এইমাত্র
  • ভারতবিরোধী পোস্ট শেয়ার করায় বিএনপি নেতার ভিসা বাতিল !
  • নিষ্ক্রিয় অভিনয় শিল্পী সংঘের বর্তমান কমিটি, দায়িত্বে অন্তর্বর্তী প্রধান
  • বিদেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ৮ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
  • এইচএসসির ফল প্রকাশের সম্ভাব্য সময় জানা গেল
  • ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, যুবলীগের সাদ্দাম গ্রেপ্তার
  • আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে ৫ ও আহতদের সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত’
  • হাসিনার সহযোগীদের সম্পদ তদন্তে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ বাংলাদেশের
  • হজের খরচ কমানো নিয়ে যা বললেন ধর্ম উপদেষ্টা
  • কেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো?
  • দাতা সংস্থাগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘হাত খুলে’ টাকা দিতে চাচ্ছে
  • আজ বৃহস্পতিবার, ৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
    শিল্প ও সাহিত্য

    ছোট গল্প

    স্বপ্ন

    সময়ের কণ্ঠস্বর ডেস্ক প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম
    সময়ের কণ্ঠস্বর ডেস্ক প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম

    স্বপ্ন

    সময়ের কণ্ঠস্বর ডেস্ক প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম

    মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যায় অরজিতের। সে স্বপ্ন দেখছিল, বিশাল দেহাকৃতি এক মানব শম্ভুর। যার অবয়ব জুড়ে ছোট ছোট মানুষের অবাধ বিচরণ। কেউ বুক পকেটে, কেউ কাঁধে, কেউ নাকের ডগায়, কেউবা আবার কোমরে-পাঁজরে।যার সমস্ত শরীর জুড়ে ছোট ছোট মানুষ বসবাস করছে।

    অরজিত একটু আগেই তার দেখা স্বপ্নের স্মৃতিচারণ করতে চেষ্টা করে। কিছু স্পষ্ট আবার কিছু অস্পষ্টতা তাকে ঘিরে বেশ ভাবিয়ে তোলে। এমন স্বপ্ন মানুষ দেখে! দেখে তো, না দেখলে অরজিত এমন স্বপ্ন দেখলো কেনো?

    দৈত্যাকৃতি শম্ভুর শরীরে, বসবাসরত পিচ্চি-পিচ্চি মানুষের অবাধ বিচরণ, চোখের দৃষ্টি, দিক বিদিক ঘুরছে। টহল দিচ্ছে, তাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে সপ্তাচার্য কিছু ঘটছে। মাঝে মধ্যে কানের কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে কী যেন বলছে, তা অরজিত বুঝতে পারে না। জোনাথন সুইফটের গালিভার ট্রাভেলসের কথা মনে পড়ে যায়। লিলিপুটের চরিত্রগুলো তাকে ভাবিয়ে তোলে। অবিকল সে গল্পের দায়ভার অরজিতের ঘাড়ে চেপে বসে। সে আন্দাজ করে, পিচ্চি পিচ্চি মানুষের কান কথায়; শম্ভু তার দৈনন্দিন কার্যাদি সম্পাদন করে।

    অরজিত ঘুমিয়ে যায়। স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। পাহাড়ের চূড়ায় সে বসে আছে। সামনের উচু পাহাড় চূয়ে ঝরনা ঝড়ছে। চমৎকার দৃশ্য। পাথরের বুকে ঝরনার আছড়ে পড়ার শব্দ মুহূর্তে মুহুর্তে অরজিত পুলকিত হয়। নয়নাভিরাম সে দৃশ্যের মূর্ছনায় নিজেকে বিমোহিত করে তোলে।

    জোসনার আলো এসে পড়ে অরজিতের গায়। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। অপলক চেয়ে আছে ঝরনার দিকে। এক সময় মনে হয় কেউ একজন পাথরে বসে স্নান করছে। বিচলিত হয়ে আবিস্কার করে। সত্যিই তো; এক মানবী। অপরুপ সৌন্দর্যের রঙ মেখে সে জোসনা জলে স্নান করছে। অরজিত চুপিসারে একটু এগিয়ে যায়। ঝোপের আড়াল থেকে অবলোকন করে।

