পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চর বিশ্বাস এলাকায় গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নুরুল হকের ভাইসহ দু'পক্ষের ৬-৭ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করে গণঅধিকার পরিষদের কর্মী-সমর্থকরা।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে ধাপে ধাপে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় উভয় পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সংঘটিত হচ্ছে। এ ঘটনার জন্য গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ একে অপরকে দায়ী করেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবু নাঈম জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এলাকার ব্যবসায়ীদের নিয়ে নুরুল হক নুরের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম নুর চর বিশ্বাস বাজারে মতবিনিময় সভা করছিলেন। এ সময় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে অতর্কিত হামলা চালায় এবং নুরুল হক নুরের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম নুরকে মারধর করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার ক্ষুব্ধ লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর করে।
তিনি আরও বলেন, ‘রাতে প্রোগ্রাম শেষ করে ফেরার পথে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের পাতাবুনিয়া এলাকায় অবরুদ্ধ করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করার জন্য সংঘবদ্ধ হচ্ছে এবং বিএনপির ক্যাডাররা ত্রাস সৃষ্টি করছে। এতে এলাকার মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।’
এদিকে গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খান বলেন, ‘চর বিশ্বাসে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সভা করছিলেন। এ সময় ভিপি নুরের ছোট ভাই আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে তারা সেখানে হামলা চালায় এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর করেন। অফিসে চেয়ার ভাঙচুর করেন। এতে তাদের ১০-১২ জন নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুর রহমান জানান, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৫-৭ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানকার পরিস্থিতি এখন শান্ত। এদিকে পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী গিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিকেলে গলাচিপা পৌর শহরে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। গলাচিপা শহরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি পৌরমঞ্চ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে গলাচিপা অফিসার্স ক্লাবে ছাত্র অধিকার পরিষদের নবনির্বাচিত কমিটির পরিচিতি সভায় বক্তব্যকালে ভিপি নুর দাবি করেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের জন্ম না হলে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান হতো না।
এ ছাড়া তিনি স্থানীয় গলাচিপা-বন্যাতলী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বিএনপির এক ঠিকাদারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ঠিকমতো কাজ না করায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের নিজ এলাকা চর বিশ্বাসে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মী সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং বিএনপি অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়াও বক্তব্যে বিএনপির বিরুদ্ধে নুরুল হক নুর চাঁদাবাজি, দখলদারির অভিযোগ আনেন। এই বক্তব্য মিথ্যাচার দাবি করে বিএনপির নেতাকর্মীরা চর বিশ্বাস ও চর কাজলে বুধবার রাতে গলাচিপা পৌর শহরে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করে। তার বক্তব্যের জের ধরেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করেন, নুরুল হক নূর চর বিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাকের বিশ্বাস এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দখলদারি, চাঁদাবাজির মিথ্যাচার ও অপবাদ দিয়েছেন।
এনআই