রাস্তার পাশে একটি জরাজীর্ণ খুপড়ি ঘর, এটিকে ঠিক ঘর বলা যায় না। পলিথিন ও চটের বস্তায় মোড়ানো চারপাশ, মাথার উপরে নড়বড়ে টিনের চালা। ডিসেম্বরের এই সময়ে ঠান্ডা হাওয়া হু হু করে ঢুকে ঘরে। আর এই ‘ঘর’ নামক জায়গাতেই থাকেন ৩ জন।
বলছিলাম টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী জিগাতলা গ্রামের প্রতিবন্ধী হাতেম আলী ও তার স্ত্রী এবং তাদের ৮-১০ বছর বয়সী ছেলে সন্তানের কথা। বহুদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন তারা। তবে, অবশেষে তাদের দু:খের অবসান ঘটছে, আশার আলো হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুব হাসান।
জানা যায়, গেল সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাহবুব হাসান। এ সময় স্থানীয় একজন ব্যক্তি তাকে হাতেম আলীর বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে ইউএনও দেখেন- পাতলা পলিথিনে মোড়ানো ছোট্ট খুপড়ির ভেতরে সলতের ক্ষীণ আলো টিমটিম করছে, আর মাটিতে বিছানো পুরোনো চটের ওপর কাঁপতে কাঁপতে শুয়ে আছেন বৃদ্ধ দম্পতি।
তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনও তাদের চারটি কম্বল প্রদান করেন। একই সঙ্গে ভিডিওকলের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলীকে ঘটনাস্থলের করুণ চিত্র দেখিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
পরদিন মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) হাতেম আলীকে সরকারি ঢেউটিন ও চৌকি কেনার জন্য নগদ অর্থ দেওয়া হয়। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) তাদের জন্য সরকারি খাবার পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া টয়লেট নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং ঘর নির্মাণ সহায়তা বাবদ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ নিশ্চিত করেছে, পরবর্তী বরাদ্দ পেলেই তাদের বাড়িতে একটি টিউবওয়েল স্থাপন করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই একাকী সংগ্রাম করে আসছিলেন হাতেম আলী ও তার স্ত্রী। ইউএনও ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরই তাদের জীবনে স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, এক মেয়ে ও এক ছেলের জনক হাতেম আলী চোখে দেখতে পান না। পাশপাশি হাত–পা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারায় দৈনন্দিন কাজও করতে পারেন না তিনি। তার নিজ নামে কোন জায়গা নেই, থাকেন রাস্তার পাশে ছোট্ট জায়গায়। তার সঙ্গে একই কষ্টের জীবনযাপন করছেন স্ত্রী ও পুত্র সন্তান। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন অল্প বয়সেই, এই খুপড়ি ঘর থেকে। ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী একমাত্র পুত্র সন্তান বর্তমানে পেটের দায়ে কাজে যায়। ছেলেটি কাঠমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করে। হাতেম আলীদের জীবন সংগ্রাম পুরো গ্রামবাসীর হৃদয় স্পর্শ করে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুব হাসান সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘হাতেম আলীর মতো প্রতিবন্ধী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। হাতেম আলীর বিষয়টি এতোদিন আমাদের নজরে আসেনি। প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করবে যেন হাতেম আলীসহ উপজেলার প্রতিটি অসহায় ব্যক্তি সরকারি সুবিধা পায়। তাদের জীবন নিরাপদ ও সম্মানজনক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
ইখা