দশানী নদীর পানির উপর ভাসমান হাঁসের খামার। সাদা ধবধবে হাঁসের পাল পানিতে খেলা করছে। উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের দশানী ব্রিজের নিচে এমনি একটি ভাসমান হাঁসের খামার গড়েছেন শুক্কুর আলী নামে এক যুবক। ভাসমান খামারে তার মাসিক আয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। শুক্কুর আলী পাশ্ববর্তী শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের খঞ্চেপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাল দিয়ে ঘিরে মাঝে পানিতে হাঁস রেখেছেন। পাশেই টিন ও বাশেঁর খুটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঘর। রাতের বেলায় সেই ঘরেই রাখা হয় হাঁস। তার এই খামারে বেইজিং জাতের তিন হাজার হাঁস রয়েছে। হাসের খামারেই ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে তার। অর্থাভাবে বেশিদুর পড়াশোনা করতে পারেননি শুক্কুর আলী। ছোট বেলা থেকেই পশু পাখি পালনের প্রতি ছিল তার ব্যাপক দূর্বলতা। অভাব অনটনের সংসারে দিন কাটতো তার। শখের বসে ২০১০ সালে ১৫টি মুরগী ও ২০টি হাসঁ কিনে বাড়িতেই পালন শুরু করেন।
হাসঁ মুরগী পালনে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও ইউটিউবে দেখে দেখে হাসঁ পালন করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তার ছোট্ট খামার বড় হতে থাকে। এখন তার তিনটি খামারে বেইজিং জাতসহ বিভিন্ন জাতের ৮-৯ হাজার হাসঁ রয়েছে। তিনটি খামার ও হ্যাচারিতে শ্রমিক রয়েছে প্রায় ২০ জন। ডিম ফুটানোর জন্য নিজ বাড়িতেই একটি হ্যাচারী করেছেন।
অদম্য ইচ্ছা থাকলে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন তার প্রমাণ শুক্কুর আলী। হাঁস পালন করেই নিজ বাড়িতে গড়েছেন হ্যাচারি। তিনটি খামার থেকে যে ডিম পান তার অর্ধেক বিক্রি করেন এবং অর্ধেক নিজের হ্যচারীতে বাচ্চা ফুটান। তারপর প্রতিটি বাচ্ছা ১শ' থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করেন। বছর জুড়েই তার হ্যাচারিতে ফুটে বাচ্চা। দুই-তিন দিন বয়সী প্রতিটি বাচ্চা বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। দূর দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে যায় বাচ্চা। হাঁস পালন করেই স্ত্রী, সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখেই কাটছে তার দিন। শুক্কুর আলী এখন একজন সফল খামারি।
শুক্কুর আলী বলেন, বেইজিং জাতের হাঁস টানা দেড় বছর ডিম দেয়। তিনটি খামারে প্রায় ১০ হাজার হাসঁ রয়েছে। খাদ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। শ্রমিকদের বাড়তি বেতন দিতে হয়। সব মিলিয়ে এখন লাভ অনেক কম হয়। এছাড়াও ঝুকিঁ রয়েছে। অসুখ হলে অনেক হাসঁ মারা যায়। সরকারি সূযোগ-সুবিধা পেলে আরও বড় আকারে খামার গড়ে তুলতে পারবেন বলে জানান শুক্কুর আলী।
বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম শাহীন আল আমীন বলেন, শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি শুক্কুর আলীর মত করে চিন্তা ভাবনা করতো তাহলে চাকুরির পিছে ছুটতে হতো না। বরং এরকম খামার গড়ে নিজেরাই অনেক বেকারের কর্মসংস্থান করতে পারতো। বেকারত্ব দূরীকরণে শুক্কুর আলী সত্যিই অনুকরণীয়। শুক্কুর আলী দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে সফল হতে হয়।
এআই