ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা অটুট সাহসে শিশু হত্যাকারী ও পৈশাচিক ঘাতকদের মোকাবিলা করেছে। মানবতার বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুরতাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য সংস্কার নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ ২০২৪-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ রূপান্তর পর্বে প্রবেশ করার অধিকার অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ রূপান্তর দ্রুত সফলভাবে কার্যকর করার জন্য আমাদের সব শক্তি নিয়োজিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে। পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। সব ধরনের বৈষম্য অবসানের রাজনৈতিক আয়োজন নিশ্চিত করে এদেশে গণতান্ত্রিক ও নাগরিক সমতাভিত্তিক একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এ কাঙ্ক্ষিত রূপান্তরের লক্ষ্য হবে।
তিনি বলেন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণ ছাড়া জুলাইয়ের শহীদদের আত্মদান অর্থবহ হতে পারে না। ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশকে আদর্শভিত্তিক সব রকমের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে গভীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার প্রিয় বাংলাদেশকে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের পথে ফেরানোর লক্ষ্যে কাজ করছি।
লিখিত বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধু বাংলাদেশকে মুক্তই করেনি, আমাদের স্বপ্নকেও তুমুল সাহসী করে তুলেছে। বাকহীন বাংলাদেশ জোরালো কণ্ঠে আবার কথা বলার শক্তি ফিরে পেয়েছে। এই দৃঢ় কণ্ঠ আবার ঐক্য গঠনে সোচ্চার হয়েছে।
তিনি বলেন, ঐক্য আমাদের মূল শক্তি। জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের ঐতিহাসিক মাত্রায় বলীয়ান করেছে। গত পাঁচ মাসে এই ঐক্য আরও শক্তিশালী হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধ শক্তি আমাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির ক্রমাগত প্রয়াস চালাতে থাকায় আমাদের ঐক্য আরও মজবুত হচ্ছে। এই ঐক্যের জোরেই আমরা এখন অসাধ্য সাধন করতে পারি। এখনই আমাদের সর্বোচ্চ সুযোগ। এমন অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে যা সব নাগরিকের জন্য সম্পদ ও সুযোগের বৈষম্যহীনতার নিশ্চয়তা দেবে।
তিনি আরও বলেন, যত নিম্নআয়ের পরিবারেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন- প্রতিটি নাগরিকের, তিনি নারী হোক বা পুরুষ, তিনি যেন বিনা বাধায় তো বটেই বরং রাষ্ট্রের আয়োজনে তার সৃজনশীলতা প্রকাশ করে যেন যে কোনো পর্যায়ের উদ্যোক্তা হতে পারেন। অথবা তিনি যে ধরনের কর্মজীবন চান তা-ই যেন বেছে নিতে পারেন।
ড. ইউনূস বলেন, এমন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ থাকবে যেখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু এই পরিচিতি অবান্তর হয়ে পড়বে। সবার একটিই পরিচয়- আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্র আমাকে আমার সব অধিকার দিতে বাধ্য। রাষ্ট্রের কাছে এবং অন্য নাগরিকের কাছে আমার অন্য কোনো পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
‘যেখানে ব্যক্তি বন্দনার কোনো সুযোগ থাকবে না। দেশের ভেতরে বা বাইরে প্রভু-ভৃত্যের কোনো সম্পর্কের সুযোগ থাকবে না। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার সুবাদে হবো বিশ্ব নাগরিক। দেশের মঙ্গল সাধন করা যেমন হবে আমাদের নাগরিক দায়িত্ব, তেমনই বিশ্বের মঙ্গল সাধন করাও আমাদের কর্তব্য, এ দায়িত্বও আমরা সমানভাবে পালন করবো।’
আমাদের তরুণ-তরুণীরা দ্রুত এ দুই দায়িত্ব সমানভাবে পালন করার জন্য প্রস্তুতি নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।
এইচএ