ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস বলেছেন, অধিভুক্ত সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও থাকছে না, আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও থাকছে না। শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সাত কলেজের জন্য আলাদা কাঠামো তৈরি করা হবে।
সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসির সঙ্গে বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, ছাত্রদের ছয়টি দাবিই আমরা উত্থাপন করেছি। দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পদত্যাগ বা এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের এখতিয়ারে নেই।
ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক অত্যন্ত সুন্দর সম্পর্ক হওয়া উচিত। এ সম্পর্কে জ্ঞান আদান-প্রদানের বিষয় থাকে। ফলে এটি খুব জরুরি। আমরা আমাদের ছাত্রদের সঙ্গে এক ধরনের ব্যবহার করি। ঢাবি তাদের ছেলেদের সঙ্গে নিজেদের মতো ব্যবহার করে। তবে ছাত্রদের সঙ্গে যে মৌলিক সম্পর্ক, সেটি সব ছাত্রের সঙ্গে থাকা দরকার।
কাল যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এর আগে, দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয়ের সভাকক্ষে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের জরুরি বৈঠকে সরকারি সাত কলেজকে আলাদা করার সিদ্ধান্তসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গে ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজের পথচলা মোটেও ‘নির্বিঘ্ন’ ছিল না। ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ’–এমন শিরোনাম গত আট বছরে বহুবার দেখেছে মানুষ।
গতবছর আগস্টে ক্ষমতায় পালাবদলের পর এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন।
আনন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা বলে আসছিলেন, অধিভুক্তির কারণে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়হীনতায় ভুগতে হয় তাদের। নিজেদের পরিচয় দিতে গিয়ে তারা নানা সমস্যায় পড়েন।
সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোতে আনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা।
এর মধ্যে গত রোববার সন্ধ্যার যে কর্মসূচির সূত্র ধরে সোমবারের ‘আলাদা হওয়ার’ সিদ্ধান্ত এল, সেই খবরের শিরোনামও ছিল ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ’।
সেদিন সন্ধ্যায় নানা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব ও টেকিনিক্যাল মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ, দাবি-দাওয়া জানাতে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের কাছে গিয়েছিলেন; কিন্তু উপউপাচার্য তাদের ‘অপমান’ করেন।
ওই অভিযোগে রাত সোয়া ১১টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা কলেজের বিভিন্ন হল থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। তারা নীলক্ষেত মোড় হয়ে ক্যাম্পাসের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে তারা উপউপাচার্যের বাসভবনে অভিমুখে রওনা হওয়ার ঘোষণা দেন।
এদিকে তাদের এই অবস্থানের খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে লাঠি সোঁটা নিয়ে স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে জড়ো হতে থাকেন।
দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে মধ্যরাতে শুরু হয় সংঘর্ষ; ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। মোতায়েন করা হয় চার প্লাটুন বিজিবি। তারপরও রাতভর উত্তেজনা চলে দুই পক্ষের মধ্যে।
সোমবার সকালে ‘হামলাকারীদের’ বিচার দাবিতে নিজ নিজ ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর তাদের সোমবারের সব চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সোমবারের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। রাজধানীতে বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ। এর মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২টায় জরুরি সভায় বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাত কলেজের অধ্যক্ষরা।