    এমন সুন্দর দৃশ্য যেন অরজিতের পৃথিবীতে আর একটিও নেই। কখনও সে কল্পনাও করতে পারেনি; মানুষ এতো সুন্দর হয়! অরজিত আবিষ্কার করে তার চোখে জোসনার আলো যেন এই মুহূর্তে মৃত। সেখানে ঝরনার জলে যে সরবর স্রোতসিনি জলের ধারা তৈরি হয়েছে সে সরবর জল-মানবীর রুপে আলোকিত। জলের কলকলানিতে রুপালি ঢেউ। লতা-গুল্মে জলের ফোটা পড়ে চিকিচিক করছে; মন ভরে দৃশ্যগুলো অরজিত দেখে যায়। শান্তির শীতল বাতাস তার গায়ে লাগে, ভালো লাগার পেখমগুলো মেঘের গর্জনে ডানা মেলতে থাকে।

    নির্ভয়ে অবয়বের ভাজ খুলে রুপসি স্নান করছে। ভিখুর চোখ মেলে অরজিত ঝোপের আড়াল থেকে স্নান করা দেখে যায়। নয়নাভিরাম দৃশ্য দুচোখের পাতা মেলে উপভোগ করার মতো আনন্দ, সুখ পৃথিবীতে দ্বিতীয় নেই। ধিরে ধিরে অরজিত জোসনা স্নানে এগিয়ে গিয়ে থেমে যায়। এতোক্ষণ যেটাকে পাথর ভেবে নিয়েছিল সেটা আসলে পাথর না; সেই বিশাল দেহাকৃতি, দৈত্যরুপি শম্ভু। আতংকে বিছানায় বসে পড়ে অরজিত।

    কী দেখলাম! এমন স্বপ্ন দেখলাম কেন? আবারও প্রশ্নের ঝড় তাকে খুব ভাবিয়ে তোলে। এ রাতে আর ঘুমানো যায় না। এমন অদ্ভূত স্বপ্ন তার ঘুমের ঘোরে প্রবেশ করে কেন? ভাবতে পারে না। স্বপ্নের ভেতর সেই ভয়ঙ্কর মানুষটির মাথায় বসে অপরুপ সুন্দরী নারী জোসনা জলে স্নান করছে। বড়ই আশ্চর্য হয় অরজিত।

    ধারাবাহিক স্বপ্নের সে রাতে আর ঘুম আসে না অরজিতের। বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। রাতের পৃথিবী এ নগরীতে স্থবির হয়ে আছে। চোখের সীমানায় একটি কাক পক্ষিও নেই জেগে থাকার; সোনার কাঠি রুপার কাঠি দিয়ে রাজকন্যাকে যেন ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। এ এক ঘুমন্ত শহর।

    দিনের আলোয় মানুষের কোলাহল। রঙ বেরঙের মানুষের বসবাস অথচ এই রাতের গভিরে একটি মানুষও নেই জেগে থাকার। মাঝে মধ্যে নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ যেন নিজের কানটাকে ভারি করে তুলছে।

    বেলকুনিতে পায়চারি করে কোন লাভ হয় না তার। অঘুমে শরীরটা বাতাসে দোলে; কৌশলে নিজেকে গুটিয়ে; হাই তোলে। রাত বাড়ে। ঝিঁঝিঁদের ডাক নেই, নগরের কুকুরগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে অথচ অরজিত! অরজিত ঘুমাতে পারে না। অবাঞ্চিত স্বপ্নের অনুপ্রবেশের ধারাবাহিকতায় সে অস্থির হয়ে ওঠে। পায়চারি করে বেলকুনিতে। নাহ, ঘুম আসে না। আধো আলো-অন্ধকারে বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দেয়।

    অরজিত অদূরে পদ্মাসনে বসে দেখছে। দেখছে, শম্ভু হাত জোড় করে, হাটু গেরে বসে প্রার্থনা করছে। শম্ভুর এমন দৃশ্যে অরজিত আশ্চর্য হয় এই ভেবে যে, শম্ভু এ নগর পিতা। তার হুকুম ছাড়া গাছের কাক ডাল থেকে নড়ে না, তাকে দেখে শিশুর কান্না স্তব্ধ হয়ে যায়। সেই শম্ভু হাত জোর করে বসে আছে!

