রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের দিয়ারকাদিরপুর চরে পদ্মা নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফসলি জমি ও বসতভিটা ছাড়াও পদ্মার গহ্বরে বিলীন হচ্ছে বহু কবরস্থান, যা এলাকাবাসীর জন্য এক মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়।
সাত বছর আগে মৃত শেখ রজব আলী মুন্সীর স্ত্রী করিমুন্নেছা ও ছেলে আবদুল খালেককে যেখানেই দাফন করা হয়েছিল, আজ সেখানে নদীর ঢেউ। অনুরূপভাবে, সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন শিকদার, লক্ষী পাগলি সহ বহু মানুষ তাদের বাবা-মা কিংবা সন্তানদের কবর পদ্মায় হারিয়েছেন।
১০ বছর আগে বিষাক্ত পাউরুটি খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন ছেলে সুমন। তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন মা জহুরা আর বলছিলেন, 'আমার ছেলের এটাই স্মৃতি আর এই পদ্মা নদী আজ সে স্মৃতিটুকু খেয়ে নিলো।' অর্থাৎ সেই কবরটিও আজ নদীর গর্ভে বিলীন।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আলম বরেলন জানান, শুধু কবর নয়, অনেক পরিবার নদীভাঙনের কারণে ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে।
চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, 'বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছে কিছু মানুষ। আমাদের বিদ্যালয়টি পদ্মা গ্রাস করে নিয়েছে। ফলে বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টি বিগত বছরগুলোতেও ভাঙনের কারণে এ পর্যন্ত তিনবার স্থানান্তর করা হয়েছে।'
বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি আক্তার জানিয়েছেন, ভাঙনের প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা এবং পুনর্বাসনের বিষয়ে জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
এখন সময় এসেছে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়ার, যাতে শুধু অবকাঠামো নয়, মানুষের স্মৃতি ও আত্মিক বন্ধনও রক্ষা পায়।
এআই