রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে রূপলাল (৪৩) ও প্রদীপ দুইজন নিহত হয়েছেন। রূপলাল উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িহাটে শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলে নিহত হন।
গুরুতর আহত হয়ে তার ভাগ্নি জামাই প্রদীপ (৪২) রংপুর মেডিকেল কলেজে রবিবার (১০ আগস্ট) মারা যান।
নিহত রূপলালের মেয়ে নুপুর এবার এসএসসি পাস করেছে। রবিবার তাঁর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হওয়ার কথা ছিল। ছেলে রংপুরের চন্দন পাট এলাকার লালচানের ছেলে কমল (ডিপজল)।
কিন্তু মেয়ে নুপুরের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো না আর রূপলালের। বিয়ে ঠিক করতে আসা বরপক্ষের জন্য সৈয়দপুর থেকে বাংলা মদ নিয়ে ফিরছিলেন। আর সেই যাত্রা শেষ হলো গণপিটুনি খেয়ে লাশ হওয়ার মাধ্যমে।
জানা যায়, নিহত রূপলাল উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর ডাঙাপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন। পেশায় ছিলেন একজন মুচি। দীর্ঘদিন ধরে তারাগঞ্জ বাজারে জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন। রংপুর মেডিকেল কলেজের নিহত প্রদীপ তার ভাগ্নি জামাই। তাঁর বাড়ি মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর ছড়ান গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রবিবার (১০ আগস্ট) নুপুরের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা ছিল। মুচি সম্প্রদায়ের রীতিনীতিতে বিয়েতে বা কোন উৎসব অনুষ্ঠানে বাংলা মদ পরিবেশন এক ধরনের সামাজিক দায় হিসেবেই বিবেচিত। তাই শনিবার (৯ আগস্ট) রূপলাল ও জামাই প্রদীপ সৈয়দপুরের ভাটিখানা থেকে স্পিড ড্রিঙ্কের বোতলে বাংলা মদ সংগ্রহ করে মূল সড়ক (বিশ্বরোড) এড়িয়ে ভ্যানযোগে তারা গ্রামের ভেতরের পথ ধরে বাড়ি ফিরছিলেন।
উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট এলাকার ফরিদাবাদ মোড়ের কাছে বটতলা নামক স্থানে রাত ৮টার দিকে পৌঁছালে কয়েকজন যুবক তাদের অনুসরণ করে ব্যাগে কী আছে জানতে চায় এবং মদ ভর্তি ব্যাগটি কেড়ে নেয়। এরপর তারা চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে স্থানীয় জনতা জড়ো হয় এবং কিছু না বুঝেশুনেই চোর সন্দেহে বেধরক মারপিট শুরু করে।
পরে স্থানীয় জনতার মারপিটে রূপলাল ও প্রদীপের অবস্থা খারাপ হলে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বুড়িরহাট স্কুল মাঠে ফেলে রেখে যায়। রূপলালের সেখানেই ৯টার দিকে মৃত্যু হয়। আহত প্রদীপকে পুলিশ উদ্ধার করে প্রথমে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করালে (রবিবার) ভোর ৪টায় তারও মৃত্যু হয়।
এলাকায় যৌথ বাহিনী টহলে রয়েছে। তবে কাউকে আটক করা হয়নি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত শুরু করেছে। অপরদিকে, নিহত রূপলালের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
বর্তমানে রূপলালের লাশ তারাগঞ্জ থানায় ও প্রদীপের লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে।
তারাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম.এ. ফারুক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে রূপলালের পরিবারের থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এসআর