সবজির রাজ্য যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ও বারীনগর সাতমাইল পাইকারি বাজারে ফুল কপির দাম নেই। ক্রেতারা ফুল কপির দিকে তাকিয়েও দেখছে না।
ইতিমধ্যে বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) সকালে ফুলকপি বাজারে না আনতে চুড়ামনকাটির পাইকারি বাজারে মাইকিং করা হয়েছে। এদিন প্রতি পিস ফুলকপি ১ থেকে ৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কিন্তু সেখানকার খুচরা বাজারে ফুলকপি ৮ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। আর যশোর শহরের বড় বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে বাজারে প্রতি পিস ফুল কপি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে চাষি ও সাধারণ ক্রেতারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চাষিরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে ফুল কপির চাহিদা নেই। তারা বাজারে শ’ শ’ পিস কপি নিয়ে গেলেও দাম পাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের ফুলকপি কেনার প্রতি কোন আগ্রহ নেই। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থেকে প্রতি পিস ৫০ পয়সা থেকে ১ থেকে ২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে লাভ তো দুরের কথা বাজারজাত করার গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিকের টাকা পরিশোধ হচ্ছেনা। এতে অনেকেই আর ফুল কপি বাজারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। চাষিরা বলছেন, ফুলকপি বাজারে নিয়ে কেউ কিনতে চাইছেন না। এমন একটি অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে করে কপি ছাগল গরু দিয়ে খাওয়াতে হবে।
চাষি শফিকুল ইসলাম ও মিন্টু হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে পাইকারি বাজারে ফুলকপির কোন চাহিদা ছিলো না। বাজারে চাষিরা কপি আনলেও ক্রেতারা তাকিয়ে দেখেননি। বেলা ১০ টার দিকে পাইকারদের পক্ষ থেকে ফুলকপি না আনার জন্য মাইকিং করা হয়।
চাষি আবুল কালাম, শহিদুল ইসলাম, আবেদ আলীসহ আরও কয়েকজন জানান, হঠাৎ করে পাইকার বাজারে ফুলকপির দাম কেনো পড়ে গেল এটা তাদের বোধগম্য নয়। তাদের ধারণা পাইকার ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে তারা ফুল কপির ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। ফুল কপি একেবারে মূল্যহীন হয়ে গেছে। পাইকাররা সিন্ডিকেট তৈরি করে নিজেরাই দাম কমিয়ে দিয়েছে বেশি লাভবান হওয়ার জন্য। চাষিদের ভাষ্যমতে , পাইকার ও খুচরা বাজারে ফুল কপির দামে রয়েছে বিস্তর ফারাক। চুড়ামনকাটি ও সাতমাইলের খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকায়। আর যশোর শহরের বড় বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়।
আব্দুর রশিদ নামে নামে এক খুচরা বিক্রেতা জানান, আমি ফ্রেশ কপি ছাড়া বিক্রি করিনা। পাইকারি বাজারে হয়তো নিম্নমানের ফুল কপির দাম ১ টাকা হতে পারে। তিনি একটু বেশি দামে ভালো মানের কপি কিনেছেন। এজন্য একটু বেশি দামে বিক্রি করছেন।
চুড়ামনকাটি বাজারে কথা হয় পাইকার ব্যবসায়ী সানোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, মানুষ এখন আর ফুলকপি খেতে চাইছেন না। যে কারণে বাজারে কপির চাহিদা নেই। ফলে তারা ফুলকপি কিনছেন না। যে কারণে পাইকারি বাজারে ফুলকপি না আনার জন্য চাষিদের আহবান জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী সবজি চাষিরা জানিয়েছেন, খুচরা বাজারে ফুলকপির এখনো বেশ চাহিদা রয়েছে। তারা পাইকার ব্যবসায়ীদের কারসাজির শিকার হয়েছেন। খুচরা বাজারে ৮ থেকে ১০ টাকা দামে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে। অথচ পাইকার বাজারে ফুলকপি মূল্যহীন। পাইকার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছে করে কপি কিনতে চাইছে না। যে কারণে তারা পানির দরে কপি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারিভাবে সঠিক বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা চালু থাকলে পাইকাররা ইচ্ছামতো সিন্ডিকেট করতে পারতো না।