এইমাত্র
  • ‘জিততেই হবে বন্ধু’, তামিমের জন্য যুবরাজ-মালিঙ্গা-তিওয়ারির প্রার্থনা
  • সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করার চেষ্টা করা হচ্ছে: তারেক রহমান
  • ঈদের আগে ছুটির ২ দিনেও খোলা থাকবে ব্যাংক
  • কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি আফজাল মেহেরপুরে গ্রেফতার
  • বান্দরবানে ঋণের চাপে গলায় ফাঁস দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের আত্মহত্যা
  • জরুরি অবস্থা জারির প্রসঙ্গে যা বললেন স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিব
  • হার্ট অ্যাটাকের ৬টি লক্ষণ এবং যা করবেন
  • চকরিয়ায় পুলিশের অভিযানে ৩ ডাকাত আটক
  • কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি আফজাল মেহেরপুরে গ্রেফতার
  • আমরা দেশপ্রেমিক সেনাদের ভালোবাসি: হাসনাত
  • আজ মঙ্গলবার, ১১ চৈত্র, ১৪৩১ | ২৫ মার্চ, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    সমুদ্রে ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বিপাকে আড়তদাররা

    মো. সাইফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ভোলা প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৪:৫৬ পিএম
    মো. সাইফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ভোলা প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৪:৫৬ পিএম

    সমুদ্রে ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বিপাকে আড়তদাররা

    মো. সাইফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ভোলা প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৪:৫৬ পিএম

    লাভের আশায় দেড়শ কোটি টাকা সমুদ্রে বিনিয়োগ করছেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ মৎস্য ঘাটের ৯৮ জন আড়তদার। তারা এ বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফাতো দূরের কথা, দশ শতাংশ চালান তুলতে পারেনি চলতি মৌসুমে। এরইমধ্যে সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় পুরোদমে হাত গুটিয়ে বসে আছেন আড়তদার ও জেলেরা। তবে নির্দিষ্ট এসব আড়তদারদের বিনিয়োগ ছাড়াও পরোক্ষভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় দুইশো কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ রয়েছে এই খাতে।

    সামরাজ মৎস্যঘাটে নিজ আড়তে বসে এসব কথা জানিয়েছেন সামরাজ মৎস্যঘাট জেলে সমবায় সমিতি লিঃ এর সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। তিনি বলেন, 'অধিক ঝুঁকি জেনেও মাছের ব্যবসা করছি। দীর্ঘ বছর ধরে এ ব্যবসার সাথে আমি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। চরফ্যাশন উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তর মৎস্যঘাট হলো সামরাজ ঘাট। ইলিশের ভরা মৌসুমে এ ঘাটে দৈনিক ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। এ বছরের মত খারাপ অবস্থা গত ৯-১০ বছরেও ঘটেনি। নদী ও সাগরে মাছ নাই বললেই চলে। মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা বহালের আগের দিনও তেলের খরচ উঠাতে পারেনি জেলেরা। আড়তদারদের কি দিবে? নিষেধাজ্ঞা শেষে যে, জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়বে তা আল্লাহ ভালো জানে। এই মৎস্যঘাটে ৯৮ জন মৎস্য আড়তদার রয়েছে। এসব আড়তদাররা প্রায় দেড়শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। অথচ দশ শতাংশ চালান তুলতে পারেনি।'

    ওইদিন বেড়িবাঁধের ঢালে ইলিশ জাল সেলাইয়ের কাজ করছিলেন সামরাজ মৎস্যঘাটের দাদনভুক্ত কয়েকজন জেলে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা জাল সেলাই ও ট্রলার মেরামত করেন। কেউবা কৃষিকাজ করেন। জাল সেলায়ের কাজ সেরে জেলে নুরনবী (৩২) বলেন, 'নিষেধাজ্ঞার ১০ দিন আগে ২১ জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে সমুদ্রে গিয়েছিলাম। সামান্য পরিমান মাছ পেয়েছিলাম, তাতে বাজার খরচও তুলতে পারিনাই। এখনতো সংসার চালানোর মতো সামর্থ্য নাই। সমুদ্রে আগের মতো মাছ নাই। দেনা করে পরিবারের জন্য চাল-ডাল কিনতে হয়েছে। ধার-কর্জ করে কতোদিন চলতে পারবো?' নুরনবীর মতো একই প্রসঙ্গ তুলে কথা বলেছেন সেখানে থাকা রফিক মাঝি (৪২), ইদ্রিস (৩৭), আব্বাস উদ্দিন (২৩) ও রত্তন মাঝি (৪৪)।

    সামরাজ মৎস্যঘাটের আড়তদার হেলাল উদ্দিন টিপু বলেন, 'নদী ও সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলেদের দুর্বিষহ জীবন পার করতে হয়। বিশেষ করে সংসারের খোরাক যোগাতে হিমশিম খেতে হয় জেলেদের। এমনকি বাড়তি সুদের ঋণে জড়িয়ে যান তারা।'

    চরফ্যাশন উপজেলার সর্ববৃহৎ সামরাজ মৎস্যঘাটের মতো এ অঞ্চলের অন্য ঘাটগুলোতে শুনশান নীরবতা দেখা গেছে। বিশেষ করে বেতুয়া, নতুন স্লুইসগেট, পাঁচ কপাট, খেজুরগাছিয়া, ঢালচর, বকসীরঘাট, ঘোষেরহাট, চরকচ্ছপিয়া ও কুকরি মুকরি। জেলেরা জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত মৎস্যঘাটগুলোতে কোলাহল থাকেনা। শুধুমাত্র নোঙর করা ট্রলার পাহারা দেওয়ার জন্য জেলেরা থাকে।

    চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার জেলে রয়েছে। উপজেলার নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৩৭৫ জন। অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার। এসব জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ শিকার করে।

    চরফ্যাশন উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, 'এ বছর নদী ও সমুদ্রে মাছ খুবই কম। জেলেদের উপর নির্ভর করে আড়তদাররা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। আড়তদারদের এ বিনিয়োগের মুনাফা তুলতেই কয়েকবছর লেগে যাবে। মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় ইতোমধ্যে অনেক জেলে বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য বঙ্গোপসাগরে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। প্রতিবছর বাংলাদেশের জলসীমায় এই নিষেধাজ্ঞা থাকে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন। আর ভারতের জলসীমায় তা থাকে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন (৬১ দিন)। সরকার মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকবে বঙ্গোপসাগরের ভারতের জলসীমায়ও। এ ক্ষেত্রে ভারতের নিষেধাজ্ঞো বলবৎ থাকার দুদিন আগে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাবে।'

    এইচএ

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…