    হঠাৎ করে কিছু অমিয় বাণী ভেসে আসে। শব্দ চয়ন, বাচন ভঙ্গি অরজিতের ভাল লাগে। উৎসুক হয়ে খুঁজে বেড়ায়; সে বাণী কোনদিক থেকে ভেসে আসছে। অল্পক্ষন পরে আবিস্কার হয়, বেদীতে বসে সেই মানবী। যাকে স্নানরতাবস্থায় শম্ভুর মাথায় দেখেছিল। ভাললাগার সব ফুল খুশিতে নেচে ওঠে। সুবাস বিলিয়ে দেয়। দুচোখ বন্ধ করে অরজিত সুবাতাস গ্রহন করে। আশ্চার্য! সেই মায়াবী এখানে!

    অরজিত এগিয়ে যায়। অবুঝ বালকের মতো হাটু গেরে বসে পড়ে। দুহাত নত করে প্রার্থনা করে। তার প্রার্থনায় তাবৎ উপাসনালয় শান্ত হয়ে যায়। কিছুক্ষণের জন্য বরফ ঢাকা গালিচায় জড়িয়ে নেয় উপাসনালয়ের সভাসদগণ। ঈশ্বর বেচা-কেনার এই মঞ্চে অরজিত বড় নগন্য, বড়ই বেমানান তবু নির্দিধায় প্রার্থনা করে- মাগো, কৃপা করো।

    শান্ত শিতল যাদুর কন্ঠ ভেসে আসে- ওঠো অরজিত। তুমি এখানে, কী চাই তোমার?

    -যুগে যুগে তুমি বেদীতে বসে রাজত্ব করো পৃথিবীর, আর আমি শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। শতবর্ষ দাসত্ব আর শোষণের দায় ঠেলে; এখনো মানুষ শোষণের শিকার, রুখে দাঁড়াবার শক্তি নেই; দুর্বল চিত্তে শক্তির যোগান চাইতে, অবহেলিত মানুষের প্রতিনিধি হয়ে তোমার কাছে এসেছি। আমার নগরীতে শোকের মাতম। অভাব-অনটন, প্রতিটি ঘরে হাহাকার, দৈন্যতায় ঘিরে আছে পুরো সমাজ। তোমার শম্ভুর পদভারে পিষ্ট হচ্ছে আমার গোলাপ বাগান, শাপলা বিল, জুই-চামেলির মনোরম দৃশ্য। মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে শাহবাগ, পরীবাগ, পল্টন, শহিদ মিনার। পানির বদলে বোতলজাত হচ্ছে রক্ত। লাল-লাল রক্ত, চাপ-চাপ রক্ত, রক্ত বন্যায় আমরা ভেসে চলছি; কৃপা করো মা, কৃপা করো।

    -ওঠো অরজিত। তুমি জানো মানুষ মরণশিল। রক্তে মাংসে গড়া শম্ভু একজন মানুষ। তার মৃত্যু হবে?

    -প্রাণের মৃত্যু অবধারিত কিন্তু ততোদিনে আমার নগরীর তাজাপ্রাণ, কোমল প্রাণ, সদ্যফোটা প্রাণ, নীরবে স্থির হয়ে যাবে।

    -কেন?

