এইমাত্র
  • সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে আলাদা করে দেবো: হাসনাত
  • দিল্লিতে ২৭টি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতি হবে মেসির ফুসফুুসে!
  • গালফ প্রো কার চ্যাম্পিয়ন হলেন অভিক আনোয়ার
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে
  • নেপালকে হারিয়ে সেমির পথে বাংলাদেশ
  • বিএনপির প্রার্থী পুনঃবিবেচনার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
  • পিএসএলের কারণে পিছোতে পারে পাকিস্তানের বাংলাদেশ সফর
  • ৩০ বছর পর রোগীর পেট থেকে বের হলো লাইটার
  • বার্সেলোনাকে কিনতে ১০ বিলিয়ন ইউরো’র প্রস্তাব সৌদি যুবরাজের
  • বিজয় দিবসে যেসব সড়ক এড়িয়ে চলতে বলেছে ডিএমপি
  • আজ সোমবার, ১ পৌষ, ১৪৩২ | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ফুলবাড়ীতে অবাধে পোনা শিকার, বিলুপ্তির পথে দেশীয় মাছ

    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ০৪:৩০ পিএম
    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ০৪:৩০ পিএম

    ফুলবাড়ীতে অবাধে পোনা শিকার, বিলুপ্তির পথে দেশীয় মাছ

    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ০৪:৩০ পিএম

    কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ধরলা-বারোমাসিয়া নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে বৈরালীসহ বিভিন্ন দেশীয় মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময় এ অঞ্চলের নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়তো বৈরালীসহ রুই কাতলা টেংনা সহ বিভিন্ন মাছ। তবে সবচেয়ে বেশী ধরাপড়তো বৈরালী মাছ। সেই বৈরালী আজ বিলুপ্তির পথে।

    ২০১৫ সালে বৈরালী মাছটি বিলুপ্তি ঘোষনা করে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষন সংস্থা আই ইউ সি এম। তবে স্থানীয় মৎস্য গবেষকরা দীর্ঘদিন বৈরালী মাছের গবেষনার পর পুকুরে সফল ভাবে প্রজনন করতে সক্ষম হয়েছে। ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীতে প্রতিবছর শীত ও গ্রীষ্মের সময় সামান্য পরিমানে বৈরালী সহ বিভিন্ন দেশীয় মাছ পাওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুমে একদম পাওয়া যায় না। বর্তমানে নদ-নদীতে বৈরালী রুই কাতলা টেংরা, বালিয়া,বাইম, রুই বোয়াল মাছ পাওয়া যায় তাও পরিমানে অনেক কম।

    এ সব ধরলা-বারোমাসিয়া নদীতে কয়েকশ জেলে প্রতিদিন জাল ফেলে কয়েক বার টানলেও আশানুরুপ বৈরালী সহ দেশী কোন মাছ পাওয়া যায় না। যে টুকু মাছ পাওয়া যায় তাও চড়া দামে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি বৈরালী মাছ ৬শ থেকে ৭শ টাকা দরে বিক্রি হয় অন্যান্য মাছ সাইজ ভেদে ৮শ থেকে প্রতিকেজি ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

    উপজেলার ধরলা, বারোমাসিয়া ও নীলকমল নদীতে যতটুকু বৈরালী সহ বিভিন্ন মাছ এখনও যে মাছ আছে তাও হুমকীর মুখে। কারণ আধুনিক পদ্ধতিতে নদীতে ব্যাটারী ফেলে কারেন্ট শক দিয়ে মাছ ধরছে জেলেরা। এতে মাছের ডিম সহ পোনা মাছ গুলো মারা যায় প্রতিনিয়ত। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বৈরালী সহ নদীর মাছ ব্যাটারী পদ্ধতির কারণে আর কোন মাছ পাবে না। নদ-নদী গুলোতে পানির সরবরাহ কমে যাওয়া ও মাত্রারিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার, কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে পোনা মাছ শিকারসহ অভয় আশ্রম থেকে মা মাছ শিকারের ফলে আজ বিলুপ্তির পথে সুস্বাধু বৈরালীসহ দেশীয় মাছ।

    ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একশ্রেণীর লোকেরা প্রতিযোগীতামূলক কারেন্ট জাল ও অন্যান্য জাল দিয়ে ডিমওয়ালাসহ পোনা মাছ অবাধে শিকার করছে। স্থানীয় ভাবে তেমন কেউ অবাধে মাছ শিকারকারীদে প্রতিবাদ করছে না। ফলে এ অঞ্চলের মাছের নিরব কান্না শুনার যেন কেউ নেই বলে মনে করছেন অনেকেই।

