এইমাত্র
  • বার্সেলোনাকে কিনতে ১০ বিলিয়ন ইউরো’র প্রস্তাব সৌদি যুবরাজের
  • বিজয় দিবসে যেসব সড়ক এড়িয়ে চলতে বলেছে ডিএমপি
  • সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শামীমের বাড়িতে শোকের মাতম
  • রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধার পর খুলে দেওয়া হবে স্মৃতিসৌধের প্রবেশদ্বার
  • হাসিনা-কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল
  • কাজিপুরে মানসিক ভারসম্যহীন ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
  • সিরাজগঞ্জে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার
  • গভীর রাতে কৃষকের গরু জবাই করে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা
  • খড়ের আড়ালে চোলাই মদ পাচারের চেষ্টা, আগুন দিল জনতা
  • ওসমান হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
  • আজ সোমবার, ১ পৌষ, ১৪৩২ | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    মনপুরায় বাড়ছে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা, চিকিৎসার বদলে ভরসা ওঝার ঝাড়ফুঁকে

    মো. সবুজ, ভোলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১১:৫৬ এএম
    মো. সবুজ, ভোলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১১:৫৬ এএম

    মনপুরায় বাড়ছে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা, চিকিৎসার বদলে ভরসা ওঝার ঝাড়ফুঁকে

    মো. সবুজ, ভোলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১১:৫৬ এএম

    ভোলার মনপুরা উপজেলায় বৃদ্ধি পাচ্ছে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম থাকা সত্ত্বেও আক্রান্তরা হাসপাতালে না গিয়ে ভরসা করছেন ওঝার ঝাড়ফুঁকে। এতে বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি।

    গেল দুই দিনের ব্যবধানে এই উপজেলায় বিষধর সাপের কামড় খেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন দু'জন। এর মধ্যে ওঝার কাছে গিয়ে সময় বিলম্ব করায় একজনের মৃত্যু হয়েছে, অপরজন ওঝার কাছে ঝাড়ফুঁক নিয়ে ৮ ঘণ্টা পর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

    জেলায় চলতি বর্ষা মৌসুমে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা ৭৭ জন। এর মধ্যে গেল দুই মাসে এই উপজেলাতেই সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা ১৫ জন। এছাড়াও, জেলায় সাপের কামড় খেয়ে মৃত ৩ জন এই উপজেলারই বাসিন্দা। এতে উপজেলা জুড়ে দেখা দিয়েছে সাপ আতঙ্ক।

    এই উপজেলায় দেখা মিলছে গোখরা, জলপনা, সঙ্খিনীর মতো বিষধর সাপের। এই ধরনের সাপে কামড় দিলে ওঝার কাছে না গিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রচার প্রচারণা থাকলেও অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসার নামে নিচ্ছেন ওঝার ঝাড়ফুঁক। যার ফলে, মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

    আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার যুগেও যেনো এই উপজেলার মানুষ পিছিয়ে আছেন পুরানো কায়দার ওঝা, কবিরাজদের নিয়ে। এখানকার মানুষ "ওঝা" ও কবিরাজদের প্রতি অতিমাত্রায় বিশ্বাসী। সাপে কাটার প্রথম কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত তারা প্রথমে "ওঝা" ও কবিরাজদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। পরে, অবস্থার অবনতি হলে কোন উপায়ন্তর না পেয়ে হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন। ততক্ষণে রোগীর শরীরের বিষ ক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।

    গত রবিবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের স্লুইসগেট এলাকায় কাজ করা অবস্থায় রফিজল ইসলাম নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে একটি বিষধর গোখরা সাপে কামড় দেয়। পরে, বেলা ১০টার দিকে তাকে মনোয়ারা নামের স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি ঝাড়ফুঁক দিয়ে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

    এরপর বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে তার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকলে দুপুর দেড়টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তার শরীরে এন্টিভেনম ফুশ করে, উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু, রোগীর স্বজনরা ডাক্তারের কথায় কর্ণপাত না করে তাকে পুনরায় অপর এক "ওঝা"র কাছে নিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়।

    এছাড়াও, সোমবার সকাল ৮ টায় চর ফয়েজউদ্দিনে নিজ পুকুরে চাচার সঙ্গে মাছ ধরার সময় মিঞ্জু বেগম নামের ১৩ বছর বয়সী এক মেয়েকে বিষধর 'জলপনা' সাপে কামড় দেয়। পরে, স্বজনরা তাকে মফিজ নামের স্থানীয় এক "ওঝা"র কাছে নিয়ে যান। এরপর বিকেল ৪টায় তার শরীরে বিষের উপস্থিতি অনুভব করলে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। পরে, তাকে এন্টিভেনম দিয়ে শারীরিক অসুস্থতার পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়।

    স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সাপে কাটা রোগীদের ওঝা কবিরাজ মুখী থেকে ফিরিয়ে আনতে জনসচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালানোর বিকল্প নেই। ক্যাম্পেইন করে এই অঞ্চলের মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে।

    মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. কবির সোহেল সময়ের কন্ঠস্বরকে জানান, 'বর্ষা মৌসুম হওয়ায় নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সাপের আবাসস্থলে পানি ঢুকে যাওয়ায় সাপ গর্ত থেকে বাইরে চলে আসছে। যার জন্য সাপের উপদ্রব কিছুটা বেড়েছে।'

    তিনি বলেন, 'সাপে কামড় দিলে ভয় না পেয়ে স্থির থাকতে হবে। আক্রান্ত স্থানটিতে কোন জেলি বা বাঁধন দেওয়া যাবে না। এবং সাপে কাটলে ঝাড়ফুঁকের জন্য ওঝার কাছে না গিয়ে, দ্রুত হাসপাতালে চলে আসতে হবে। কারণ বিষধর সাপে কাটার প্রথম ১০০ মিনিট চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'

    তিনি আরও বলেন, 'এই অঞ্চলে গোখরার মতো বিষধর সাপে কাটা রোগী দেখা যাচ্ছে। এই সাপের বিষে নিউরোটক্সিক থাকে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ভয়ানক। তাই, ওঝার কাছে না গিয়ে দ্রুত হাসপাতালে আসতে হবে। এছাড়াও, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কাটা রোগীর জন্য পর্যাপ্ত এন্টিভেনম মজুদ আছে।'

    এআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…