    -শম্ভুর শরীর জুড়ে কিছু লিলিপুটের বসবাস। নাকের ডগায়, কানের কাছে, কাঁধের উপর, বুক পকেটে, পায়ের তলায় যে যেখানে স্থান পেয়েছে; স্থান নিয়েছে। তাদের কথায় শম্ভুর হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। প্রলোভনে আসক্ত হয়েছে। তাদের প্রলোভনে, স্বার্থ রক্ষায় প্রতিদিন শত শত জনগণ শম্ভুর পায়ের তলায় পিষ্ঠ হচ্ছে। শম্ভু ফিরেও তাকায় না। স্বার্থ রক্ষায় হাজারো প্রাণের বলি হচ্ছে প্রতিদিন। এ শোষণের হাত থেকে রক্ষা করো মা।

    -ধ্বংস অনিবার্য। জেগে ওঠে অরজিত; জেগে ওঠো কোমল প্রাণে!

    সে এতোক্ষণ স্বপ্নের ঘোরে আক্রান্ত ছিল। কার ধ্বংস অনিবার্য! সীমাহীন বালিরেখায় দাগ টেনে যায় অরজিত। স্বপ্নের ঘোর কাটে না। কে ওই মানবী? আমাকে চেনে! জনম জনম ধরে তার সাথে আমার সম্পর্ক। খুব পরিচিত মনে হয়। তার স্পর্শ অরজিত শরীরের কোষে কোষে অনুভব করে। রোমকূপের প্রতিটি বিন্দুতে তারই পরশ তবে কেন তাকে চিনতে পারলো না। তাহলে কী স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছে অরজিতের?

    অরজিত স্মরণ করার চেষ্টা করে, না স্মৃতির সীমানা যতোদূর যায় তার মধ্যে এই মানবীর কোন দৃশ্য নেই যে, স্মৃতির পট থেকে তুলে নিয়ে আসবে।

    পূর্বপুরুষের স্পর্শ; হবে হয়তো। সে অনুভূতি অরজিতের মনে পড়ে না। পিতামহের চেহেরাটুকুও আবছা হয়ে আছে। জন্মের পর মা-বাবার আদর, স্পর্শ কতোটুকু পেয়েছে তা মনে পড়ে না। জীবনের বেশির ভাগ সময়ই তো পথে পথে কাটিয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। মানবের ধর্মে মশগুল থেকেছে।

    তাহলে এমন নগরী, পিচ্চি পিচ্চি মানুষ, দৈত্যাকার শম্ভু এসব কিসের প্রতিচ্ছবি? কিংবা সেই স্বপ্নের মায়াবী নারী?

    -আজ সন্ধ্যায় শম্ভুর মৃত্যু!

    অদৃশ্য বাণী শুনে অরজিত চমকে ওঠে। এদিক ওদিকে তাকায়। সে ব্যতিত দ্বিতীয় কোন মানবের অস্তিত্ব নেই। তাহলে কে বলল? সময়ের সাথে অদৃশ্যও কথা বলে।

    অরজিত অপেক্ষা করে একটি সন্ধ্যা রাতের। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে শম্ভুর মৃত্যু ঘটবে। সে ভ্যানিস হয়ে যাবে, তার অস্তিত্ব বিলীন হবে; সে হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে যাবে এ পৃথিবী থেকে। তখন তার শরীরে ঝুলে থাকা সেইসব মানুষেরা আছড়ে পড়বে সমতলে। আহত হবে, পঙ্গু হবে; বেঁচে থাকার জন্য করুণা ভিক্ষে করবে। দৃশ্যটি দেখার মতোন। অরজিতের ভেতর থেকে এক ধরণের ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করে।

    তার ঘুমের রেশ কেটে যায়; আড়মোড়া ভাঙ্গে। ঘুমের ক্লান্তি দূর হয়। ভোরের দৃশ্য উপভোগ করে। দেখতে দেখতে সুন্দর একটি পৃথিবী ওর সামনে জেগে ওঠে। রাতের আধার কেটে গেলে সূর্যদয় হয়। এমন সুন্দর একটি সকাল তার জন্য অপেক্ষায় ছিল সে ভাবতেও পারেনি। গায়ের চাদর ফেলে হাজারো কোমল প্রাণের ভিড়ে সে মিশে যায়।

    লেখক: আল-আমিন খান সাগর, নাট্যকার

    ট্যাগ :

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…