সূর্যের আলোয় থাকে আলট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুনি রশ্মি, যা ভিটামিন ডি তৈরি করতে কাজে লাগে। কিন্তু ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বেশি থাকলে ভিটামিন ডি কম উৎপন্ন হয়। মেলানিন হলো প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন, যা অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে। বর্মের মতো কাজ করে। সাদা চামড়ার চেয়ে কালো চামড়ায় (ডার্ক স্ক্রিন) যেহেতু মেলানিন বেশি থাকে, সে কারণে কালো চামড়ায় ভিটামিন ডি উৎপাদন কম হবে।
ভিটামিন ডির আরেক নাম ‘সানশাইন ভিটামিন’। সূর্যের আলো যখন আমাদের গায়ে এসে লাগে, ত্বকে জমে থাকা কোলেস্টেরল থেকে ভিটামিন ডি আপনা–আপনি উৎপন্ন হয়। এরপর সেটি রক্তে মিশে লিভার আর কিডনিতে গিয়ে অ্যাকটিভ ভিটামিন ডিতে পরিণত হয়। অর্থাৎ আরও শক্তিশালী হয়। শরীরে এর কাজ হলো রক্তের ক্যালসিয়াম শোষণ করে এর পরিমাণ ঠিক রাখা, হাড় শক্ত ও মজবুত রাখা, পেশির শক্তি বজায় রাখা, কিছু কিছু রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা ইত্যাদি। একধরনের ভিটামিন হলেও নানাবিধ বিপাকীয় প্রভাবের জন্য ডিকে এখন একটি হরমোন বলা হয়।
কীভাবে পাবেন ভিটামিন ডি: যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মতে, সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন ১০ থেকে ৩০ মিনিট সারা গায়ে রোদ লাগিয়ে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া সম্ভব। শরীর ঢেকে রাখলে, সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে এই ভিটামিন ডি উৎপাদন কম হবে। শিশু ও বয়স্কদের ভিটামিন ডি একটু বেশি লাগে, অন্যদের প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ ইউনিট দরকার।
ভিটামিন ডি কমলে শিশুদের এক ধরনের হাড়ের রোগ। এতে শিশুর হাত-পা বেঁকে যায়। ভিটামিন ডির অভাবে এই রোগ হয়। বড়দের হয় অস্টিওম্যালেসিয়া। এই রোগীদের গা, হাত-পা, হাড়ে ব্যথা হতে দেখা যায়। ভিটামিন ডির অভাব থাকলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ভঙ্গুর হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যেতে পারে। ভিটামিন ডির ঘাটতি থেকে হাড়ের এসব সমস্যা ও রোগ ছাড়া আরও নানা রকমের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন হার্টের সমস্যা, নানা ধরনের ক্যানসার, মেটাবলিক সিনড্রোম, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া। সংক্রমণ ও অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি ও প্রকোপ বাড়াতে ভূমিকা রাখে ভিটামিন ডির ঘাটতি। যাঁদের পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি ছিল, তাঁদের কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রকোপ ও জটিলতা যে কম হয়েছে, তা গবেষণানির্ভর সত্য।
এইচএ