দীর্ঘ ২৭ বছর পর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার অচিন্তানগর গ্রামের গৃহবধূ মোছাঃ শিরিনা খাতুনের গর্ভে সন্তান আসে। এই সুখবর ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয়স্বজন নতুন অতিথির আগমনের অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকেন। তবে এর মধ্যেই ঘটে যায় হৃদয়বিদারক এক ঘটনা।
৮ ডিসেম্বর বিকালে গৃহবধূ শিরিনার সামান্য রক্তক্ষরণ হলে, অনেকদিনের সাধনার পর আসা গর্ভের সন্তান নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি একই গ্রামের কোয়াক ডাক্তার ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইসলামের পরামর্শে শিরিনা ঝিনাইদহ শহরের মডার্ন মোড়ে অবস্থিত সবুজ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানে প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ সবুজ তাকে ডাঃ ফয়জুন নেসা রুনুর কাছে দেখানোর পরামর্শ দেন।
শিরিনা ডাঃ ফয়জুন নেসা রুনুর কাছে গেলে তিনি কয়েকটি পরীক্ষা দেন। পরীক্ষা শেষে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ কিনে রাত সাড়ে নয়টার দিকে বাড়ি ফেরেন শিরিনা। রাতের খাবার খাওয়ার পর তিনি ওষুধ সেবন করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ওষুধ সেবনের প্রায় ১০ মিনিটের মধ্যেই তার গর্ভপাত হয়ে যায়।
রক্তপাত শুরু হলে স্বজনেরা দ্রুত তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরদিন সকালে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাউন্ডে এসে রোগীর মামীকে জানান, এটি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। চিকিৎসা ও দুই ব্যাগ রক্ত নেওয়ার পর সেদিনই তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
গৃহবধূর স্বামী বাবুল জানান, তার স্ত্রী এখনও খুব অসুস্থ। গ্রাম থেকে হাসপাতালে যাতায়াতে অসুবিধার কারণে তারা চিকিৎসকের কাছে বাড়িতে ওষুধ নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
ডাক্তারের বক্তব্য জানতে সবুজ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। রিসেপশনে থাকা একজন জানান, তিনি শহরের হামদহ এলাকায় নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখছেন। সেখানে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি বাসায় আছেন এবং তার চিকিৎসায় গর্ভপাত হয়নি বলে দাবি করেন।
বিএমডিসির ওয়েবসাইটে তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর এ–৯৩১৭৩ যাচাই করে দেখা যায়, ০১/০৭/২০২৫ তারিখে তিন বছরের জন্য তার রেজিস্ট্রেশন স্থগিত আছে। এ বিষয়ে তাকে ১০ ডিসেম্বর পুনরায় ফোনে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, উচ্চ আদালতের একটি আদেশ আছে যার ভিত্তিতে তিনি চিকিৎসা দিতে পারেন।
ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ কামরুজ্জামান জানান, পূর্বের সিভিল সার্জন তার নামে বিএমডিসিতে অভিযোগ পাঠিয়েছিলেন এবং তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়। তিনি ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন যে একটি হাইকোর্ট আদেশ রয়েছে, তবে অফিসিয়ালি কোনো কাগজ তিনি পাননি। বর্তমানে তিনি প্র্যাকটিস করলে তা নিয়মবহির্ভূত, এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তথ্য অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সবুজ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মোঃ সবুজ ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের একজন কার্ডিওগ্রাফার। অভিযোগ রয়েছে, দালালদের মাধ্যমে তিনি রোগী এনে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাসেবা প্রদান করান। একজন রেজিস্ট্রেশন স্থগিত চিকিৎসককে প্রতিষ্ঠানটিতে বসানো নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সম্প্রতি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে সিজারিয়ান অপারেশন করেছেন এবং সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানেন। তাই এ নিয়ে তার কোনো সমস্যা দেখেন না।
এনআই