বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানিকারী ভারতীয় কোম্পানি আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ সরকার। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপারে আদানি গ্রুপের সঙ্গে কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয় ঢাকার। পরবর্তীতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় এই চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আদানির একটি বিদ্যুৎ প্ল্যান্টকে কর অব্যাহতিসহ অন্যান্য সুবিধা দেয় ভারত। তবে বিষয়টি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করে আদানি গ্রুপ। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সরকারের ছয়জন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,২০১৭ সালে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের কয়লা উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই এই চুক্তি করায় বাংলাদেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিবেচনা করে আদানি গ্রুপের সঙ্গে নতুন করে এই চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে চাইছে ঢাকা।
তবে আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র এ ব্যাপারে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তারা চুক্তির শর্ত পালন করে আসছে এবং ঢাকা এই চুক্তি নতুন করে পর্যালোচনা করবে এমন কোনো তথ্যও তাদের কাছে নেই। তবে আদানি পাওয়ারের ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে পাওয়া কর সুবিধা ও অন্যান্য বিষয়ে ঢাকার আপত্তির বিষয় সংক্রান্ত প্রশ্নের কোনো উত্তর আদানি পাওয়ার দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আমদানি করা কয়লায় পরিচালিত আদানি গ্রুপের গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়। এই চুক্তি ভারতের পররাষ্ট্র নীতির জন্য সহায়ক বিবেচনায় দিল্লি ২০১৯ সালে এই পাওয়ার প্ল্যান্টকে স্পেশাল ইকোনোমিক জোন হিসেবে ঘোষণা করে। পাশাপাশি এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আয়কর মওকুফসহ অন্যান্য কর সুবিধা পেয়ে থাকে।
আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটির এই কর সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হতো আদানি পাওয়ারকে। তবে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ও ২২ অক্টোবর আদানি পাওয়ারকে বিপিডিবির দেয়া চিঠি অনুযায়ী, আদানি পাওয়ার এই শর্ত প্রতিপালন করতে ব্যর্থ হয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, এই চুক্তি এবং চুক্তি লংঘনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের আদানি পাওয়ারকে পাঠানো চিঠি জনসম্মুখে উন্মুক্ত না হলেও যাচাই করে দেখেছে রয়টার্স কর্তৃপক্ষ। তবে এই চিঠির ব্যাপারে আদানি পাওয়ারের পক্ষে কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন বিপিডিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা।
বিপিডিবি জানিয়েছে, এই চুক্তির কারণে আদানি পাওয়ার যে করসুবিধা পেয়েছে তার হিস্যা অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানিতে ৩৫ সেন্ট করে সাশ্রয় করতে পারতো।
রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশে ৮১৬ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করেছে। ফলে বাংলাদেশের সাশ্রয় হতো প্রায় ২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ভবিষ্যতের আলোচনায় মূল আলোচ্যসূচিতে এই বিষয়টি থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খান।
এসএফ