শুরু থেকেই বাঙালি ভোজনরসিক জাতি। ভাতের প্লেটে এক টুকরো মাংস থাকলেই যেন আনন্দে ভরে ওঠে মন। এ কারণেই মাংসের চাহিদা বরাবরই উর্ধ্বমুখী আমাদের দেশে। তবে এ ক্ষেত্রে একটু বেশিই চাহিদা সম্পন্ন মাংসের তালিকায় ছাগলের মাংস অন্যতম। এর কারণ মাংসের স্বাদ এবং সব ধর্মের মানুষের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা। বিশেষত উৎসব-পার্বণে ছাগলের মাংসের ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলই প্রধান জাত। তবে আকারে ছোট হওয়ায় এই জাতের ছাগল থেকে বছরে মাংস উৎপাদনের পরিমাণ তুলনামূলক কম। এছাড়া ছাগল পালনে প্রচলিত ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে উৎপাদন ঘাটতি এবং বাজারমূল্য বৃদ্ধি পায়।
এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় মা ছাগলকে উচ্চ মাত্রার শক্তি এবং আমিষযুক্ত খাদ্য সরবরাহ করলে তাদের বাচ্চার বৃদ্ধি দ্বিগুণ হয় এবং মৃত্যুহারও কমে যায়। পাশাপাশি মা ছাগলের প্রজনন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
গবেষণার প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, ৬৩টি ব্ল্যাক বেঙ্গল মা ছাগলকে ৯টি দলে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি দলে ৭টি মা ছাগল ছিল। তিনটি ভিন্ন মাত্রার বিপাকীয় শক্তি (নিম্ন, মাঝারি, উচ্চ: যথাক্রমে ৮.৬৭, ১০.৪, ১১.৭৩ মেগাজুল/কেজি ড্রাই ম্যাটার) এবং তিনটি ভিন্ন মাত্রার আমিষ (নিম্ন, মাঝারি, উচ্চ: যথাক্রমে ১০%, ১৪%, ১৮%) সরবরাহ করা হয়।
সাপ্তাহিক ভিত্তিতে মা ছাগল এবং তাদের বাচ্চার ওজন রেকর্ড করা হয়। মাংসের গঠন, কোষের গঠন এবং পেশী তন্তুর বিকাশের সাথে সম্পর্কিত জিনের অভিব্যক্তি পর্যবেক্ষণের জন্য ছয় মাস বয়সী পুরুষ বাচ্চা জবাই করা হয়। সমস্ত উপাত্ত ৩×৩ ফ্যাক্টরিয়াল পদ্ধতিতে এবং কিউপিসিআর ভিত্তিক জিন অভিব্যক্তি বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে হিসাব করা হয়।
অধ্যাপক মনিরুজ্জামান আরও বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ মাত্রার শক্তি ও আমিষযুক্ত খাদ্য গ্রহণকারী মা ছাগলের ওজন বৃদ্ধির হার অন্যান্য দলের তুলনায় বেশি। এই খাদ্য তাদের দুধ উৎপাদন, রক্তের বিপাকীয় উপাদান (রক্তরসের শর্করা, আমিষ, অ্যালবুমিন ও গ্লোবুলিন) এবং ল্যাকটেশন সময় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।
তবে মাঝারি মাত্রার শক্তি ও উচ্চ মাত্রার আমিষ গ্রহণকারী মা ছাগলগুলোর পুনঃপ্রজনন ক্ষমতা অন্যান্য দলের তুলনায় কম।
গর্ভাবস্থায় উচ্চ মাত্রার শক্তি ও আমিষযুক্ত খাদ্য বাচ্চার জন্মের সময় ওজন, দৈহিক বৃদ্ধি, ড্রেসিং শতাংশ (৪৫.৮%), পেশী তন্তুর ব্যাস এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনের অভিব্যক্তি ( মায়োজেনিক রেগুলেটরি ফ্যাক্টর ৫ ও হার্ট ফ্যাটি অ্যাসিড বাইন্ডিং প্রোটিন) উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। এছাড়া এটি বাচ্চার মৃত্যুহার কমাতেও সাহায্য করে।
অন্যদিকে, নিম্ন মাত্রার শক্তি ও আমিষ গ্রহণকারী দলের বাচ্চাদের পেশী তন্তুর ঘনত্ব এবং মায়োস্ট্যাটিন জিনের অভিব্যক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দেখা গেছে।
পিএম