    এসব নদী ও জলাশয়ে মাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ে থাকে। বাংলা বছরের বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত নানা প্রজাতির মাছগুলো নদী নালা খাল-বিলে ডিম ছাড়ে। এ সময় মাছগুলো শিকার না হলে ব্যাপক আকারে মাছের বিস্তার দেখা যেত।

    কিন্তু একশ্রেণীর লোকজন কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন ধরণের যন্ত্র দিয়ে মাছগুলো শিকার করছে। যদিও মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে এসব লোকদের হাত থেকে মাছগুলোকে রক্ষা করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। এ বছর অভিযান শুরু না করায় অবাধে কারেন্ট জাল, মা-মাছ ও পোনা মাছ শিকার করছে।

    মৎস্যজীবীরা জানান, ২০/২৫ বছর আগেও ধরলা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা দুধকুমার ও বারোমাসিয়া নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। অথচ বছরের পর বছর ধরে ডিমওয়ালা মাছ ধরা ও রেনু পোনা নষ্ট করার কারণে এসব নদ-নদী থেকে দেশী মাছ বৈলারী, বালিয়া, বালাচাটা, সরপুঁটি, টেংরা, টাকি, পুটি, শিং, মাগুর, কৈ, খলিসা, বাউশ, কালবাউশসহ কমপক্ষে ২০ প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। ইতিমধ্যে ওই সব নদীতে প্রতিদিনেই ডিমওয়ালা মাছ ও রেনু পোনা শিকারীদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মৎস্য শিকারীরা প্রতি বছরই বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত এসব এলাকা থেকে ডিম ওয়ালা মাছ ধরে হাট-বাজার গুলোতে বিক্রি করে থাকে।

    উপজেলার সোনাইকাজী আবদুল মতিন ও জব্বার জানান এক সময় ধরলা ও বারোমাসিয়া প্রচুর বৈরালী সহ রুই কাতলা টেংনা বোয়াল সহ বিভিন্ন পাছ পাওয়া যেত। কিন্তুু বর্তমানে সারাদিনে জাল টেনে এক কেজি দেড় কেজি মাছ পাওয়া কষ্টকর হয়। কিন্তু আমাদের উপায় নেই। বাধ্য হয়ে মাছ শিকার করে জীবন জীবিকার নির্বাহ করি।

    বালারহাট বাজারের দেশি মাছ বিক্রেতা জলধর বিশ্বাস, নিরঞ্জন বিশ্বাস ও আফজাল হোসেন আগে বৈরালী, টেংনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যেত। এখন সেই মাছের সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেছে। তবে আমরা প্রত্যেকে প্রতিদিন দুই তিন ও সর্বোচ্চ চার পাঁচ কেজি মাছ স্থানীয়দের কাছে ক্রয় করে বালারহাট বাজারে বিক্রি করি। অন্য মাছের চেয়ে ধরলা ও বারোমাসিয়া মাঝের দাম একটু বেশি। আমরা বৈরালী মাছের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০, টেংনা ৬০০ টাকা দনে বিক্রি করি।

    বালারহাট মাছ বাজারের ক্রেতা ইয়াদুল হক নয়ন, শৈলান চন্দ্র রায় ও মানিক মিয়া জানান, বৈরালী টেংনা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ প্রতিদিন বাজারে বিক্রি করছেন। বাজারে ছোট বৈরালী উঠলেও প্রচুর দাম। প্রতিকেজি মাছ ৫৫০ থেকে ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই মাছ গুলোর চাহিদা থাকায় দাম বেশি। তবে এই দুই ক্রেতা এসব ছোট ছোট পোনা মাছে শিকারে মৎস্য বিভাগের কট্টর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা না হলে এই মাছ চিরদিনের মতো বিলুপ্ত হবে।

    উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানান, চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জেলে ও স্থানীয়রা যাতে এ সব নিষিদ্ধ চায়না জাল দিয়ে দেশি প্রজাতির পোনা মাছ শিকার না পারে ইতোমধ্যে জেলাদের সচেতন করা হচ্ছে। তবে আগামী শনিবার ও রবিবার মাইকিং করে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। সেই সাথে পোনা মাছ শিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…