোন-পেনড্রাইভ ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্রে তল্লাশি চালানো, হত্যার হুমকি প্রদান, শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন ও অত্যাচার ইত্যাদি।
এআই